ভূমিকা:
ট্রান্সফর্মারের নেমপ্লেট ট্রান্সফর্মার সম্পর্কে বিভিন্ন গুরুতবপূর্ণ তথ্য প্রদান করে, যেমন: অপারেশনাল প্যারামিটার, রেটিং এবং স্পেসিফিকেশন। ট্রান্সফর্মার স্থাপন, পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এই তথ্যগুলো অত্যাবশ্যকীয়। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা ট্রান্সফর্মারের নেমপ্লেটে যেসব তথ্য থাকে যা নিয়ে বিস্তারিত জানতে পারবো।
ট্রান্সফর্মারের নেমপ্লেটে যেসব তথ্য থাকে:
১. রেটেড পাওয়ার: ট্রান্সফর্মার সর্ব্বোচ কি পরিমান পাওয়ার নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে লোডে সরবরাহ করতে পারে তাকে ট্রান্সফর্মারের রেটেড পাওয়ার বলে। সাধারণত kVA বা MVA তে ট্রান্সফর্মারের রেটেড পাওয়ার প্রকাশ করা হয়।
২. প্রাইমারী এবং সেকেন্ডারি ভোল্টেজ রেটিং: ট্রান্সফর্মারের প্রাইমারী বা ইনপুট ভোল্টেজ এবং সেকেন্ডারি বা আউটপুট ভোল্টেজ নেমপ্লেটে উল্লেখ থাকে। কোনো ট্রান্সফর্মার এর নেমপ্লেটে 33kv/11kV লেখা থাকার অর্থ হচ্ছে ট্রান্সফর্মারটির প্রাইমারী ভোল্টেজ 33kV এবং সেকেন্ডারি ভোল্টেজ 11kV।
৩. ফ্রিকোয়েন্সি: ট্রান্সফর্মারটি যে ফ্রিকোয়েন্সিতে পরিচালনার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে সেই ফ্রিকোয়েন্সি হার্জ(Hz) এ উল্লেখ করা থাকে।
৪. ভেক্টর গ্রুপ: ভেক্টর গ্রুপের মাধ্যমে ট্রান্সফর্মারের উইন্ডিং সমূহের গঠন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। বহুল ব্যবহৃত দুইটি ভেক্টর গ্রুপ হলো Dyn1 এবং Dyn11.
৫. ইম্পিডেন্স ভোল্টেজ: পার্সেন্টেজ ইম্পিডেন্স ট্রান্সফর্মারের ফল্ট কারেন্টের উপর বড় প্রভাব ফেলে এবং একে ট্রান্সফর্মারের ইম্পিডেন্স এর কারণে সৃষ্ট ভোল্টেজ ড্রপের পার্সেন্টেজ আকারে প্রকাশ করা হয়।
৬. শীতলীকরণ পদ্ধতি: ফুল লোডে ট্রান্সফর্মারের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ট্রান্সফর্মারে বিভিন্ন ধরনের শীতলীকরণ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় যেমন ONAN, ONAF, OFAN, OFAF ইত্যাদি।
৭. তাপমাত্রা বৃদ্ধি: সর্বোচ্চ কত তাপমাত্রায় ট্রান্সফর্মার নিরাপদে পরিচালিত করা যাবে এবং লোড বৃদ্ধির সাথে সাথে ট্রান্সফর্মারের তাপমাত্রা কি পরিমাণ বৃদ্ধি পায় তাকে টেম্পারেচার রাইজ বলে।
৮. ইন্সুলেশন লেভেল: ট্রান্সফর্মারে ব্যবহৃত ইন্সুলেশন সমহু সর্বোচ্চ কত ভোল্টেজ পর্যন্ত সহ্য করতে পারে তাই ইন্সুলেশন লেভেল।
৯. ট্যাপ চেঞ্জার এর তথ্য: ট্রান্সফর্মার এ কোন ধরনের ট্যাপ চেঞ্জার ব্যবহার করা হয়েছে তা নেমপ্লেটে উল্লেখ থাকে। ব্যবহৃত ট্যাপ চেঞ্জার পদ্ধতি গুলি হলো অন লোড ট্যাপ চেঞ্জার এবং অফ লোড ট্যাপ চেঞ্জার।
১০. প্রস্তুতকারকের তথ্য: যে প্রতিষ্ঠান ট্রান্সফর্মার তৈরি করেছে তার তথ্যও ট্রান্সফর্মারের নেমপ্লেটে উল্লেখ থাকে।
১১. সিরিয়াল নম্বর: প্রস্তুতকৃত প্রতিটি ট্রান্সফর্মারেরই একটি স্বতন্ত্র সিরিয়াল নম্বর থাকে যা ভবিষ্যতে ট্রান্সফর্মারেকে চিহ্নিত করতে, রক্ষণাবেক্ষণ করতে এবং ওয়ারেন্টি এর কাজে ব্যবহৃত হয়।
১২. আর্ন্তজাতিক স্ট্যান্ডার্ড: ট্রান্সফর্মার প্রস্তুতিতে বিভিন্ন ধরনের আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করা হয় যেমন IEC, IEEE ইত্যাদি।
১৪. ট্রান্সফর্মারের ওজন: নেমপ্লেটে ট্রান্সফর্মারের ওজন কত তাও উল্লেখ থাকে।
১৫. ফেজ এর ধরন: ট্রান্সফর্মার সিঙ্গেল ফেজ নাকি থ্রি ফেজ তাও উল্লেখ থাকে।
১৬. বিবিধ তথ্য: উপর উল্লেখিত তথ্য ছাড়াও বিশেষক্ষেত্রে আরো কিছু অতিরিক্ত তথ্য যেমন নয়েজ লেভেল, উচ্চতা, ফল্ট কারেন্টের স্থায়িত্ব ইত্যাদিও উল্লেখ থাকে।
উপসংহার:
ট্রান্সফর্মারের নেমপ্লেট ট্রান্সফর্মারের সক্ষমতা, সীমাবদ্ধতা এবং রক্ষণাবেক্ষণ এর সর্ম্পকে গুরুত্বপুর্ন তথ্য প্রদান করে। এটা ট্রান্সফর্মারের নিরাপদ অপারেশন নিশ্চিত করে এবং দুর্ঘটনা রোধ করে।