ট্রান্সফর্মারের নেমপ্লেটে কি কি তথ্য থাকে? বিস্তারিত

ভূমিকা:
ট্রান্সফর্মারের নেমপ্লেট ট্রান্সফর্মার সম্পর্কে বিভিন্ন গুরুতবপূর্ণ তথ্য প্রদান করে, যেমন: অপারেশনাল প্যারামিটার, রেটিং এবং স্পেসিফিকেশন। ট্রান্সফর্মার স্থাপন, পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এই তথ্যগুলো অত্যাবশ্যকীয়। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা ট্রান্সফর্মারের নেমপ্লেটে যেসব তথ্য থাকে যা নিয়ে বিস্তারিত জানতে পারবো।

Power Transformer
“Power transformer” by Paul Chernikhowsky is licensed under CC BY 2.0

ট্রান্সফর্মারের নেমপ্লেটে যেসব তথ্য থাকে:
১. রেটেড পাওয়ার: ট্রান্সফর্মার সর্ব্বোচ কি পরিমান পাওয়ার নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে লোডে সরবরাহ করতে পারে তাকে ট্রান্সফর্মারের রেটেড পাওয়ার বলে। সাধারণত kVA বা MVA তে ট্রান্সফর্মারের রেটেড পাওয়ার প্রকাশ করা হয়।

২. প্রাইমারী এবং সেকেন্ডারি ভোল্টেজ রেটিং: ট্রান্সফর্মারের প্রাইমারী বা ইনপুট ভোল্টেজ এবং সেকেন্ডারি বা আউটপুট ভোল্টেজ নেমপ্লেটে উল্লেখ থাকে। কোনো ট্রান্সফর্মার এর নেমপ্লেটে 33kv/11kV লেখা থাকার অর্থ হচ্ছে ট্রান্সফর্মারটির প্রাইমারী ভোল্টেজ 33kV এবং সেকেন্ডারি ভোল্টেজ 11kV।

৩. ফ্রিকোয়েন্সি: ট্রান্সফর্মারটি যে ফ্রিকোয়েন্সিতে পরিচালনার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে সেই ফ্রিকোয়েন্সি হার্জ(Hz) এ উল্লেখ করা থাকে।

৪. ভেক্টর গ্রুপ: ভেক্টর গ্রুপের মাধ্যমে ট্রান্সফর্মারের উইন্ডিং সমূহের গঠন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। বহুল ব্যবহৃত দুইটি ভেক্টর গ্রুপ হলো Dyn1 এবং Dyn11.

৫. ইম্পিডেন্স ভোল্টেজ: পার্সেন্টেজ ইম্পিডেন্স ট্রান্সফর্মারের ফল্ট কারেন্টের উপর বড় প্রভাব ফেলে এবং একে ট্রান্সফর্মারের ইম্পিডেন্স এর কারণে সৃষ্ট ভোল্টেজ ড্রপের পার্সেন্টেজ আকারে প্রকাশ করা হয়।

৬. শীতলীকরণ পদ্ধতি: ফুল লোডে ট্রান্সফর্মারের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ট্রান্সফর্মারে বিভিন্ন ধরনের শীতলীকরণ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় যেমন ONAN, ONAF, OFAN, OFAF ইত্যাদি।

৭. তাপমাত্রা বৃদ্ধি: সর্বোচ্চ কত তাপমাত্রায় ট্রান্সফর্মার নিরাপদে পরিচালিত করা যাবে এবং লোড বৃদ্ধির সাথে সাথে ট্রান্সফর্মারের তাপমাত্রা কি পরিমাণ বৃদ্ধি পায় তাকে টেম্পারেচার রাইজ বলে।

৮. ইন্সুলেশন লেভেল: ট্রান্সফর্মারে ব্যবহৃত ইন্সুলেশন সমহু সর্বোচ্চ কত ভোল্টেজ পর্যন্ত সহ্য করতে পারে তাই ইন্সুলেশন লেভেল।

৯. ট্যাপ চেঞ্জার এর তথ্য: ট্রান্সফর্মার এ কোন ধরনের ট্যাপ চেঞ্জার ব্যবহার করা হয়েছে তা নেমপ্লেটে উল্লেখ থাকে। ব্যবহৃত ট্যাপ চেঞ্জার পদ্ধতি গুলি হলো অন লোড ট্যাপ চেঞ্জার এবং অফ লোড ট্যাপ চেঞ্জার।

