ট্রান্সফরমারের লসসমূহ । প্রকারভে, সূত্র এবং কমানোর উপায়: বিস্তারিত

ভূমিকা:

ট্রান্সফরমার পরিচালনার ক্ষেত্রে পাওয়ার লস একটি অনিবার্য বিষয় যা ট্রান্সফরমারের দক্ষতা ও স্থায়িত্বের উপর সরাসরি প্রভাব বিস্তার করে। ট্রান্সফরমারকে উচ্চ দক্ষতায় পরিচালিত হওয়ার জন্য তৈরি করা হলেও বৈদ্যুতিক পাওয়ার এর একটা অংশ ট্রান্সফরমার কর্তৃক পাওয়ার ট্রান্সফরমেশন এর সময় হারিয়ে যায়। এই হারিয়ে যাওয়ায় পাওয়ারই ট্রান্সফরমারের লস।

এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন ধরনের ট্রান্সফরমার লস, তাদের কারণ, গাণিতিক সূত্র এবং লস কমানোর উপায় সম্পর্কে জানতে পারবো।

ট্রান্সফরমার লসের প্রকারভেদ:

ট্রান্সফরমার লসকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়:
১. কোর লস এবং ২. কপার লস।

১. কোর লস:

ট্রান্সফরমারের কোরে পরিবর্তনশীল চুম্বক ক্ষেত্রের কারণে ট্রান্সফরমারে কোর লস হয়ে থাকে। ট্রান্সফরমারে এই লস এর পরিমাণ স্থির থাকে এবং লোডের প্রভাব হতে মুক্ত থাকে।

ট্রান্সফরমারে দুই ধরনের কোর লস হয়ে থাকে, যথা:

১. হিস্টেরেসিস লস:

ট্রান্সফরমারে পরিবর্তনশীল বিদুৎ সরবরাহ দেয়ার ফলে ট্রান্সফরমারের কোর ম্যাটেরিয়াল অনবরত ম্যাগনেটাইজড এবং ডি-ম্যাগনেটাইজড হয় ফলে। কোর ম্যাটেরিয়ালের অনু সমূহের মধ্যে ঘর্ষণ হয় এবং তাপ শক্তি রূপে বৈদ্যুতিক লস হয়। এই লসকেই হিস্টেরেসিস লস বলে।

হিস্টেরেসিস লসের সূত্র:
হিস্টেরেসিস লসে, Ph​=η⋅Bm1.6​⋅f⋅V

এখানে,
η = হিস্টেরেসিস ধ্রুবক,
Bm = সর্বোচ্চ ফ্লাক্স ডেনসিটি,
f = সরবরাহ ফ্রিকোয়েন্সি,
V = কোরের আয়তন।

হিস্টেরেসিস লস কমানোর উপায়: ভালো মানের কোর ম্যাটেরিয়াল যেমন সিলিকন স্টিল ব্যবহার করে হিস্টেরেসিস লস কমানো সম্ভব।

২. এডি কারেন্ট লস:

যখন ট্রান্সফরমারে পরিবর্তনশীল বিদুৎ সরবরাহ প্রদান করা হয় তখন ট্রান্সফরমারের প্রাইমারী উইন্ডিং এ ম্যাগনেটিক ফ্লাক্স তৈরি হয় এবং তা ট্রান্সফরমারের সেকেন্ডারি উইন্ডিং দ্বারা আবিষ্ট হয়। যেহেতু ট্রান্সফরমারের কোর ম্যাগনেটিক মেটেরিয়াল দ্বারা তৈরী, তাই উইন্ডিং এ উৎপন্ন ম্যাগনেটিক ফ্লাক্স এর কিছু অংশ করেও আবিষ্ট হয় এবং কোরে একটি সার্কুলেটিং কারেন্ট প্রবাহিত হয়। কোরে প্রবাহিত সার্কুলেটিং কারেন্টের জন্য ট্রান্সফরমার কোরে যে লস হয় তাকে এডি কারেন্ট লস বলে।

এডি কারেন্ট লসের সূত্র:
এডি কারেন্ট লসে, Pe​=Ke​⋅Bm2​⋅f2⋅t2⋅V

এখানে,
Bm = সর্বোচ্চ ফ্লাক্স ডেনসিটি,
f = সরবরাহ ফ্রিকোয়েন্সি,
V = কোরের আয়তন,
Ke= এডি কারেন্ট লস ধ্রুবক,
t = কোর পদার্থের পুরুত্ব।

