বিদুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে জেনারেটরের ফিল্ড উইন্ডিং এ ডিসি সরবরাহ প্রদানের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় চুম্বক ক্ষেত্র তৈরির প্রক্রিয়াকে জেনারেটর এক্সাইটেশন বলে। জেনারেটরের মাধ্যমে তড়িৎ চুম্বকীয় আবেশ প্রক্রিয়ায় যান্ত্রিক শক্তিকে বিদুৎ শক্তিতে রূপান্তরের ক্ষেত্রে এই চুম্বক ক্ষেত্র অত্যাবশ্যকীয়।
জেনারেটর এক্সাইটেশনের ধরন: জেনারেটনে দুই ধরনের এক্সাইটেশন ব্যবহৃত হয়, যথা: ১. স্থির এক্সাইটেশন (Static Excitation): আলাদা ডিসি সরবরাহের মাধ্যমে এক্সাইটেশন প্রদান করা হয়। ২. ঘূর্ণায়মান এক্সাইটেশন (Rotational Excitation): ছোট একটি ডিসি জেনারেটরকে মূল জেনারেটরের একই শ্যাফটের সাথে সংযুক্ত করে মূল জেনারেটরে ডিসি সরবরাহ প্রদান করা হয়।
মূল কথা,
এক্সাইটেশনের মাধ্যমে জেনারেটরের আউটপুট ভোল্টেজকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
এটা সিস্টেমের রিয়্যাকটিভ পাওয়ার এবং পাওয়ার ফ্যাক্টরকে প্রভাবিত করে।
এক্সাইটেশন সয়ংক্রিয় বা ম্যানুয়াল এই দুই ধরনের হতে পরে।
ট্রান্সফরমারের বডির তৈরির ম্যাটেরিয়াল পছন্দের ক্ষেত্রে ম্যাটেরিয়ালের যান্ত্রিক শক্তি, মরিচারোধী গুণ এবং বাহ্যিক প্রভাব হতে সুরক্ষার বিষয় বিশেষ বিবেচনায় রাখা হয়। ট্রান্সফরমারের বডি তৈরিতে বহুল ব্যবহৃত ম্যাটেরিয়াল হলো মাইল্ড স্টিল (Mild Steel) এবং মরিচারোধী ইস্পাত।
ট্রান্সফরমারের কোর তৈরিতে উচ্চ চুম্বকীয় ভেদ্যোতা (Permeability) সম্পন্ন ল্যামিনেটেড সিলিকন স্টিল এর পাতলা পাত ব্যবহার করা হয়। এতে ট্রান্সফরমারের কোর লস হ্রাস পায়।
কোর ম্যাটেরিয়াল তৈরিতে Cold Rolled Grain Orientation (CGRO) নামে বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় এবং এই প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন স্টীলকে CGRO স্টিল বলে।
মূল কথা,
ট্রান্সফরমার বডি তৈরিতে মাইল্ড স্টিল বা মরিচারোধী ইস্পাত ব্যবহার করা হয়।
কোর তৈরিতে ল্যামিনেটেড সিলিকন স্টিল ব্যবহার করা হয়।
সিঙ্গেল ফেজ ইন্ডাকশন মোটর স্থির চুম্বক ক্ষেত্র তৈরি করার কারণে নিজে নিজে চালু হতে পারে না। একটি মোটরকে চালু হওয়ার জন্য ঘুরন্ত চুম্বক ক্ষেত্র প্রয়োজন যার মাধ্যমে রোটরে স্টার্টিং টর্ক আবিষ্ট হয়ে। সিঙ্গেল ফেজ ইন্ডাকশন মোটরে ধনাত্মক অর্ধ সাইকেলে যে টর্ক উৎপন্ন হয়, ঋণাত্মক অর্ধ সাইকেলে ঠিক তার বিপরীতমুখী টর্ক উৎপন্ন হয়। ফলে এই দুই বিপরীতমুখী টর্ক একে অপরকে নিঃশেষ করে দেয় এবং রোটর না ঘুরে সামনে পিছনে কাপতে থাকে।