১০. প্রস্তুতকারকের তথ্য: যে প্রতিষ্ঠান ট্রান্সফর্মার তৈরি করেছে তার তথ্যও ট্রান্সফর্মারের নেমপ্লেটে উল্লেখ থাকে।

১১. সিরিয়াল নম্বর: প্রস্তুতকৃত প্রতিটি ট্রান্সফর্মারেরই একটি স্বতন্ত্র সিরিয়াল নম্বর থাকে যা ভবিষ্যতে ট্রান্সফর্মারেকে চিহ্নিত করতে, রক্ষণাবেক্ষণ করতে এবং ওয়ারেন্টি এর কাজে ব্যবহৃত হয়।

১২. আর্ন্তজাতিক স্ট্যান্ডার্ড: ট্রান্সফর্মার প্রস্তুতিতে বিভিন্ন ধরনের আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করা হয় যেমন IEC, IEEE ইত্যাদি।

১৪. ট্রান্সফর্মারের ওজন: নেমপ্লেটে ট্রান্সফর্মারের ওজন কত তাও উল্লেখ থাকে।

১৫. ফেজ এর ধরন: ট্রান্সফর্মার সিঙ্গেল ফেজ নাকি থ্রি ফেজ তাও উল্লেখ থাকে।

১৬. বিবিধ তথ্য: উপর উল্লেখিত তথ্য ছাড়াও বিশেষক্ষেত্রে আরো কিছু অতিরিক্ত তথ্য যেমন নয়েজ লেভেল, উচ্চতা, ফল্ট কারেন্টের স্থায়িত্ব ইত্যাদিও উল্লেখ থাকে।

উপসংহার:
ট্রান্সফর্মারের নেমপ্লেট ট্রান্সফর্মারের সক্ষমতা, সীমাবদ্ধতা এবং রক্ষণাবেক্ষণ এর সর্ম্পকে গুরুত্বপুর্ন তথ্য প্রদান করে। এটা ট্রান্সফর্মারের নিরাপদ অপারেশন নিশ্চিত করে এবং দুর্ঘটনা রোধ করে।

বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মারের বিভিন্ন অংশের নাম এবং তাদের কাজ: বিস্তারিত

ভূমিকা:

বৈদ্যুতিক সিস্টেমের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন অংশ হচ্ছে ট্রান্সফরমার যা বৈদ্যুতিক নেটওয়ার্কের মধ্যে বিভিন্ন ভোল্টেজে বিদুৎ সরবরাহের কাজে ব্যবহৃত হয়। একটি ট্রান্সফর্মার বিভিন্ন অংশের সমন্বয়ে গঠিত হয়ে থাকে যার প্রতিটি অংশের আলাদা আলাদা কাজ রয়েছে। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মারের বিভিন্ন অংশ সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

একটি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মারের বিভিন্ন অংশগুলো হলো:
১. ট্রান্সফর্মার কোর:

গঠন: লেমিনেটেড সিলিকন স্টিল দিয়ে তৈরি করা হয় যাতে এডি কারেন্ট লস এবং হিস্টেরিসিস লস হয়।
উদ্দেশ্য: ট্রান্সফর্মার এর উইন্ডিং দ্বারা উৎপন্ন ফ্লাক্স প্রবাহের চুম্বকীয় পথ প্রদান করে। কোরের মাধ্যমে ফ্লাক্স ট্রান্সফর্মারের এক উইন্ডিং হতে অন্য উইন্ডিং এ আবিষ্ট হয়।

২. ট্রান্সফর্মার উইন্ডিং:

গঠন: ট্রান্সফর্মারের কোরের উপর যে তামা বা এলুমিনিয়ামের তারের কুণ্ডলী ব্যবহার করা হয় তাকে উইন্ডিং বলে। ট্রান্সফর্মারে দুই ধরনের উইন্ডিং থাকে, ১. প্রাইমারী উইন্ডিং এবং ২. সেকেন্ডারি উইন্ডিং। উইন্ডিং সাধারনত সিলিনড্রিক্যাল বা আয়তাকার আকারে তৈরি করা হয়।
উদ্দেশ্য: ভোল্টেজকে এক লেভেল থেকে অন্য লেভেলে পরিবর্তন করার জন্য প্রয়োজনীয় ফ্লাক্স তৈরিতে ট্রান্সফর্মারের উইন্ডিং ব্যবহৃত হয়।

৩. ট্রান্সফর্মার ট্যাংক:

গঠন: শক্তিশালী ইস্পাত দিয়ে ট্রান্সফর্মার ট্যাংক তৈরি করা হয় যাতে ট্রান্সফরমার বাহ্যিক আঘাত, বৈরী আবহাওয়া ইত্যাদিতেও টিকে থাকতে পারে।
উদ্দেশ্য: ট্রান্সফর্মার কোর এবং উইন্ডিংসমূহকে ঘিরে রেখে তাদের যান্ত্রিক সুরক্ষা প্রদান করে। বাহ্যিক আঘাত হতে ট্রান্সফর্মারের অভ্যন্তরের বিভিন্ন অংশকে রক্ষা করে এবং ট্রান্সফর্মার অয়েলের আধার হিসেবে কাজ করে।

৪. কনজারভেটর ট্যাংক:

গঠন: এটিও ট্রান্সফর্মার ট্যাংক এর ন্যায় শক্তিশালী ইস্পাত দিয়ে তৈরি করা হয়।
উদ্দেশ্য: তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে ট্রান্সফর্মারের মেইন ট্যাংকের অয়েল এর আয়তন বৃদ্ধি পেলে অয়েল মেইন ট্যাংক হতে কনজারভেটর ট্যাংকে প্রবেশ করে।

৫. ট্রান্সফর্মার অয়েল:

গঠন: উচ্চ ডাই-ইলেক্ট্রিক শক্তি সম্পন্ন খনিজ বা সিনথেটিক অয়েলকে ট্রান্সফর্মার অয়েল হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
উদ্যেশ্য: ট্রান্সফর্মার অয়েল ট্রান্সফর্মারের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অংশের মধ্যে বৈদ্যুতিক ইন্সুলেশন প্রদান করে এবং ট্রান্সফর্মার শীতলীকরণ করে।

৬. রেডিয়েটর:

গঠন: ট্রান্সফর্মারের মেইন ট্যাংকের সাথে ফাঁপা ডানার মতো ইস্পাতের তৈরি অংশই রেডিয়েটর।

উদ্দেশ্য: ট্রান্সফর্মার অয়েল হতে তাপ অপসারণের জন্য অধিক ক্ষেত্রফল প্রদান করে ট্রান্সফর্মার শীতল হতে সহায়তা করে। ট্রান্সফর্মারের মেইন ট্যাংকের গরম তেল রেডিয়েটর এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে শীতল হয় এবং পুনরায় মেইন ট্যাংকে প্রবেশ করে ট্রান্সফর্মার শীতল রাখে।

৭. বুশিং:

গঠন: উচ্চ বৈদ্যুতিক ইন্সুলেশন যুক্ত শক্তিশালী চিনামটি দিয়ে ট্রান্সফর্মারের বুশিং তৈরি করা হয়।
উদ্দেশ্য: ট্রান্সফর্মারের উইন্ডিং হতে টার্মিনাল বের করা এবং টার্মিনাল সমূহকে মেইন ট্যাংক হতে বৈদ্যুতিক ইন্সুলেশন প্রদান করা।

৮. ব্রেদার:

ব্রেদার এর সাহায্যে ট্রান্সফর্মার অয়েল এর আয়তন পরিবর্তনের সাথে সাথে বাইরে হতে ট্রান্সফর্মারে বাতাস প্রবেশ করে বা বাইরে বের হয়। বাতাস প্রবেশের সময় বাতাসের জলীয়বাষ্প শোষণের জন্য ব্রেদারে সিলিকা জেল ব্যবহার করা হয়।

৯. বুখলজ রিলে:

ট্রান্সফর্মারের মেইন ট্যাংক এবং কনজারভেটর ট্যাংকের মাঝে বুখলজ রিলে স্থাপন করা হয়। ফল্ট এর কারণে ট্রান্সফর্মারের অভ্যন্তরীণ অয়েল এর অস্বাভাবিক প্রবাহ এবং গ্যাসের উৎপত্তি সনাক্ত করতে বুখলজ রিলে ব্যবহার করা হয়। ট্রান্সফর্মার সুরক্ষায় এটি অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন একটু উপাদান।

১০. এক্সপ্লোশন ভেন্ট:

ফল্ট এর সময় ট্রান্সফর্মারের ভিতরের অতিরিক্ত চাপ বের করে দিয়ে ট্রান্সফর্মারকে রক্ষা করার জন্য এক্সপ্লোশন ভেণ্ট ব্যবহার করা হয়।

১১. কুলিং ফ্যান:

বৃহৎ আকারের ট্রান্সফর্মারকে শীতলীকরণ এর জন্য কুলিং ফ্যান ব্যবহার করা হয়।

১২. পরিমাপক যন্ত্র:

ট্রান্সফর্মারের তেলের পরিমাণ, অভ্যন্তরীণ চাপ এবং তাপমাত্রা পরিমাপের জন্য বিভিন্ন ধরনের পরিমাপক যন্ত্র ব্যবহার করা হয়।

১৩. ট্যাপ চেঞ্জার:

ট্রান্সফর্মারের সেকেন্ডারি প্রান্তের ভোল্টেজকে সমন্বয় করার জন্য ট্যাপ চেঞ্জার ব্যবহার করা হয়।

উপসংহার:

ট্রান্সফর্মারের দক্ষ পরিচালনার, রক্ষণাবেক্ষণ এবং মেরামতের ক্ষেত্রে এর প্রতিটি অংশ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন। ট্রান্সফর্মারের প্রতিটি অংশই ট্রান্সফর্মারের দক্ষতা, নির্ভরযোগ্যতা এবং নিরাপত্তায় মুখ্য ভূমিকা পালন করে।

স্টেপ পোটেনশিয়াল এবং টাচ পোটেনশিয়াল: বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা ঝুঁকি এবং প্রতিকার

ভূমিকা:

বৈদ্যুতিক সিস্টেমে, বিশেষ করে বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্র বা এমন কোনো স্থাপনা যেখানে উচ্চ ভোল্টেজ ব্যবহৃত হয় সেখানে সুরক্ষা এবং নিরাপত্তার জন্য স্টেপ পোটেনশিয়াল এবং টাচ পোটেনশিয়াল অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন বিষয়। উভয় বিষয়ই একটি পোটেনশিয়াল ডিফারেন্সকে নির্দেশ করে যার দ্বারা একজন ব্যক্তি মারাত্মকভাবে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হতে পরে এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। তাই বৈদ্যুতিক সিস্টেমের নিরাপদ অপারেশন এর জন্য স্টেপ পোটেনশিয়াল এবং টাচ পোটেনশিয়াল সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা স্টেপ পোটেনশিয়াল এবং টাচ পোটেনশিয়াল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবো।

স্টেপ পোটেনশিয়াল:
Step Potential
Step Potential

ভূমির দুই বিন্দুর মধ্যে ভোল্টেজ পার্থক্যকে স্টেপ পোটেনশিয়াল বলে। ভূমির দুই বিন্দুর মধ্যেকার দুরত্ব সাধারনত ১ মিটার ধরা হয়।

বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্র বা কোনো স্থাপনায় যখন ফল্ট সংগঠিত হয়ে কোনো লাইভ কন্ডাক্টর গ্রাউন্ডকে স্পর্শ করে তখন ঐ স্পোর্শকৃত স্থানসহ তার আশেপাশের জায়গায় একটি বৃত্তাকার বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র তৈরি হয়। এই বৃত্তাকার বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রের কেন্দ্র যেখানে লাইভ কন্ডাক্টর ভূমিকে স্পর্শ করেছে ভোল্টেজ এর পরিমাণ সর্বোচ্চ থাকে এবং ধীরে ধীরে বৃত্তের পরিধির দিকে ভোল্টেজের মান কমতে থাকে। ফলে এই বৃত্তের দুই বিন্দুর মধ্যে একটি পোটেনশিয়াল ডিফারেন্স তৈরি হয়।

বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনার সময় যখন কোনো ব্যক্তি এই বৃত্তাকার ক্ষেত্রের দুই বিন্দুতে পা রেখে দাঁড়াবে তখন তার দুই পায়ের মধ্যকার পোটেনশিয়াল ডিফারেন্স এর কারণে তার শরীর দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতে পারে এবং বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।

প্রতিকার: স্টেপ পোটেনশিয়াল জনিত দুর্ঘটনা থেকে বাঁচার জন্য দুই পা সামনে পিছে করে পদক্ষেপ না ফেলে দুই পা পাশাপাশি রেখে লাফিয়ে যত দ্রুত সম্ভব বিদ্যুতায়িত এলাকা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। দুই পা সামনে পিছনে থাকলে স্টেপ পোটেনশিয়াল এর মান বেশি হয়। তাই দুই পা পাশাপাশি রেখে লাফিয়ে চলা নিরাপদ।

