Table of Contents
ভুমিকা:
বিদুৎ বিভ্রাট আমাদের সাভাবিক কর্মকাণ্ডে ব্যাঘাত ঘটায় এবং জনজীবনে নানা রকমের সমস্যা তৈরি করে। বিদুৎ বিভ্রাটের বহুল আলোচিত দুইটি ধরন হলো ১. ব্ল্যাকআউট এবং ২. ব্রাউনআউট। শুনতে একইরকম মনে হলেও এদের কারণ, প্রভাব এবং স্থিতিকালের সুনির্দিষ্ট কিছু পার্থক্য রয়েছে।
এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা ব্ল্যাকআউট এবং ব্রাউনআউট এর কারণ, প্রভাব, পার্থক্য এবং ব্ল্যাকআউট ও ব্রাউনআউট ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
ব্ল্যাকআউট:
কোনো নির্দিষ্ট বৃহৎ এলাকা বা দেশ সম্পূর্ণ রুপে বিদুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে তাকে ব্ল্যাকআউট বলে। ব্ল্যাকআউট এর স্থায়িত্ব কয়েক মিনিট হতে কয়েকদিন পর্যন্ত হতে পারে।
প্রধান বৈশিষ্ট্য:
স্থায়িত্ব: কয়েক মিনিট হতে কয়েকদিন।
ব্যাপ্তি: একটি ক্ষুদ্র এলাকা থেকে শুরু করে, একটি বৃহৎ শহর এমনকি পুরো দেশও আক্রান্ত হতে পারে।
কারণ: বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির মারাত্বক ক্ষতির কারনে গ্রিড বিপর্যয়, ওভারলোড, প্রাকৃতিক দূর্যোগ এবং সাইবার আক্রমন।
প্রভাব:
১. পরিপূর্ণ বিদ্যুৎ বিভ্রাট: সম্পূর্ণ এলাকা পুরোপুরি বিদুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
২. অর্থনৈতিক ক্ষতি: দীর্ঘসময় বিদুৎ বিচ্ছিন্ন থাকায় অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ব্যাহত হয় এবং আর্থিক ক্ষতি সাধিত হয়।৩. নিরাপত্তা ঝুঁকি: ট্র্যাফিক লাইট, নিরপত্তা ব্যবস্থা এবং বিভিন্ন জরুরী সেবা বিঘ্নিত হয়।
উদাহরণ:
২০০৩ সালের যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ব্ল্যাকআউট এর কারণে প্রায় ৫০ মিলিয়ন লোক বিদুৎ বিভ্রাটের সম্মুখীন হয়েছিল।
ব্ল্যাকআউট মোকাবেলায় করণীয়:
১. বৈদ্যুতিক উৎপাদন, সঞ্চালন এবং বিতরণ ব্যবস্থায় নিয়মিত পর্যবেক্ষণ রক্ষণাবেক্ষণ এবং উন্নয়ন সাধন।
২. বিদুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন এবং বিতরণ ব্যবস্থার মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি।
৩. গ্রিড কোড অনুসরণ করা।
৩. বিকল্প ব্যবস্থা যেমন জেনারেটর ইত্যাদির ব্যবস্থা করা।
ব্রাউনআউট:
সাময়িকভাবে বিদ্যুতের সরবরাহ ভোল্টেজ কমে যাওয়াকে ব্রাউনআউট বলে। ব্রাউনআউটের সময় ব্ল্যাকআউট এর মত সম্পূর্ণরূপে বিদুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে না।
প্রধান বৈশিষ্ট্য:
স্থায়িত্ব: সাধারনত স্বল্প সময়ের জন্য ঘটে এবং তা কয়েক সেকেন্ড হতে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
ব্যাপ্তি: বৈদ্যুতিক গ্রিড ব্যবস্থাপনার উপর ভিত্তি করে কোনো ছোট এলাকা থেকে শুরু করে একটি বৃহৎ অঞ্চল পর্যন্ত আক্রান্ত হতে পারে।
কারণ: বিদুৎ সরবরাহ সংস্থা কর্তৃক লোড হ্রাসের জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে ভোল্টেজে কমানো হতে পরে। বৈদ্যুতিক সুইচ গিয়ার এবং যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণেও ভোল্টেজ কমে যেতে পারে। এছাড়াও ওভারলোড এর কারণেও ভোল্টেজ হ্রাস পায়।
প্রভাব:
১. বৈদ্যুতিক বাতি ফ্লিকার করে বা মিটমিট করে জ্বলে।
২. বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি যেমন মোটর, লিফট ইত্যাদির কর্মদক্ষতা হ্রাস পায়।
৩. ভোল্টেজ সংবেদনশীল যন্ত্রপাতি যেমন কম্পিউটার, রেফ্রিজারেটর, বিভিন্ন মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট ইত্যাদি সঠিকভাবে কাজ করতে ব্যার্থ হয় এমনকি স্থায়ীভাবে বিকল হয়ে যেতে পারে।
উদাহরণ:
তীব্র গরমের সময় প্রচুর পরিমাণে এয়ার কন্ডিশনার চালানোর ফলে বৈদ্যুতিক সিস্টেম ওভার লোড হয় এবং ভোল্টেজ হ্রাস পায়।
ব্রাউনআউট মোকাবেলায় করণীয়:
১. লোডের চাহিদা অনুযায়ী বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
২. দিনের বিভিন্ন সময়ের মধ্যে লোডের সুষম বণ্টন।
৩. ভোল্টেজে স্টেবিলাইজার এর ব্যবহার।
ব্ল্যাকআউট এবং ব্রাউনয়াউটের মধ্যে পার্থক্য:
পার্থক্যর বিষয় | ব্ল্যাকআউট | ব্রাউনআউট |
---|---|---|
সংজ্ঞা | স্থায়ী বিদ্যুৎ বিভ্রাট। | অস্থায়ী ভোল্টেজ কমে যাওয়া। |
স্থায়িত্ব | কয়েক মিনিট হতে কয়েক দিন। | কয়েক সেকেন্ড হতে কয়েক ঘনটা। |
বিদ্যুতের উপস্থিতি | কোনো বিদ্যুৎ থাকে না। | নিম্ন ভোল্টেজে আংশিক বিদ্যুৎ থাকে। |
কারন | গ্রিড বিপর্যয়, যন্ত্রপাতি বিকল হওয়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সাইবার আক্রমণ ইত্যাদি। | ওভার লোড, গ্রিড ব্যালেন্সিং, যন্ত্রপাতির ত্রুটি ইত্যাদি। |
প্রভাব | সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক বিকল হয়ে পরে। | বৈদ্যুতিক বাতি মিটিমিটি করে জ্বলে, ভিবিন্ন যন্ত্রপাতি কম দক্ষতায় এবং কম সক্ষমতায় চলে। |
নিরপত্যা ঝুঁকি | উচ্চ, যেমন: সকল জরুরি সেবা ব্যহত হয়। | মাঝারি, যেমন: যন্ত্রপাতির ক্ষতি। |
উপসংহার:
ব্ল্যাকআউট এবং ব্রাউনআউট উভয়ই বিদুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটালেও তাদের কারণ, প্রভাব এবং ব্যবস্থাপনায় সুনির্দিষ্ট পার্থক্য রয়েছে। এই পার্থক্যগুলো সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকলে ব্ল্যাকআউট এবং ব্রাউনআউটকে প্রতিরোধ এবং দক্ষতার সাথে মোকাবেলা করা যাবে এর এর সাথে সংশ্লিষ্ট ক্ষয়ক্ষতি কমানো যাবে।