ফেরান্টি ইফেক্ট কি?

বৈদ্যুতিক সিস্টেমে বিশেষ করে দীর্ঘ সঞ্চালন লাইনের ক্ষেত্রে প্রেরণ প্রান্তের তুলনায় গ্রহণ প্রান্তে ভোল্টেজের মান বেশি হওয়ার ঘটনাকে ফেরান্টি ইফেক্ট বলে। সাধারণত শুন্য লোড বা হালকা লোড যুক্ত সঞ্চালন লাইনে ফেরান্টি ঘটে থাকে।

ফেরান্টি ইফেক্ট এর কারণ:
১. সঞ্চালন লাইনের ক্যাপ্যাসিট্যান্স: সঞ্চালন লাইনের নিজস্ব ক্যাপ্যাসিট্যান্স এর জন্য লাইন চার্জিত হয় এবং প্রেরণ প্রান্তের তুলনায় গ্রহণ প্রান্তের ভোল্টেজ বৃদ্ধি পায়।
২. ক্যাপাসিটিভ লোড: গ্রাহক প্রান্তে যুক্ত লোড ক্যাপাসিটিভ হলে গ্রহন প্রান্তের ভোল্টেজ বৃদ্ধি পায়।
৩. শূন্য/হালকা লোড: শূন্য/হালকা লোডের ক্ষেত্রে লাইনের সঞ্চালন লাইনের ক্যাপ্যাসিট্যান্স এর কারণে লাইনটি ক্যাপাসিটিভ সিস্টেমে ন্যায় আচরণ করে এবং উচ্চ চার্জিং কারেন্ট প্রবাহিত হয়। ফলে গ্রহণ প্রান্তের ভোল্টেজ বৃদ্ধি পায়।

মূল কথা,

  • সঞ্চালন লাইনের অভ্যন্তরীণ ক্যাপ্যাসিট্যান্স এর কারণে লাইনে চার্জিং কারেন্ট প্রবাহিত হয়।
  • লাইনে চার্জিং কারেন্ট প্রবাহের কারণে গ্রহণ প্রান্তের ভোল্টেজ বৃদ্ধি পায়।
  • শূন্য লোড বা হালকা লোডে লাইনে চার্জিং কারেন্ট এর পরিমাণ তুলনামুলক বেশি হওয়ার ফেরান্টি ইফেক্ট বেশি ঘটে।

বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্রে পাথর ব্যবহার হয় কেনো? বিস্তারিত

ভূমিকা:

সাবস্টেশন ডিজাইন এবং অপারেশনে পাথর একটি গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা পালন করে। এটা শুধু একটি কনস্ট্রাকশন মেটেরিয়াল হিসেবেই নয় বরং সাবস্টেশন পরিচালনা এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু উদ্দেশ্য সাধনে ব্যবহার হয়ে থাকে। নিচে বৈদ্যুতিক সাবস্টেশনে প্রধান কারণগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

Gravel used in Electrical Substation
Gravel used in Electrical Substation

১. স্টেপ পোটেনশিয়াল এবং টাচ পোটেনশিয়াল থেকে সুরক্ষা: বৈদ্যুতিক সিস্টেমে ফল্টের কারণে গ্রাউন্ড বিদ্যুতায়িত হয়ে গেলে স্টেপ পোটেনশিয়াল এবং টাচ পটেনশিয়াল তৈরি হয় এবং ফল্ট স্থানে অবস্থানকারী ব্যক্তিবর্গ বিদ্যুতপৃষ্ট হয়ে গুরুতর দুর্ঘটনা ঘটে। উপকেন্দ্রের ভুমিতে পাথর ব্যবহার করা হলে পাথরের উচ্চ বৈদ্যুতিক রোধ গ্রাউন্ড এর মধ্য প্রবাহিত ফল্ট কারেন্ট সীমিত রাখে। ফলে স্টেপ পোটেনশিয়াল এবং টাচ পোটেনশিয়াল জনিত দুর্ঘটনা হ্রাস পায়।

২. জলাবদ্ধতা রোধ: পাথরের মধ্য দিয়ে সহজেই বৃষ্টি বা বন্যার পানি নিষ্কাশিত হতে পারে। ফলে উপকেন্দ্রে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় না।