টাচ পোটেনশিয়াল:
Touch Potential
Touch Potential

কোনো ব্যক্তি যখন ভূমিতে দাঁড়িয়ে কোনো কোন বিদ্যুতায়িত যন্ত্রাংশ যেমন ট্রান্সফরমার ট্যাংক, বৈদ্যুতিক খুঁটি ইত্যাদি স্পর্শ করে তখন ঐ ব্যক্তির হাত এবং পায়ের মধ্যকার একটি পোটেনশিয়াল ডিফারেন্স তৈরি হয় এবং এই পোটেনশিয়াল ডিফারেন্স এর কারণে শরীরের মধ্য দিয়ে বিদুৎ প্রবাহিত হয়। এই পোটেনশিয়াল ডিফারেন্সকে টাচ পোটেনশিয়াল বলে। টাচ পোটেনশিয়াল এর কারণে উক্ত ব্যক্তি বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে গুরুতর দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পরে।

প্রতিকার: টাচ পোটেনশিয়াল থেকে নিরাপদ থাকার জন্য যেকোনো ধরনের বিদ্যুতায়িত যন্ত্রপাতি বা স্থাপনা খালি হাতে স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব বিদ্যুতায়িত স্থান হতে নিরাপদ দুরত্বে সরে আসতে হবে।

স্টেপ পোটেনশিয়াল এবং টাচ পোটেনশিয়াল থেকে নিরাপদ থাকার উপায়:

১. উপযুক্ত গ্রাউন্ডিং এর ব্যবহার: উপযুক্ত গ্রাউন্ডিং এর মাধ্যমে স্টেপ পোটেনশিয়াল এবং টাচ পোটেনশিয়াল কমানো সম্ভব এবং ফল্ট কারেন্টকে কমিয়ে বিকল্প পথে প্রবাহিত করা যায়।
২. পাথর ব্যবহার: ভূমিতে পাথর ব্যবহার করে ভূমির পরিবাহীর কমানো যায় এবং কারেন্ট প্রবাহকে সীমিত করা যায়।
৩. ইকুইপটেনশিয়াল ম্যাট ব্যবহার: ইকুইপটেনশিয়াল ম্যাট ব্যবহারের মাধ্যমে স্টেপ পোটেনশিয়ালকে সমভাবে বণ্টন করা যায় ফলে স্টেপ পোটেনশিয়াল এর মান হ্রাস পায়।
৪. ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার: বিদুটোরোধী জুতা, গ্লাভস ইত্যাদি ব্যবহারের মাধ্যমে টাচ পোটেনশিয়াল এবং স্টেপ পোটেনশিয়াল এর দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব।
৫. উপযুক্ত প্রশিক্ষণ: যথাযথ প্রশিক্ষণের দ্বারা সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সম্ভাব্য দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব।

উপসংহার:

উচ্চ ভোল্টেজ বৈদ্যুতিক সিস্টেমের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা বিধানের জন্য স্টেপ পোটেনশিয়াল এবং টাচ পোটেনশিয়াল খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা, উপযুক্ত যন্ত্রাংশ ব্যবহার এবং প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্টেপ পোটেনশিয়াল এবং টাচ পোটেনশিয়াল জনিত দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব।

ইলেকট্রিক্যাল ট্রান্সমিশন লাইনে কেনো এলুমিনিয়াম কন্ডাক্টর ব্যবহার করা হয়?

ইলেকট্রিক্যাল ট্রান্সমিশন লাইনে এলুমিনিয়াম কন্ডাক্টর ব্যবহারের কারণ: কপারের তুলনায় অ্যালুমিনিয়াম কন্ডাক্টরের সুভিদা।
Aluminum Conductor VS Copper Conductor
Aluminum Conductor VS Copper Conductor

কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্যের জন্য ইলেকট্রিক্যাল ট্রান্সমিশন লাইনে কন্ডাক্টর হিসেবে কপারের পরিবর্তে এলুমিনিয়াম ব্যবহার করা হয়। এলুমিনিয়ামের তুলনায় কপার অধিক পরিবাহী হওয়া সত্ত্বেও এলুমিনিয়াম কন্ডাক্টর এর ব্যয়, দক্ষতা এবং বাস্তবিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ সুবিধা রয়েছে, যেমন:

১। কম ব্যয়:
কপারের তুলনায় এলুমিনিয়াম কম ব্যয়বহুল। বড় সঞ্চালন লাইন নির্মাণের ক্ষেত্রে কন্ডাক্টরের ব্যয় অন্যতম বিবেচ্য বিষয়। তাই সঞ্চালন লাইন নির্মাণের ক্ষেত্রে কপারের তুলনায় এলুমিনিয়াম কন্ডাক্টরকে প্রাধান্য দেয়া হয়।