মূল কথা,
সিঙ্গেল ফেজ ইন্ডাকশন মোটর স্থির চুম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে।
ঘূর্ণন শুরুর জন্য ঘুরন্ত চুম্বক ক্ষেত্র দরকার হয়।
ঘূর্ণন শুরু জন্য বিভিন্ন স্টার্টিং পদ্ধতি যেমন স্টার্টিং উইন্ডিং, স্টার্টিং ক্যাপাসিটির ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।
Home » EEE Fundamentals » ট্রান্সফরমারের লসসমূহ । প্রকারভে, সূত্র এবং কমানোর উপায়: বিস্তারিত
Table of Contents
ভূমিকা:
ট্রান্সফরমার পরিচালনার ক্ষেত্রে পাওয়ার লস একটি অনিবার্য বিষয় যা ট্রান্সফরমারের দক্ষতা ও স্থায়িত্বের উপর সরাসরি প্রভাব বিস্তার করে। ট্রান্সফরমারকে উচ্চ দক্ষতায় পরিচালিত হওয়ার জন্য তৈরি করা হলেও বৈদ্যুতিক পাওয়ার এর একটা অংশ ট্রান্সফরমার কর্তৃক পাওয়ার ট্রান্সফরমেশন এর সময় হারিয়ে যায়। এই হারিয়ে যাওয়ায় পাওয়ারই ট্রান্সফরমারের লস।
এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন ধরনের ট্রান্সফরমার লস, তাদের কারণ, গাণিতিক সূত্র এবং লস কমানোর উপায় সম্পর্কে জানতে পারবো।
ট্রান্সফরমার লসের প্রকারভেদ:
ট্রান্সফরমার লসকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়: ১. কোর লস এবং ২. কপার লস।
১. কোর লস:
ট্রান্সফরমারের কোরে পরিবর্তনশীল চুম্বক ক্ষেত্রের কারণে ট্রান্সফরমারে কোর লস হয়ে থাকে। ট্রান্সফরমারে এই লস এর পরিমাণ স্থির থাকে এবং লোডের প্রভাব হতে মুক্ত থাকে।
ট্রান্সফরমারে দুই ধরনের কোর লস হয়ে থাকে, যথা:
১. হিস্টেরেসিস লস:
ট্রান্সফরমারে পরিবর্তনশীল বিদুৎ সরবরাহ দেয়ার ফলে ট্রান্সফরমারের কোর ম্যাটেরিয়াল অনবরত ম্যাগনেটাইজড এবং ডি-ম্যাগনেটাইজড হয় ফলে। কোর ম্যাটেরিয়ালের অনু সমূহের মধ্যে ঘর্ষণ হয় এবং তাপ শক্তি রূপে বৈদ্যুতিক লস হয়। এই লসকেই হিস্টেরেসিস লস বলে।
এখানে, η = হিস্টেরেসিস ধ্রুবক, Bm = সর্বোচ্চ ফ্লাক্স ডেনসিটি, f = সরবরাহ ফ্রিকোয়েন্সি, V = কোরের আয়তন।
হিস্টেরেসিস লস কমানোর উপায়: ভালো মানের কোর ম্যাটেরিয়াল যেমন সিলিকন স্টিল ব্যবহার করে হিস্টেরেসিস লস কমানো সম্ভব।
২. এডি কারেন্ট লস:
