ভূমিকা:

ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার সিস্টেমে ভোল্টেজ রেগুলেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বিশেষ করে ট্রান্সফর্মার ডিজাইন এবং এর দক্ষতা পর্যালোচনার ক্ষেত্রে ভোল্টেজ রেগুলেশন অন্যতম বিবেচ্য বিষয়। পরিবর্তনশীল লোডে ট্রান্সফর্মারের সেকেন্ডারি প্রান্তের ভোল্টেজ স্থির রাখার ক্ষমতাকেই ভোল্টেজ রেগুলেশন এর মাধ্যমে পরিমাপ করা হয়।

এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা ভোল্টেজ রেগুলেশন কি, ভোল্টেজ রেগুলেশন এর ফর্মুলা, কারণ, ভোল্টেজ রেগুলেশন এর ধরন এবং ভোল্টেজ রেগুলেশন দুর করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

ভোল্টেজ রেগুলেশন:

নির্দিষ্ট নো লোড ভোল্টেজ এর জন্য পরিবর্তনশীল লোডে ফুল লোড ভোল্টেজ শতকরা কি পরিমাণ পরিবর্তন হয় তাকে ভোল্টেজ রেগুলেশন রেগুলেশন বলে।

ভোল্টেজ রেগুলেশন এর মাধ্যমে নো লোড ভোল্টেজ এবং ফুল লোড ভোল্টেজ এর পার্থক্যকে পরিমাপ করা হয় এবং একে ফুল লোড ভোল্টেজ এর শতকরা হারে প্রকাশ করা হয়।

Transformer Equivalent Circuit
Transformer Equivalent Circuit

ভোল্টেজ রেগুলেশন এর ফর্মুলা:

ভোল্টেজ রেগুলেশন (%) = \frac {নো\; লোড\; ভোল্টেজ-ফুল\; লোড\; ভোল্টেজ}{ফুল\; লোড\; ভোল্টেজ}×১০০%

ভোল্টেজ রেগুলেশন (%) = \frac {V_{no-load}-V_{full-load}}{V_{full-load}}×১০০%

ভোল্টেজ রেগুলেশনের প্রকারভেদ:

১. ধনাত্মক ভোল্টেজ রেগুলেশন: যখন ফুল লোড ভোল্টেজ এর মান নো লোড ভোল্টেজ থেকে কম হয় তখন ধনাত্মক ভোল্টেজ রেগুলেশন ঘটে। ইন্ডাকটিভ বা রেজিস্টিভ লোডের ক্ষেত্রে ধনাত্মক ভোল্টেজ রেগুলেশন তৈরি হয়।

২. ঋনাত্মক ভোল্টেজে রেগুলেশন: যখন ফুল লোড ভোল্টেজ এর মান নো লোড ভোল্টেজ থেকে বেশি হয় তখন ঋণাত্মক ভোল্টেজ রেগুলেশন ঘটে। ক্যাপাসিটিভ লোডের ক্ষেত্রে ধনাত্মক ভোল্টেজ রেগুলেশন তৈরি হয়।

ভোল্টেজ রেগুলেশন এর তাৎপর্য:

১. লোডের দক্ষতা নির্ণয়: ভোল্টেজ রেগুলেশন কম হলে লোডে সব সময় নির্ধারিত সীমার মধ্যে ভোল্টেজ সরবরাহ করা যাবে ফলে লোড দক্ষ ভাবে পরিচালিত হবে।

২. নির্ভরযোগ্যতা: সেনসিটিভ যন্ত্রপাতিতে বিদুৎ সরবরাহের জন্য নির্ভরযোগ্য উৎস প্রয়োজন যার ভোল্টেজ রেগুলেশন অবশ্যই কম হবে।

৩. নিরাপত্তা ও সুরক্ষা: ওভার ভোল্টেজ এবং আন্ডার ভোল্টেজ থেকে সুরক্ষার ক্ষেত্রে ভোল্টেজ রেগুলেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ভোল্টেজ রেগুলেশনের প্রভাবকসমূহ:

১. লোডের পাওয়ার ফ্যাক্টর: ভোল্টেজ রেগুলেশনে বিভিন্ন ধরনের পাওয়ার ফ্যাক্টর আলাদা আলাদা ভাবে প্রভাব বিস্তার করে, যেমন:

  • ল্যাগিং পাওয়ার ফ্যাক্টর: পাওয়ার ফ্যাক্টর এর মান ল্যাগিং হলে ভোল্টেজ ড্রপের মান বৃদ্ধি পায়। ফলে ভোল্টেজ রেগুলেশনও বৃদ্ধি পায়।
  • লিডিং পাওয়ার ফ্যাক্টর: পাওয়ার ফ্যাক্টর এর লিডিং হলে লাইনে ভোল্টেজ ড্রপ হওয়ার পরিবর্তে ভোল্টেজের মান বৃদ্ধি পায় ফলে ঋণাত্মক ভোল্টেজ রেগুলেশন ঘটে।
  • ইউনিটি পাওয়ার ফ্যাক্টর: ইউনিটি পাওয়ার ফ্যাক্টর এর ক্ষেত্রে ভোল্টেজ ড্রপের মান সর্বনিম্ন হয় ফলে ভোল্টেজ রেগুলেশনও সর্বনিম্ন হয়।

২. ট্রান্সফরমারের ইম্পিডেন্স: ট্রান্সফরমারের সমতুল্য ইম্পিডেন্স ভোল্টেজ রেগুলেশনকে সরাসরি প্রভাবিত করে। ইম্পিডেন্স যত বেশি হবে ভোল্টেজ রেগুলেশনও তত বৃদ্ধি পাবে।

৩. লোড কারেন্ট: লোড কারেন্টের মান বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে ভোল্টেজ ড্রপ বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোল্টেজ রেগুলেশনের মানও বৃদ্ধি পায়।

ভোল্টেজ রেগুলেশন কমানোর উপায়:

১. নিম্ন ইম্পিড্যান্স বিশিষ্ট ট্রান্সফর্মারের ব্যবহার: ট্রান্সফর্মারের ইম্পিড্যান্স কম হলে ভোল্টেজ ড্রপ কম হবে ফলে ভোল্টেজ রেগুলেশন মানও কম হবে।

২. লোডের পাওয়ার ফ্যাক্টর বৃদ্ধি: লোডের পাওয়ার ফ্যাক্টর বৃদ্ধি পেলে ভোল্টেজ ড্রপ হ্রাস পায় এবং ভোল্টেজ রেগুলেশনও হ্রাস পায়। লোডে ক্যাপাসিটর ব্যাংক বা সিনক্রনাস কন্ডেনসার ব্যবহার করে লোডের পাওয়ার ফ্যাক্টর বৃদ্ধি করা যায়।

৩. ট্রান্সফরমারে ট্যাপ চেঞ্জার এর ব্যবহার: ট্যাপ চেঞ্জার ব্যবহার করে লোড পরিবর্তনের সাথে সাথে ট্রান্সফরমারের সেকেন্ডারি প্রান্তের ভোল্টেজ পরিবর্তন করা যায়। ফলে ভোল্টেজ রেগুলেশন নিয়ন্ত্রণে থাকে।

৪. ভোল্টেজে রেগুলেটর ব্যবহার: ভোল্টেজ রেগুলেটর ব্যবহার করে লোডে সব সময় নির্দিষ্ট ভোল্টেজ সরবরাহ করা সম্ভব হয়। ফলে ভোল্টেজ রেগুলেশন নিয়ন্ত্রণে থাকে।

৫. ভালো মানের পরিবাহীর ব্যবহার: কম রেজিস্ট্যান্স যুক্ত তার ব্যবহার করলে ভোল্টেজ ড্রপ কম হবে এবং ভোল্টেজ রেগুলেশন হ্রাস পাবে।

উপসংহার:

বৈদ্যুতিক সিস্টেমে দক্ষ, নির্ভরযোগ্য এবং নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রে ভোল্টেজ রেগুলেশন এর মান কম থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উপরে উল্লেখিত কৌশন এবং উপায় সমূহ অবলম্বন করে সহজেই ভোল্টেজ রেগুলেশন এর মান হ্রাস করা সম্ভব।

Leave a Comment