৩. অগ্নিরোধী: উপকেন্দ্রে অগ্নুৎপাত জনিত দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে পাথর একটি আগুন প্রতিরোধী স্তর হিসেবে কাজ করে। ফলে আগুন সহজে বিস্তার লাভ করতে পারে না।

৪. আগাছা দমন: উপকেন্দ্রের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে আগাছা দমন অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন বিষয়। উপকেন্দ্রের ভূমিতে পাথর বিছানো থাকলে উপকেন্দ্রে আগাছা জন্মাতে পারে না। ফলে উপকেন্দ্র রক্ষণাবেক্ষণ সহজ হয়।

৫. সরীসৃপ প্রাণী এবং কীটপতঙ্গ দূরীকরণ: উপকেন্দ্রের ভূমিতে পাথর বিছানো থাকলে তো সরীসৃপ প্রাণী এবং কীটপতঙ্গের জন্য বসবাস অনুপযোগী হয়ে যায়। ফলে উপকেন্দ্র এসব সরীসৃপ প্রাণী ও কীটপতঙ্গের আক্রমন হতে রক্ষা পায়।

৬. জরুরী তেল নির্গমন: উপকেন্দ্রে অগ্নুৎপাত বা অন্য কোনো কারণে ট্রান্সফর্মারের তেল নিষ্কাশনের প্রয়োজন হলে তেল সহজেই পাথরের মধ্য দিয়ে অয়েল ট্রেঞ্চ এর মধ্যে চলে যেতে পারে।

৭. ভূমি ক্ষয়রোধ: পাথর ভূমির উপর একটি সুরক্ষা আবরণ তৈরি করে। ফলে উপকেন্দ্রের ভূমির ক্ষয়রোধ পায়।

উপসংহার:

পরিশেষে বলা যায় যে বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্রে পাথর বহুমুখী ভূমিকা পালন করে থাকে। উপকেন্দ্রে পাথর ব্যবহারের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা রোধ, আগাছা দমন, আগুন লাগা জনিত দুর্ঘটা প্রসমনসহ বিভিন্ন সুবিধা লাভ করা পাওয়া যায়।

ঝড় বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বিদ্যুৎ কেন চলে যায়?

ঝড় বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বিদ্যুৎ কেন চলে যায়? । Causes of Power Outages During Storms and Natural Disasters

ঝড় বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পিছনে বেশ কিছু কারণ থাকে। প্রধানত যেসব কারণে বিদ্যুৎ চলে যায় সেগুলো হলো:

  1. বৈদ্যুতিক খুঁটি বা তারের ক্ষতি: ঝড় বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় গাছ বা বড় বড় ডাল ভেঙে বৈদ্যুতিক খুঁটি বা তারের উপর পড়তে পারে, যা তার ছিঁড়ে ফেলে বা খুঁটি ভেঙে ফেলে। ফলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিঘ্নিত হয়।
  2. বজ্রপাত: বজ্রপাতের ফলে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বা সাবস্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এই কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহে সমস্যা হয়।
  3. উপকেন্দ্রের ক্ষতি: ঝড়ের সময় উপকেন্দ্র বা ট্রান্সফর্মার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এটি বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রধান কেন্দ্র হওয়ায় ক্ষতি হলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
  4. অতিরিক্ত চাপ: ঝড়ের সময় অনেক সময় অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারের কারণে সরবরাহ ব্যবস্থার উপর চাপ পড়ে। ফলে বৈদ্যুতিক সার্কিট ব্রেকার বন্ধ হয়ে যায় এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
  5. বন্যা: বন্যার পানি বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির সংস্পর্শে এসে সেগুলোকে নষ্ট করতে পারে। বিশেষ করে নিচু এলাকায় অবস্থিত সাবস্টেশনগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
  6. প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা: অনেক সময় বিদ্যুৎ বিভাগ প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস পেয়ে আগেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয় যাতে বড় ধরনের ক্ষতি না হয়। এটা একটি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে নেওয়া হয়।

ঝড় বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বিদ্যুৎ চলে যাওয়া মানুষের জীবনযাত্রায় বেশ সমস্যা তৈরি করে। তবে নিরাপত্তার জন্য এবং বড় ধরনের ক্ষতি এড়াতে এটি প্রয়োজনীয়।

তিন-ফেজ বিদ্যুৎ: কেন এটি সেরা বিকল্প?