এডি কারেন্ট লস কমানোর উপায়: সলিড কোর ব্যবহারের পরিবর্তে ল্যামিনেশন যুক্ত পাতলা ইস্পাতের পাত দিয়ে তৈরি কোর ব্যবহার করে এডি কারেন্ট লস কমানো যায়।

কপার লস:

ট্রান্সফরমারের উইন্ডিং এর অভ্যন্তরীণ রেজিস্ট্যান্স এর কারণে ট্রান্সফরমারের ভিতর দিয়ে কারেন্ট প্রবাহিত হওয়ার সময় যে I2*R লস হয় তাকে ট্রান্সফরমারের কপার লস বলে। কপার লস ট্রান্সফরমারের লোড পরিবর্তনের সাথে পরিবর্তন হয়।

কপার লসের গাণিতিক সূত্র:
কপার লস, Pcu = I2*R

এখানে,
I = লোড কারেন্ট এবং
R = ট্রান্সফরমারের সমতুল্য রেজিস্ট্যান্স।

কপার লস কমানোর উপায়:
১. উইন্ডিং এ উচ্চ পরিবাহিতা সম্পন্ন পরিবাহীর ব্যবহার,
২. সঠিক শীতলীকরণ পদ্ধতি ব্যবহার এর মাধ্যমে লোড বৃদ্ধির কারণে উইন্ডিং এর রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ।

ট্রান্সফরমারের কোর লস এবং কপার লস ছাড়াও আরো দুই ধরনের লস হয়, যথা: ১. স্ট্রে লস এবং ২. ডাই-ইলেকট্রিক লস।

১. স্ট্রে লস:

ট্রান্সফরমারের ধাবত অংশ যেমন মেইন ট্যাংক, সাপোর্ট ইত্যাদির এডি কারেন্ট প্রবাহের ফলে ট্রান্সফরমারে স্ট্রে লস হয়।

২. ডাই-ইলেকট্রিক লস:

ট্রান্সফরমারের ইন্সুলেশন ম্যাটেরিয়ালে পরিবর্তনশীল চুম্বক ক্ষেত্রের প্রভাবে ডাই-ইলেকট্রিক লস হয়।

ট্রান্সফরমারে স্ট্রে লস এবং ডাই-ইলেকট্রিক লসের পরিমাণ খুবই সামান্য হলেও সঠিক ম্যাটেরিয়াল এবং ডিজাইন পছন্দ না করা হলে এই লসের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেতে পারে।

ট্রান্সফরমারের মোট লস ক্যালকুলেশন:

মোট লস = কোর লস + কপার লস
মোট লস = হিস্টেরেসিস লস + এডি কারেন্ট লসে+ কপার লস
Ptotal = Pcore + Pcopper
Ptotal = Ph + Pe + Pcopper

ট্রান্সফরমারের দক্ষতা নির্ণয়:

ট্রান্সফরমারের দক্ষতা নির্ণয়ের জন্য নিচের সূত্র ব্যবহার করা হয়।

দক্ষতা=\frac{অউটপুট\; পাওয়ার}{ইনপুট\; পাওয়ার}×১০০\%

দক্ষতা=\frac{অউটপুট\; পাওয়ার}{অউটপুট\; পাওয়ার+মোট\; লস}×১০০\%

বিবেচ্য বিষয়:
১. যখন ট্রান্সফরমারের পরিবর্তনশীল লস অর্থাৎ কপার লস স্থির লস অর্থাৎ কোর লসের সমান হয় তখন ট্রান্সফরমার সর্বোচ্চ দক্ষতায় পরিচালিত হয়।
২. লোড এবং লোডের পাওয়ার ফ্যাক্টর ট্রান্সফরমারের লস এবং দক্ষতাকে সরাসরি প্রভাবিত করে।

উপসংহার:

ট্রান্সফরমারের লস সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকলে লস হ্রাসের মাধ্যমে ট্রান্সফরমারকে দক্ষতার সহিত পরিচালনা করা সম্ভব হবে। কোর লস এবং কপার লস কমানোর মাধ্যমে ট্রান্সফরমারের দক্ষ, নির্ভরযোগ্য এবং মৃতব্যায়ী অপারেশন নিশ্চিত হবে এবং বিদুৎ শক্তি সাশ্রয় করা যাবে।

ট্রান্সফর্মারের টার্ন রেশিও এবং ট্রান্সফরমেশন রেশিও কি?

