জেনারেটর এক্সাইটেশন কি?

বিদুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে জেনারেটরের ফিল্ড উইন্ডিং এ ডিসি সরবরাহ প্রদানের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় চুম্বক ক্ষেত্র তৈরির প্রক্রিয়াকে জেনারেটর এক্সাইটেশন বলে। জেনারেটরের মাধ্যমে তড়িৎ চুম্বকীয় আবেশ প্রক্রিয়ায় যান্ত্রিক শক্তিকে বিদুৎ শক্তিতে রূপান্তরের ক্ষেত্রে এই চুম্বক ক্ষেত্র অত্যাবশ্যকীয়।

জেনারেটর এক্সাইটেশনের ধরন:
জেনারেটনে দুই ধরনের এক্সাইটেশন ব্যবহৃত হয়, যথা:
১. স্থির এক্সাইটেশন (Static Excitation): আলাদা ডিসি সরবরাহের মাধ্যমে এক্সাইটেশন প্রদান করা হয়।
২. ঘূর্ণায়মান এক্সাইটেশন (Rotational Excitation): ছোট একটি ডিসি জেনারেটরকে মূল জেনারেটরের একই শ্যাফটের সাথে সংযুক্ত করে মূল জেনারেটরে ডিসি সরবরাহ প্রদান করা হয়।

মূল কথা,

  • এক্সাইটেশনের মাধ্যমে জেনারেটরের আউটপুট ভোল্টেজকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
  • এটা সিস্টেমের রিয়্যাকটিভ পাওয়ার এবং পাওয়ার ফ্যাক্টরকে প্রভাবিত করে।
  • এক্সাইটেশন সয়ংক্রিয় বা ম্যানুয়াল এই দুই ধরনের হতে পরে।

লোড পরিবর্তন হলে ট্রান্সফরমারের কোর লসের কি ঘটবে?

লোড পরিবর্তন হলেও ট্রান্সফরমারের ট্রান্সফরমারের কোর লস অপরিবর্তিত থাকবে। কারণ ট্রান্সফরমারের কোর লস শুধুমাত্র কোরের চুম্বকীয় বৈশিষ্ট্য (চুম্বকীয় ফ্লাক্স এর ঘনত্ব), সরবরাহ ভোল্টেজ এবং ফ্রিকোয়েন্সি এর উপর নির্ভরশীল যাদের সবই লোড পরিবর্তনের সাথে অপরিবর্তিত থাকে।

কারণ:
২. হিস্টেরেসিস লস নির্ভর করে চুম্বকীয় ফ্লাক্স এর ঘনত্ব এবং ফ্রিকোয়েন্সি এর উপর যা লোড পরিবর্তনের সাথে অপরিবর্তিত থাকে।
২. এডি কারেন্ট লস নির্ভর করে সরবরাহ ভোল্টেজের বর্গের উপর যা লোড হতে সম্পূর্ণ স্বাধীন।

মূল কথা,

  • কোর লস লোড দ্বারা প্রভাবিত হয় না।
  • লোড পরিবর্তন হলে শুধুমাত্র কপার লস পরিবর্তিত হয়।
  • কোর লস ভোল্টেজ, ফ্রিকোয়েন্সি এবং কোরের চুম্বকীয় বৈশিষ্ট্যর উপর নির্ভরশীল।

ট্রান্সফরমারের কোর এবং বডি কি দিয়ে তৈরি করা হয়।

ট্রান্সফরমারের বডির তৈরির ম্যাটেরিয়াল পছন্দের ক্ষেত্রে ম্যাটেরিয়ালের যান্ত্রিক শক্তি, মরিচারোধী গুণ এবং বাহ্যিক প্রভাব হতে সুরক্ষার বিষয় বিশেষ বিবেচনায় রাখা হয়। ট্রান্সফরমারের বডি তৈরিতে বহুল ব্যবহৃত ম্যাটেরিয়াল হলো মাইল্ড স্টিল (Mild Steel) এবং মরিচারোধী ইস্পাত।