যখন ট্রান্সফরমারে পরিবর্তনশীল বিদুৎ সরবরাহ প্রদান করা হয় তখন ট্রান্সফরমারের প্রাইমারী উইন্ডিং এ ম্যাগনেটিক ফ্লাক্স তৈরি হয় এবং তা ট্রান্সফরমারের সেকেন্ডারি উইন্ডিং দ্বারা আবিষ্ট হয়। যেহেতু ট্রান্সফরমারের কোর ম্যাগনেটিক মেটেরিয়াল দ্বারা তৈরী, তাই উইন্ডিং এ উৎপন্ন ম্যাগনেটিক ফ্লাক্স এর কিছু অংশ করেও আবিষ্ট হয় এবং কোরে একটি সার্কুলেটিং কারেন্ট প্রবাহিত হয়। কোরে প্রবাহিত সার্কুলেটিং কারেন্টের জন্য ট্রান্সফরমার কোরে যে লস হয় তাকে এডি কারেন্ট লস বলে।
এখানে, Bm = সর্বোচ্চ ফ্লাক্স ডেনসিটি, f = সরবরাহ ফ্রিকোয়েন্সি, V = কোরের আয়তন, Ke= এডি কারেন্ট লস ধ্রুবক, t = কোর পদার্থের পুরুত্ব।
এডি কারেন্ট লস কমানোর উপায়: সলিড কোর ব্যবহারের পরিবর্তে ল্যামিনেশন যুক্ত পাতলা ইস্পাতের পাত দিয়ে তৈরি কোর ব্যবহার করে এডি কারেন্ট লস কমানো যায়।
কপার লস:
ট্রান্সফরমারের উইন্ডিং এর অভ্যন্তরীণ রেজিস্ট্যান্স এর কারণে ট্রান্সফরমারের ভিতর দিয়ে কারেন্ট প্রবাহিত হওয়ার সময় যে I2*R লস হয় তাকে ট্রান্সফরমারের কপার লস বলে। কপার লস ট্রান্সফরমারের লোড পরিবর্তনের সাথে পরিবর্তন হয়।
কপার লসের গাণিতিক সূত্র: কপার লস, Pcu = I2*R
এখানে, I = লোড কারেন্ট এবং R = ট্রান্সফরমারের সমতুল্য রেজিস্ট্যান্স।
কপার লস কমানোর উপায়: ১. উইন্ডিং এ উচ্চ পরিবাহিতা সম্পন্ন পরিবাহীর ব্যবহার, ২. সঠিক শীতলীকরণ পদ্ধতি ব্যবহার এর মাধ্যমে লোড বৃদ্ধির কারণে উইন্ডিং এর রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ।
ট্রান্সফরমারের কোর লস এবং কপার লস ছাড়াও আরো দুই ধরনের লস হয়, যথা: ১. স্ট্রে লস এবং ২. ডাই-ইলেকট্রিক লস।
১. স্ট্রে লস:
ট্রান্সফরমারের ধাবত অংশ যেমন মেইন ট্যাংক, সাপোর্ট ইত্যাদির এডি কারেন্ট প্রবাহের ফলে ট্রান্সফরমারে স্ট্রে লস হয়।
২. ডাই-ইলেকট্রিক লস:
ট্রান্সফরমারের ইন্সুলেশন ম্যাটেরিয়ালে পরিবর্তনশীল চুম্বক ক্ষেত্রের প্রভাবে ডাই-ইলেকট্রিক লস হয়।
ট্রান্সফরমারে স্ট্রে লস এবং ডাই-ইলেকট্রিক লসের পরিমাণ খুবই সামান্য হলেও সঠিক ম্যাটেরিয়াল এবং ডিজাইন পছন্দ না করা হলে এই লসের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেতে পারে।
বিবেচ্য বিষয়: ১. যখন ট্রান্সফরমারের পরিবর্তনশীল লস অর্থাৎ কপার লস স্থির লস অর্থাৎ কোর লসের সমান হয় তখন ট্রান্সফরমার সর্বোচ্চ দক্ষতায় পরিচালিত হয়। ২. লোড এবং লোডের পাওয়ার ফ্যাক্টর ট্রান্সফরমারের লস এবং দক্ষতাকে সরাসরি প্রভাবিত করে।
উপসংহার:
ট্রান্সফরমারের লস সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকলে লস হ্রাসের মাধ্যমে ট্রান্সফরমারকে দক্ষতার সহিত পরিচালনা করা সম্ভব হবে। কোর লস এবং কপার লস কমানোর মাধ্যমে ট্রান্সফরমারের দক্ষ, নির্ভরযোগ্য এবং মৃতব্যায়ী অপারেশন নিশ্চিত হবে এবং বিদুৎ শক্তি সাশ্রয় করা যাবে।