ভূমিকা:
বৈদ্যুতিক পাওয়ার সিস্টেমে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হচ্ছে ট্রান্সফর্মার যা বৈদ্যুতিক নেটওয়ার্কের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বিদুৎ সরবরাহের জন্য ব্যবহার করা হয়। ট্রান্সফর্মারের দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো টার্ন রেশিও এবং ট্রান্সফরমেশন রেশিও যা ট্রান্সফর্মারের দক্ষতা এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মারের টার্ন রেশিও এবং ট্রান্সফরমেশন রেশিও সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

১. টার্ন রেশিও: ট্রান্সফর্মারের প্রাইমারী উইন্ডিং এর টার্ন সংখ্যা (Np) এবং সেকেন্ডারি উইন্ডিং এর টার্ন সংখ্যার (Ns) অনুপাতকে টার্ন রেশিও বলে। টার্ন রেশিওকে a দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

সূত্র: টার্ন রেশিও,

a = \frac{প্রাইমারী\; উইন্ডিং\; এর\; টার্ন\; সংখ্যা}{সেকেন্ডারি\; উইন্ডিং\; এর\; টার্ন\; সংখ্যা} = \frac{N_P}{N_S}

টার্ন রেশিও এর তাৎপর্য:
১. ট্রান্সফর্মারের প্রাইমারী এবং সেকেন্ডারি প্রান্তের ভোল্টেজ নির্ধারণ করে।
২. টার্ন রেশিও যত বেশি হবে প্রাইমারী এবং সেকেন্ডারি প্রান্তের ভোল্টেজ পার্থক্যও তত বেশি হবে।

উদাহরণ: যদি একটি ট্রান্সফর্মারের প্রাইমারী উইন্ডিং এ ১০০ টি টার্ন এবং সেকেন্ডারি উইন্ডিং এ ১০ টি টার্ন থাকে তবে ট্রান্সফর্মারটির টার্ন রেশিও,

a = \frac{১০০}{১০} = ১০

ট্রান্সফরমেশন রেশিও: ট্রান্সফর্মারের সেকেন্ডারি ভোল্টেজ (Vs) এবং প্রাইমারী ভোল্টেজ (Vp) এর অণুপাত বা প্রাইমারী কারেন্ট (Ip) এবং সেকেন্ডারি কারেন্ট (Is) এর অণুপাতকে ট্রান্সফরমেশন রেশিও বলে। একে k দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

সূত্র: ট্রান্সফরমেশন রেশিও,

k = \frac{সেকেন্ডারি\; ভোল্টেজ}{প্রাইমারী\; ভোল্টেজ} = \frac{V_S}{V_P}

= \frac{প্রাইমারী\; কারেন্ট}{সেকেন্ডারি\; কারেন্ট} = \frac{I_P}{I_S}

ট্রান্সফরমেশন রেশিও এর তাৎপর্য:
১. প্রাইমারী ভোল্টেজ এবং কারেন্টের সাথে সেকেন্ডারি ভোল্টেজ এবং কারেন্টের সম্পর্ক নির্ণয় করে।
২. পাওয়ার বিতরণ এবং লোড এর বৈশিষ্ট বুঝতে সহায়তা করে।

উপসংহার:
ট্রান্সফর্মারের টার্ন রেশিও এবং ট্রান্সফরমেশন রেশিও একে অপরের সাথে ওতপ্রোত ভাবে সংযুক্ত পৃথক দুটি ধারণা। দক্ষভাবে ট্রান্সফর্মার ডিজাইন, পরিচালন এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এই দুটি বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি পাঠ করেন-

মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি পাঠ করেন-

  1. সৈয়দ নজরুল ইসলাম
  2. এম মনসুর আলী
  3. অধ্যাপক ইউসুফ আলী
  4. ব্যারিস্টার আমিরুল আলী