ট্রান্সফরমারের কোর তৈরিতে উচ্চ চুম্বকীয় ভেদ্যোতা (Permeability) সম্পন্ন ল্যামিনেটেড সিলিকন স্টিল এর পাতলা পাত ব্যবহার করা হয়। এতে ট্রান্সফরমারের কোর লস হ্রাস পায়।

কোর ম্যাটেরিয়াল তৈরিতে Cold Rolled Grain Orientation (CGRO) নামে বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় এবং এই প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন স্টীলকে CGRO স্টিল বলে।

মূল কথা,

  • ট্রান্সফরমার বডি তৈরিতে মাইল্ড স্টিল বা মরিচারোধী ইস্পাত ব্যবহার করা হয়।
  • কোর তৈরিতে ল্যামিনেটেড সিলিকন স্টিল ব্যবহার করা হয়।

ফেরান্টি ইফেক্ট কি?

বৈদ্যুতিক সিস্টেমে বিশেষ করে দীর্ঘ সঞ্চালন লাইনের ক্ষেত্রে প্রেরণ প্রান্তের তুলনায় গ্রহণ প্রান্তে ভোল্টেজের মান বেশি হওয়ার ঘটনাকে ফেরান্টি ইফেক্ট বলে। সাধারণত শুন্য লোড বা হালকা লোড যুক্ত সঞ্চালন লাইনে ফেরান্টি ঘটে থাকে।

ফেরান্টি ইফেক্ট এর কারণ:
১. সঞ্চালন লাইনের ক্যাপ্যাসিট্যান্স: সঞ্চালন লাইনের নিজস্ব ক্যাপ্যাসিট্যান্স এর জন্য লাইন চার্জিত হয় এবং প্রেরণ প্রান্তের তুলনায় গ্রহণ প্রান্তের ভোল্টেজ বৃদ্ধি পায়।
২. ক্যাপাসিটিভ লোড: গ্রাহক প্রান্তে যুক্ত লোড ক্যাপাসিটিভ হলে গ্রহন প্রান্তের ভোল্টেজ বৃদ্ধি পায়।
৩. শূন্য/হালকা লোড: শূন্য/হালকা লোডের ক্ষেত্রে লাইনের সঞ্চালন লাইনের ক্যাপ্যাসিট্যান্স এর কারণে লাইনটি ক্যাপাসিটিভ সিস্টেমে ন্যায় আচরণ করে এবং উচ্চ চার্জিং কারেন্ট প্রবাহিত হয়। ফলে গ্রহণ প্রান্তের ভোল্টেজ বৃদ্ধি পায়।

মূল কথা,

  • সঞ্চালন লাইনের অভ্যন্তরীণ ক্যাপ্যাসিট্যান্স এর কারণে লাইনে চার্জিং কারেন্ট প্রবাহিত হয়।
  • লাইনে চার্জিং কারেন্ট প্রবাহের কারণে গ্রহণ প্রান্তের ভোল্টেজ বৃদ্ধি পায়।
  • শূন্য লোড বা হালকা লোডে লাইনে চার্জিং কারেন্ট এর পরিমাণ তুলনামুলক বেশি হওয়ার ফেরান্টি ইফেক্ট বেশি ঘটে।

সিঙ্গেল ফেজ ইন্ডাকশন মোটর কেন নিজে নিজে চালু হতে পারে না?

সিঙ্গেল ফেজ ইন্ডাকশন মোটর স্থির চুম্বক ক্ষেত্র তৈরি করার কারণে নিজে নিজে চালু হতে পারে না। একটি মোটরকে চালু হওয়ার জন্য ঘুরন্ত চুম্বক ক্ষেত্র প্রয়োজন যার মাধ্যমে রোটরে স্টার্টিং টর্ক আবিষ্ট হয়ে। সিঙ্গেল ফেজ ইন্ডাকশন মোটরে ধনাত্মক অর্ধ সাইকেলে যে টর্ক উৎপন্ন হয়, ঋণাত্মক অর্ধ সাইকেলে ঠিক তার বিপরীতমুখী টর্ক উৎপন্ন হয়। ফলে এই দুই বিপরীতমুখী টর্ক একে অপরকে নিঃশেষ করে দেয় এবং রোটর না ঘুরে সামনে পিছনে কাপতে থাকে।