Home » EEE Fundamentals » ট্রান্সফরমারের ওপেন সার্কিট, শর্ট সার্কিট এবং ব্যাক টু ব্যাক টেস্ট
Table of Contents
ভূমিকা:
বিভিন্ন পরিস্থিতে ট্রান্সফরমারের দক্ষতা, লস এবং সক্ষমতা নির্ণয়ে ট্রান্সফরমার টেস্টিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ট্রান্সফরমারে যে টেস্ট গুলি করা হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো:
ওপেন সার্কিট টেস্ট,
শর্ট সার্কিট টেস্ট এবং
ব্যাক টু ব্যাক টেস্ট।
এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা ট্রান্সফরমারের ওপেন সার্কিট, শর্ট সার্কিট এবং ব্যাক টু ব্যাক টেস্ট সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
ওপেন সার্কিট টেস্ট:
ট্রান্সফরমারের কোর লস এবং নো লোড প্যারামিটারসমূহ নির্ণয় করার জন্য নো-লোড টেস্ট করা হয়।
উদ্দেশ্য: ১. ট্রান্সফরমারের কোর লস (এডি কারেন্ট লস এবং হিস্টেরিসিস লস) নির্ণয় করা। ২. নো লোড প্যারামিটার তথা ম্যাগনেটাইজিং রিয়াক্ট্যান্স (Xm) এবং কোর লস রেজিস্ট্যান্স (R0) নির্ণয় করা।
পদ্ধতি:
১. প্রাইমারী উইন্ডিং (হাই ভোল্টেজ) খোলা রাখা হয় অর্থাৎ কোনো লোড যুক্ত থাকে না।। ২. সেকেন্ডারি উইন্ডিং (লো ভোল্টেজ) এ রেটেড ভোল্টেজ সরবরাহ করা হয়। ৩. নো লোড অবস্থায় ট্রান্সফরমারের ব্যবহৃত পাওয়ার (P0), নো লোড ভোল্টেজ (V1) এবং নো লোড কারেন্ট (I0) পরিমাপ করা হয়। পরবর্তীতে এই পরিমাপকৃত তথ্য হতে ম্যাগনেটাইজিং রিয়াক্ট্যান্স (Xm) এবং কোর লস রেজিস্ট্যান্স (Rc) নির্ণয় করা হয়।
সুবিধা: ১. পরীক্ষা পদ্ধতি সহজ। ২. লোডিং ছাড়াই ট্রান্সফরমারের কোর লস নির্ণয় করা যায়।
শর্ট সার্কিট টেস্ট:
ট্রান্সফরমারের পরিবর্তনশীল লস এবং সমতুল্য সার্কিটের প্যারামিটারসমূহ নির্ণয়ের জন্য শর্ট সার্কিট টেস্ট করা হয়।
উদ্দেশ্য: ১. ফুল লোড অবস্থায় ট্রান্সফরমারের কপার লস নির্ণয় করা। ২. ট্রান্সফরমারের সমতুল্য রেজিস্ট্যান্স (Req) এবং সমতুল্য রিয়াক্ট্যান্স (Xeq) নির্ণয় করা।
পরীক্ষা পদ্ধতি:
১. ট্রান্সফরমারের সেকেন্ডারি (লো ভোল্টেজ) প্রান্তকে একটি অ্যামিটারের সাহায্যে শর্ট করা হয়। ২. ট্রান্সফরমারের প্রাইমারী প্রান্তে রেটেড ভোল্টেজের ৫-১০% ভোল্টেজ সরবরাহ করা হয় যাতে শর্ট কৃত ট্রান্সফরমারের সেকেন্ডারি প্রান্ত দিয়ে রেটেড কারেন্ট প্রবাহিত হয়। ৩. পরীক্ষা চলাকালে নির্মক্ত রিডিং নেয়া হয়