তিন-ফেজ বিদ্যুৎ: কেন এটি সেরা বিকল্প? | Why we use 3-Phase Electricity? Why not 2, 4, 6, or 9-Phase?

থ্রী ফেজ সিস্টেম বৈদ্যুতিক পাওয়ার সিস্টেমে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়, কারণ এতে বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে যা অন্যান্য ফেজ সিস্টেমে পাওয়া যায় না। নিচে এই বিষয়ের কিছু প্রধান কারণ উল্লেখ করা হলো:

  1. কার্যক্ষমতা এবং দক্ষতা:
    • থ্রী ফেজ সিস্টেমে পাওয়ার ডেলিভারি এবং পাওয়ার কনভার্শন প্রক্রিয়া অত্যন্ত কার্যকরী হয়। একক ফেজ বা দ্বি ফেজ সিস্টেমের তুলনায় থ্রী ফেজ সিস্টেমে কম্প্লেক্স পাওয়ার (প্রকৃত পাওয়ার + রিয়েক্টিভ পাওয়ার) সরবরাহে দক্ষতা বেশি হয়।
    • থ্রী ফেজ সিস্টেমে মোটর চালানো হলে সেটি সমানভাবে এবং মসৃণভাবে চলে। থ্রী ফেজ মোটরগুলি সাধারণত একক ফেজ মোটরগুলির চেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়।
  2. বৈদ্যুতিক ভারসাম্য:
    • থ্রী ফেজ সিস্টেমে প্রতিটি ফেজের মধ্যে ১২০ ডিগ্রী কোণীয় ফেজ শিফট থাকে, যা সার্বিক পাওয়ার ফ্লোকে ভারসাম্যপূর্ণ রাখে। এর ফলে কন্ডাক্টরগুলির মধ্যে কমপ্লেক্স পাওয়ার ট্রান্সফার করা সহজ হয় এবং পাওয়ার লস কম হয়।
    • তাছাড়া, থ্রী ফেজ সিস্টেমে নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সিতে কোন সময়ে কোন ফেজেই জিরো ভোল্টেজ হয় না, ফলে পাওয়ার সাপ্লাই সার্কিটের স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।
  3. অর্থনৈতিক এবং বাস্তবিক দিক:
    • থ্রী ফেজ সিস্টেমের ইনস্টলেশন খরচ একক ফেজ সিস্টেমের তুলনায় কম হয় এবং এটি পরিচালনা করাও সহজ। থ্রী ফেজ সিস্টেমে একই পাওয়ার ট্রান্সফার করতে কম কন্ডাক্টরের প্রয়োজন হয়।
    • যন্ত্রপাতির সাইজ এবং ওজন কমানোর জন্য থ্রী ফেজ সিস্টেম ব্যবহার করা হয়, কারণ এতে কম্পন এবং গোলমাল কম হয়।

কেন ৬, ৯, ১৫, বা ২৭ ফেজ ব্যবহার করা হয় না:

  1. জটিলতা:
    • যদিও ৬, ৯, ১৫ বা ২৭ ফেজ সিস্টেমগুলি তাত্ত্বিকভাবে সম্ভব, তবে তাদের বাস্তবায়ন এবং ব্যবস্থাপনা কঠিন হয়ে যায়। সেগুলির জন্য জটিল সার্কিট এবং কন্ডাক্টর প্রয়োজন যা ইনস্টলেশন এবং মেইনটেনেন্সে অনেক বেশি খরচ হয়।
  2. অপ্রয়োজনীয়তা:
    • থ্রী ফেজ সিস্টেমেই প্রয়োজনীয় সকল সুবিধা প্রদান করা সম্ভব, যা অতিরিক্ত ফেজ সংখ্যার প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে দেয়।
  3. স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন:
    • বৈদ্যুতিক সিস্টেমে থ্রী ফেজ একটি স্ট্যান্ডার্ড হয়ে গেছে এবং অধিকাংশ যন্ত্রপাতি এবং ইন্সট্রুমেন্ট এই সিস্টেমের জন্য ডিজাইন করা হয়।

এই সব কারণগুলির জন্য থ্রী ফেজ সিস্টেমটি সবচেয়ে কার্যকর এবং প্রচলিত হয়ে উঠেছে বৈদ্যুতিক পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন এবং ট্রান্সমিশন ব্যবস্থায়।