মূল কথা,

  • সিঙ্গেল ফেজ ইন্ডাকশন মোটর স্থির চুম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে।
  • ঘূর্ণন শুরুর জন্য ঘুরন্ত চুম্বক ক্ষেত্র দরকার হয়।
  • ঘূর্ণন শুরু জন্য বিভিন্ন স্টার্টিং পদ্ধতি যেমন স্টার্টিং উইন্ডিং, স্টার্টিং ক্যাপাসিটির ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।

ইন্ডাকশন মোটোরকে ঘুরন্ত ট্রান্সফরমার বলা হয় কেনো?

ইন্ডাকশন মোটরকে ঘুরন্ত ট্রান্সফরমার বলা হয় কারণ ইন্ডাকশন মোটর বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারের ন্যায় তড়িৎ চুম্বকীয় আবেশের সুরে নীতিতে কাজ করে যেখানে চুম্বক ক্ষেত্রের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক শক্তি প্রাইমারী উইন্ডিং হতে সেকেন্ডারি উইন্ডিং এ স্থানান্তরিত হয়।

ইন্ডাকশন মোটরে স্টেটর ঘুরন্ত চুম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে। রোটর এই ঘুরন্ত চুম্বক ক্ষেত্রকে কর্তন করে এবং ফলে রোটরের প্রবাহিত ইএমএফ আবিষ্ট হয় হয়ে কারেন্ট প্রবাহিত হয়। ফলে ইন্ডাকশন মোটরের স্টেটর প্রাইমারী উইন্ডিং এবং রোটর সেকেন্ডারি উইন্ডিং এর ন্যায় আচরণ করে।

এই প্রক্রিয়া ট্রান্সফরমারের মতো হওয়ার ফলে ইন্ডাকশন মোটরকে ঘুরন্ত ট্রান্সফরমার বলে।

মূল কথা,

  • স্টেটর ঘুরন্ত চুম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে।
  • তড়িৎ চুম্বকীয় আবেশের মাধ্যমে রোটরে কারেন্ট আবিষ্ট হয়।
  • এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া ট্রান্সফরমারের কার্যপ্রণালীর মতোই।

বৈদ্যুতিক মোটর চালুর সময় উচ্চ কারেন্ট গ্রহণ করে কেনো?

চালুর সময় বৈদ্যুতিক মোটরে কোনো ব্যাক ইএমএফ থাকে না। শুধুমাত্র রোটর ঘোড়া শুরুর পরেই ব্যাক ইএমএফ তৈরি হয় যা মূল সরবরাহ ভোল্টেজকে বাধা প্রদান করে। শুরুতে রোটর স্থির থাকায় ব্যাক ইএমএফ এর মান শূন্য থাকে এবং সম্পূর্ণ সরবরাহ ভোল্টেজ আর্মেচারের উপর প্রযুক্ত হয়। যেহেতু আর্মেচারের রোধ খুবই কম থাকে তাই চালুর সময় মোটর উচ্চ কারেন্ট গ্রহণ করে।

মূল কথা,

  • চালুর সময় শুরুতে ব্যাক ইএমএফ শূন্য থাকে।
  • আর্মেচারের রোধ কম থাকায় উচ্চ কারেন্ট প্রবাহিত হয়।
  • মোটরে গতি বৃদ্ধির সাথে সাথে ব্যাক টইএমএফ এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ফলে মোটরের কারেন্ট গ্রহণের পরিমাণ হ্রাস পায়।
  • মোটর চালুর সময় কারেন্টের মান কম রাখার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।

একটি 50 হার্জ ফ্রিকুয়েন্সির ট্রান্সফরমারে 500 হার্জ এর বিদুৎ সরবরাহ দিলে কি ঘটবে?