প্রাইমারী ভোল্টেজ (V1),
শর্ট সার্কিট কারেন্ট (Is) এবং
ইনপুট পাওয়ার বা শর্ট সার্কিট পাওয়ার (Psc)।
ক্যালকুলেশন:
১. কপার লস, Pcu = শর্ট সার্কিট ইনপুট পাওয়ার (শর্ট সার্কিট টেস্টে কোর লসের পরিমান খুবই কম থাকায় তা অগ্রাহ্য করা হয়)
সুবিদা: ১. ফুল লোড প্রয়োগ না করেই ফুল লোডের কপার লস নির্ণয় করা যায়। ২. ট্রান্সফরমারের সমতুল্য সার্কিটের উপাদান সমূহ সহজে নির্ণয় করা যায়।
ব্যাক টু ব্যাক টেস্ট:
ওপেন সার্কিট টেস্ট এবং শর্ট সার্কিট টেস্ট হতে ট্রান্সফরমারের কোর লস, কপার লস পরিমাপ করা গেলেও ফুল লোডে ট্রান্সফরমারের তাপীয় দক্ষতা কেমন হয় তো জানা যায় না। ব্যাক টু ব্যাক টেস্ট এর মাধ্যমে একটু ট্রান্সফরমার ফুল লোডে কেমন আচরণ করে এবং লোড বৃদ্ধির সাথে সাথে তাপমাত্রার পরিবর্তন বা বৃদ্ধি কেমন হয় তা জন্য যায়। এই টেস্টকে সাম্পনার টেস্টও (Sumpner’s Test) বলা হয়ে থাকে।
উদ্দেশ্য: ১. কোর এবং কপার লস উভয় পরিমাপ করা। ২. বাস্তব ব্যবহারিক ক্ষেত্রে ট্রান্সফরমারের দক্ষতা নির্ণয় এবং তাপমাত্রা এর পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করা।
পরীক্ষা পদ্ধতি:
১. পরীক্ষার জন্য সম্পূর্ণ একই ধরনের দুটি ট্রান্সফরমার ব্যবহার করা হয়। ২. ট্রান্সফরমার দুটির প্রাইমারী উইন্ডিংকে মেইন সাপ্লাইয়ের সাথে প্যারালাল এ সংযোগ করা হয়। ৩. ট্রান্সফরমার দুটির সেকেন্ডারি উইন্ডিংকে একে অপরের সাথে সিরিজে বিপরীতমুখী ভাবে লুপ আকারে সংযোগ করা হয়। ৪. ট্রান্সফরমারের সেকেন্ডারি প্রান্ত অন্য আরেকটি উৎস হতে অক্সিলারি সাপ্লাই দেয়া হয়। ৫. ওয়াট মিটার W1 হতে দুই ট্রান্সফরমারের মোট কোর লস পাওয়া যায় এবং ওয়াট মিটার W2 হতে দুই ট্রান্সফরমারের মোট কপার লস পাওয়া যায়। সুতারং, প্রতিটি ট্রান্সফরমারের মোট লস, W = (W1 + W2)/2
তাপমাত্রা বৃদ্ধি নির্ণয়: পরিক্ষা চলাকালে ট্রান্সফরমারের তেলের তাপমাত্রা নির্দিষ্ট সময় পর পর পরিমাপ করা হয়। উভয় ট্রান্সফরমারকে ব্যাক টু ব্যাক অবস্থায় দির্ঘ সময় পরিচালনারর ফলে ট্রান্সফরমারের অয়েলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং ফুল লোডে ট্রান্সফরমারের তাপমাত্রা কেমন হবে তা সম্পরকে ধারনা পাওয়া যায়।
সুবিদা: ১. কোনো ধরনের লোড সংযোগ ছাড়াই ফুল লোডে ট্রান্সফরমারের আচরন সম্পর্কে জানা যায়। ২. সুক্ষভাবে দক্ষতা এবং তাপমত্রার প্রভাব নির্ণয় করা যায়।
উপসংহার:
ট্রান্সফরমারের দক্ষতা, নির্ভরযোগ্যতা এবং সক্ষমতা নির্ণয়ে ট্রান্সফরমার টেস্টিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। ওপেন সার্কিট টেস্ট এবং শোর্ট সার্কিট টেস্ট হতে ট্রান্সফরমারের লস সমূহ এবং সমতুল্য সারকিটের প্যারামিটার সমূহ জানা যায়। অন্যদিকে ব্যাক টু ব্যাক টেস্ট হবে ফুল লোডে ট্রান্সফরমার কেমন আচরন করবে তা জানা যায়।
ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার সিস্টেমে ভোল্টেজ রেগুলেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বিশেষ করে ট্রান্সফর্মার ডিজাইন এবং এর দক্ষতা পর্যালোচনার ক্ষেত্রে ভোল্টেজ রেগুলেশন অন্যতম বিবেচ্য বিষয়। পরিবর্তনশীল লোডে ট্রান্সফর্মারের সেকেন্ডারি প্রান্তের ভোল্টেজ স্থির রাখার ক্ষমতাকেই ভোল্টেজ রেগুলেশন এর মাধ্যমে পরিমাপ করা হয়।
এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা ভোল্টেজ রেগুলেশন কি, ভোল্টেজ রেগুলেশন এর ফর্মুলা, কারণ, ভোল্টেজ রেগুলেশন এর ধরন এবং ভোল্টেজ রেগুলেশন দুর করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
ভোল্টেজ রেগুলেশন:
নির্দিষ্ট নো লোড ভোল্টেজ এর জন্য পরিবর্তনশীল লোডে ফুল লোড ভোল্টেজ শতকরা কি পরিমাণ পরিবর্তন হয় তাকে ভোল্টেজ রেগুলেশন রেগুলেশন বলে।
ভোল্টেজ রেগুলেশন এর মাধ্যমে নো লোড ভোল্টেজ এবং ফুল লোড ভোল্টেজ এর পার্থক্যকে পরিমাপ করা হয় এবং একে ফুল লোড ভোল্টেজ এর শতকরা হারে প্রকাশ করা হয়।
১. ধনাত্মক ভোল্টেজ রেগুলেশন: যখন ফুল লোড ভোল্টেজ এর মান নো লোড ভোল্টেজ থেকে কম হয় তখন ধনাত্মক ভোল্টেজ রেগুলেশন ঘটে। ইন্ডাকটিভ বা রেজিস্টিভ লোডের ক্ষেত্রে ধনাত্মক ভোল্টেজ রেগুলেশন তৈরি হয়।
২. ঋনাত্মক ভোল্টেজে রেগুলেশন: যখন ফুল লোড ভোল্টেজ এর মান নো লোড ভোল্টেজ থেকে বেশি হয় তখন ঋণাত্মক ভোল্টেজ রেগুলেশন ঘটে। ক্যাপাসিটিভ লোডের ক্ষেত্রে ধনাত্মক ভোল্টেজ রেগুলেশন তৈরি হয়।
ভোল্টেজ রেগুলেশন এর তাৎপর্য:
১. লোডের দক্ষতা নির্ণয়: ভোল্টেজ রেগুলেশন কম হলে লোডে সব সময় নির্ধারিত সীমার মধ্যে ভোল্টেজ সরবরাহ করা যাবে ফলে লোড দক্ষ ভাবে পরিচালিত হবে।
২. নির্ভরযোগ্যতা: সেনসিটিভ যন্ত্রপাতিতে বিদুৎ সরবরাহের জন্য নির্ভরযোগ্য উৎস প্রয়োজন যার ভোল্টেজ রেগুলেশন অবশ্যই কম হবে।
৩. নিরাপত্তা ও সুরক্ষা: ওভার ভোল্টেজ এবং আন্ডার ভোল্টেজ থেকে সুরক্ষার ক্ষেত্রে ভোল্টেজ রেগুলেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ভোল্টেজ রেগুলেশনের প্রভাবকসমূহ:
১. লোডের পাওয়ার ফ্যাক্টর: ভোল্টেজ রেগুলেশনে বিভিন্ন ধরনের পাওয়ার ফ্যাক্টর আলাদা আলাদা ভাবে প্রভাব বিস্তার করে, যেমন:
ল্যাগিং পাওয়ার ফ্যাক্টর: পাওয়ার ফ্যাক্টর এর মান ল্যাগিং হলে ভোল্টেজ ড্রপের মান বৃদ্ধি পায়। ফলে ভোল্টেজ রেগুলেশনও বৃদ্ধি পায়।
লিডিং পাওয়ার ফ্যাক্টর: পাওয়ার ফ্যাক্টর এর লিডিং হলে লাইনে ভোল্টেজ ড্রপ হওয়ার পরিবর্তে ভোল্টেজের মান বৃদ্ধি পায় ফলে ঋণাত্মক ভোল্টেজ রেগুলেশন ঘটে।
ইউনিটি পাওয়ার ফ্যাক্টর: ইউনিটি পাওয়ার ফ্যাক্টর এর ক্ষেত্রে ভোল্টেজ ড্রপের মান সর্বনিম্ন হয় ফলে ভোল্টেজ রেগুলেশনও সর্বনিম্ন হয়।
২. ট্রান্সফরমারের ইম্পিডেন্স: ট্রান্সফরমারের সমতুল্য ইম্পিডেন্স ভোল্টেজ রেগুলেশনকে সরাসরি প্রভাবিত করে। ইম্পিডেন্স যত বেশি হবে ভোল্টেজ রেগুলেশনও তত বৃদ্ধি পাবে।
৩. লোড কারেন্ট: লোড কারেন্টের মান বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে ভোল্টেজ ড্রপ বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোল্টেজ রেগুলেশনের মানও বৃদ্ধি পায়।
ভোল্টেজ রেগুলেশন কমানোর উপায়:
১. নিম্ন ইম্পিড্যান্স বিশিষ্ট ট্রান্সফর্মারের ব্যবহার: ট্রান্সফর্মারের ইম্পিড্যান্স কম হলে ভোল্টেজ ড্রপ কম হবে ফলে ভোল্টেজ রেগুলেশন মানও কম হবে।
২. লোডের পাওয়ার ফ্যাক্টর বৃদ্ধি: লোডের পাওয়ার ফ্যাক্টর বৃদ্ধি পেলে ভোল্টেজ ড্রপ হ্রাস পায় এবং ভোল্টেজ রেগুলেশনও হ্রাস পায়। লোডে ক্যাপাসিটর ব্যাংক বা সিনক্রনাস কন্ডেনসার ব্যবহার করে লোডের পাওয়ার ফ্যাক্টর বৃদ্ধি করা যায়।
৩. ট্রান্সফরমারে ট্যাপ চেঞ্জার এর ব্যবহার: ট্যাপ চেঞ্জার ব্যবহার করে লোড পরিবর্তনের সাথে সাথে ট্রান্সফরমারের সেকেন্ডারি প্রান্তের ভোল্টেজ পরিবর্তন করা যায়। ফলে ভোল্টেজ রেগুলেশন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৪. ভোল্টেজে রেগুলেটর ব্যবহার: ভোল্টেজ রেগুলেটর ব্যবহার করে লোডে সব সময় নির্দিষ্ট ভোল্টেজ সরবরাহ করা সম্ভব হয়। ফলে ভোল্টেজ রেগুলেশন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৫. ভালো মানের পরিবাহীর ব্যবহার: কম রেজিস্ট্যান্স যুক্ত তার ব্যবহার করলে ভোল্টেজ ড্রপ কম হবে এবং ভোল্টেজ রেগুলেশন হ্রাস পাবে।
উপসংহার:
বৈদ্যুতিক সিস্টেমে দক্ষ, নির্ভরযোগ্য এবং নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রে ভোল্টেজ রেগুলেশন এর মান কম থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উপরে উল্লেখিত কৌশন এবং উপায় সমূহ অবলম্বন করে সহজেই ভোল্টেজ রেগুলেশন এর মান হ্রাস করা সম্ভব।