ভূমিকা:

ট্রান্সফরমারকে একটি সুনির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সিতে পরিচালনার জন্য ডিজাইন করা হয়। একটি ৫০ হার্জ বিদুৎ সরবরাহের জন্য ডিজাইন করা ট্রান্সফরমারকে ৫০০ হার্জ সরবরাহের সাথে যুক্ত করলে তার মারাত্বক দুর্ঘটনা ঘটে পরে এবং ট্রান্সফরমারের সুরক্ষা বিনষ্ট হতে পরে। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা এই ঘটনার ফলে কি ঘটতে পারে তো জানবো।

৫০০ হার্জ সরবরাহ দেয়ার ফলাফল:

১. কোর লস বৃদ্ধি: ট্রান্সফরমারের কোর লসের মধ্যে রয়েছে এডি কারেন্ট লস এবং হিস্টেরেসিস লস। এই উভয় প্রকার লসই সরাসরি ফ্রিকোয়েন্সির উপর নির্ভরশীল।

এডি কারেন্ট লস ফ্রিকোয়েন্সি বৃদ্ধির সাথে সাথে বর্গের সমানুপাতিক হারে বৃদ্ধি পায়।

হিস্টেরেসিস লস ফ্রিকোয়েন্সি বৃদ্ধির সাথে সাথে সমানুপাতিক হারে বৃদ্ধি পায়।

তাই ৫০ হার্জ এর ট্রান্সফরমারকে ৫০০ হার্জ সরবরাহ প্রদান করা হলে ট্রান্সফরমারের কোর লস বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে।

২. ট্রান্সফরমারের তাপমাত্রা বৃদ্ধি: কোর লসের আকস্মিক বৃদ্ধির কারণে ট্রান্সফর্মারে প্রচুর তাপ উৎপন্ন হবে। ৫০ হার্জের জন্য ডিজাইন করা ট্রান্সফরমারের শীতলীকরণ পদ্ধতি ৫০০ হার্জে উৎপন্ন তপকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না ফলে ট্রান্সফরমারের দক্ষতা হ্রাস পাবে এবং এই অবস্থা দীর্ঘ সময় চলতে থাকলে ট্রান্সফরমারটির ইন্সুলেশন এবং উইন্ডি ক্ষতিগ্রস্থ হবে যা ট্রান্সফরমারটিকে স্থায়ী ভাবে বিকল করবে।

৩. ম্যাগনেটাইজিং ইন্ডাক্ট্যান্স হ্রাস: ফ্রিকোয়েন্সি বৃদ্ধির কারণে ট্রান্সফরমারের ম্যাগনেটাইজিং ইন্ডাক্ট্যান্স হ্রাস পায় ফলে ট্রান্সফরমার তার কাঙ্ক্ষিত দক্ষতা এবং সক্ষমতা অর্জন করতে পারবে না।

৪. লোড পরিবহন ক্ষমতা হ্রাস: উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সিতে স্কিন ইফেক্ট এর কারণে ট্রান্সফরমারের কারেন্ট পরিবহনের ক্ষমতা হ্রাস পাবে ফলে লোড পরিবহন ক্ষমতাও হ্রাস পাবে।

৫. শব্দ এবং কম্পন সৃষ্টি: ফ্রিকোয়েন্সি বৃদ্ধির ফলে কোর লস বৃদ্ধির কারণে ট্রান্সফরমারে উচ্চ কম্পন সহ শব্দ সৃষ্টি হবে।

সম্ভাব্য ফলাফল:

১. ট্রান্সফরমার স্থায়ী ভাবে বিকল হতে পারে,
২. নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হবে এবং
৩. অদক্ষভাবে পাওয়ার ট্রান্সফরমেশন হবে।

ট্রান্সফরমারকে কি উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সিতে পরিচালিত হওয়ার জন্য তৈরি করা সম্ভব?

হ্যাঁ, উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সিতে পরিচালিত হওয়ার জন্য বিশেষ ধরনের ট্রান্সফরমার ডিজাইন করা হয়ে থাকে। বিশেষ করে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক সার্কিট যেমন অডিও অ্যাম্পলিফায়ার, রেডিও, সুইচ মুড পাওয়ার সাপ্লাই ইত্যাদিতে উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সির ট্রান্সফরমার ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সির ট্রান্সফরমারের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যেমন:
১. ছোট আকারের কোর: উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সিতে ফ্লাক্স ডেনসিটি কম হওয়ার কোরের আকার ছোট হয়।
২. বিশেষ ধরনের কোর পদার্থের ব্যবহার: উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সিতে কোর লস সীমিত রাখার জন্য কোর পদার্থ হিসেবে ফেরাইট বা এই জাতীয় পদার্থ ব্যবহার করা হয়।
৩. বিশেষ ব্যবহারিক ক্ষেত্র: উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি ট্রান্সফরমার বিভিন্ন ধরনের ইনভার্টার, সুইচ মুড পাওয়ার সাপ্লাই, উড্ডয়ন শিল্প ইত্যাদিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

উপসংহার:

উপরের আলোচনা থেকে এটা পরিষ্কার যে এক ফ্রিকোয়েন্সির জন্য ডিজাইন করা ট্রান্সফরমার কে কোনো ভাবেই অন্য ফ্রিকোয়েন্সির বিদুৎ সরবরাহ প্রদান করা উচিত নয়। এতে দুর্ঘটনা ঘটতে পরে এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়। উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সিতে পরিচালিত হওয়ার জন্য বিশেষভাবে উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সির জন্য তৈরিকৃত ট্রান্সফরমার ব্যবহার করতে হবে। এতেকরে দক্ষতা এবং নিরপত্তা নিশ্চিত হবে।

বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্রে পাথর ব্যবহার হয় কেনো? বিস্তারিত

ভূমিকা:

সাবস্টেশন ডিজাইন এবং অপারেশনে পাথর একটি গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা পালন করে। এটা শুধু একটি কনস্ট্রাকশন মেটেরিয়াল হিসেবেই নয় বরং সাবস্টেশন পরিচালনা এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু উদ্দেশ্য সাধনে ব্যবহার হয়ে থাকে। নিচে বৈদ্যুতিক সাবস্টেশনে প্রধান কারণগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

Gravel used in Electrical Substation
Gravel used in Electrical Substation

১. স্টেপ পোটেনশিয়াল এবং টাচ পোটেনশিয়াল থেকে সুরক্ষা: বৈদ্যুতিক সিস্টেমে ফল্টের কারণে গ্রাউন্ড বিদ্যুতায়িত হয়ে গেলে স্টেপ পোটেনশিয়াল এবং টাচ পটেনশিয়াল তৈরি হয় এবং ফল্ট স্থানে অবস্থানকারী ব্যক্তিবর্গ বিদ্যুতপৃষ্ট হয়ে গুরুতর দুর্ঘটনা ঘটে। উপকেন্দ্রের ভুমিতে পাথর ব্যবহার করা হলে পাথরের উচ্চ বৈদ্যুতিক রোধ গ্রাউন্ড এর মধ্য প্রবাহিত ফল্ট কারেন্ট সীমিত রাখে। ফলে স্টেপ পোটেনশিয়াল এবং টাচ পোটেনশিয়াল জনিত দুর্ঘটনা হ্রাস পায়।

২. জলাবদ্ধতা রোধ: পাথরের মধ্য দিয়ে সহজেই বৃষ্টি বা বন্যার পানি নিষ্কাশিত হতে পারে। ফলে উপকেন্দ্রে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় না।

৩. অগ্নিরোধী: উপকেন্দ্রে অগ্নুৎপাত জনিত দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে পাথর একটি আগুন প্রতিরোধী স্তর হিসেবে কাজ করে। ফলে আগুন সহজে বিস্তার লাভ করতে পারে না।

৪. আগাছা দমন: উপকেন্দ্রের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে আগাছা দমন অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন বিষয়। উপকেন্দ্রের ভূমিতে পাথর বিছানো থাকলে উপকেন্দ্রে আগাছা জন্মাতে পারে না। ফলে উপকেন্দ্র রক্ষণাবেক্ষণ সহজ হয়।

৫. সরীসৃপ প্রাণী এবং কীটপতঙ্গ দূরীকরণ: উপকেন্দ্রের ভূমিতে পাথর বিছানো থাকলে তো সরীসৃপ প্রাণী এবং কীটপতঙ্গের জন্য বসবাস অনুপযোগী হয়ে যায়। ফলে উপকেন্দ্র এসব সরীসৃপ প্রাণী ও কীটপতঙ্গের আক্রমন হতে রক্ষা পায়।

৬. জরুরী তেল নির্গমন: উপকেন্দ্রে অগ্নুৎপাত বা অন্য কোনো কারণে ট্রান্সফর্মারের তেল নিষ্কাশনের প্রয়োজন হলে তেল সহজেই পাথরের মধ্য দিয়ে অয়েল ট্রেঞ্চ এর মধ্যে চলে যেতে পারে।

৭. ভূমি ক্ষয়রোধ: পাথর ভূমির উপর একটি সুরক্ষা আবরণ তৈরি করে। ফলে উপকেন্দ্রের ভূমির ক্ষয়রোধ পায়।

উপসংহার:

পরিশেষে বলা যায় যে বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্রে পাথর বহুমুখী ভূমিকা পালন করে থাকে। উপকেন্দ্রে পাথর ব্যবহারের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা রোধ, আগাছা দমন, আগুন লাগা জনিত দুর্ঘটা প্রসমনসহ বিভিন্ন সুবিধা লাভ করা পাওয়া যায়।

ট্রান্সফর্মারের কোর কেনো সিলিন্ডার আকৃতির হয়?

ভূমিকা(Introduction):

পাওয়ার ট্রান্সফর্মারের কোর প্রায়ই পারফরমেন্স, দক্ষতা এবং গাঠনিক সুবিদার জন্য সিলিন্ডার আকৃতিতে তৈরি করা হয়। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আজ পাওয়ার ট্রান্সফর্মারের কোর সিলিন্ডার আকৃতির হওয়ার কারণগুলো জানবো।

যেসব কারণে ট্রান্সফর্মারের কোর সিলিন্ডার আকৃতির হয়ে থাকে তা হলো:

1. কম কপার ব্যবহার: অন্য যেকোনো আকৃতির কোরের তুলনায় সমান সংখ্যক প্যাঁচের জন্য সিলিন্ডার আকৃতির কোরে কম পরিমাণ কপার প্রয়োজন হয়। ফলে ট্রান্সফর্মারের ব্যয়, ওজন এবং আকার হ্রাস পায়।

2. ম্যাগনেটিক ফ্লাক্স ডিস্ট্রিবিউশন: সিলিন্ডার আকৃতির কোরে ম্যাগনেটিক ফ্লাক্স ডিস্ট্রিবিউশন সুষম হয় এবং ম্যাগনেটিক ফ্লাক্সের কোনো তীক্ষ্ম কোনা (Sharp Edge) থাকে না।

3. কোর লস হ্রাস: সিলিন্ডার আকৃতির কোরে ম্যাগনেটিক ফ্লাক্সের কোনো সূক্ষ্ম কোনা না থাকায় ট্রান্সফর্মারের কোর লস তথা হিস্টেরেসিস এবং এডি কারেন্ট লস কম হয়, কোর স্যাচুরেশন কম হয় এবং ম্যাগনেটিক ফ্লাক্সের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত হয়।

4. কম্প্যাক্ট এবং দক্ষ উইন্ডিং ডিজাইন: সিলিন্ডার আকৃতির ডিজাইনের ফলে উইন্ডিং এর গঠন শক্তিশালী হয় এবং কোরের বিকৃতি কম ঘটে যা কোরকে ড্যামেজ হতে রক্ষা করে।

5. দক্ষ শীতলীকরণ: সিলিন্ডার আকৃতির কোরে অধিকতর কার্যকরভাবে ট্রান্সফর্মার শীতলীকরণ করা যায় ফলে ট্রান্সফর্মারের দক্ষতা এবং কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

উপসংহার(Conclusion): পরিশেষে বলা যায় যে ট্রান্সফর্মারের ম্যাগনেটিক ফ্লাক্স এর সুষম বণ্টন, ব্যয় হ্রাস, লস হ্রাস, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং শক্তিশালী গঠনের জন্য সিলিন্ডার আকৃতির কোর গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা পালন করে।