২। ওজন হালকা:
কপারের তুলনায় এলুমিনিয়াম প্রায় এক তৃতীয়াংশ হালকা। তাই একই আয়তনের কপারের তুলনায় এলুমিনিয়াম কন্ডাক্টর ওজনে হালকা হওয়ায় সঞ্চালন লাইন নির্মাণের ক্ষেত্রে এলুমিনিয়াম কন্ডাক্টর ব্যবহার করা হয়। ওজন হালকা হওয়ার কন্ডাক্টর পরিবহন, ব্যবস্থাপনা এবং স্থাপন সহজ হয়। কন্ডাক্টরের ওজন কম হওয়ার সঞ্চালন লাইনের টাওয়ার এর উপর কম লোড পরে এবং অপেক্ষাকৃত কম শক্তিশালী টাওয়ার ও সহায়ক যন্ত্রপাতি দরকার হয়। ফলে সার্বিক খরচ কম লাগে।

৩। উচ্চ স্ট্রেংথ টু ওয়েট রেশিও:
এলুমিনিয়াম কন্ডাক্টর হিসেবে প্রধানত সংকরায়িত রি-ইনফোর্সড কন্ডাক্টর ব্যবহার করা হয়, যেমন: Aluminium Conductor Steel Reinforced(ACSR)। এই রি-ইনফোর্সড কন্ডাক্টর সমূহ ওজনে হালকা হওয়া সত্ত্বেও এদের স্ট্রেংথ টু ওয়েট রেশিও খুবই উচ্চ মানের হয়। ফলে লম্বা স্প্যান যুক্ত সঞ্চালন লাইন নির্মাণ সম্ভব হয় এবং সঞ্চালন টাওয়ার সংখ্যা ও ব্যয় হ্রাস পায়।

৪। মরিচা প্রতিরোধী:
এলুমিনিয়াম বাতাসের সংস্পর্শে আসলে এর উপর মরিচা প্রতিরোধী অক্সাইড এর আবরণ তৈরি হয়। এই আবরণের ফলে পর্বর্তনশীল আবহাওয়াও কন্ডাক্টর দীর্ঘদিন কোনো রকম ক্ষতি ছাড়াই টিকে থাকতে পরে।

৫। সহজলভ্য এবং টেকসই:
কপারের তুলনায় এলুমিনিয়াম অধিক সহজলভ্য এবং এলুমিনিয়াম পুনব্যবহারযোগ্য হওয়ায় এটি কন্ডাক্টর হিসেবে পরিবেশবান্ধব এবং টেকসই।

৬। নিরাপত্তা:
কপারের তুলনায় এলুমিনিয়াম দামে সস্তা হওয়ায় এর চুরি হয়ে যাওয়ার প্রবণতা কম। তাই সঞ্চালন লাইনে এলুমিনিয়াম এর ব্যবহার অধিক নিরাপদ।

কপার এবং এলুমিনিয়াম কন্ডাক্টর এর মৌলিক পার্থক্য:
পার্থক্যর বিষয়এলুমিনিয়ামকপার
দামসস্তাব্যায়বহুল
ওজনহালকাভারি
পরিবাহিতাকম(~কপারের ৬০%)বেশি
মরিচা রোধ ক্ষমতাভালো (অক্সাইডের আবরণ তৈরি হয়)মরিচা রোধ ক্ষমতা
প্রাপ্যতাসহজলভ্যসীমিত
চুরির সম্ভাবনাকমবেশি
উপসংহার:

সঞ্চালন লাইনে কম ব্যয়, ওজনে হালকা, পর্যাপ্ত পরিবাহিতা এবং মরিচা প্রতিরোধী হওয়ায় কপারের পরিবর্তে এলুমিনিয়াম কন্ডাক্টর ব্যবহার করা হয়। কপার অধিক পরিবাহী এবং শক্তিশালী হওয়া সত্ত্বেও অতিরিক্ত ওজন এবং উচ্চ ব্যয়ের কারণে দীর্ঘ দুরত্বের সঞ্চালন লাইনে কপার ব্যবহার করা হয় না। দক্ষতা, প্রাচুর্যতা এবং ব্যয়ের মধ্যে সুষম সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে আধুনিক সঞ্চালন লাইন নির্মাণে এলুমিনিয়াম কন্ডাক্টর নিজেকে নির্ভরযোগ্য এবং দক্ষ পরিবাহী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফর্মার এবং পাওয়ার ট্রান্সফর্মার এর পার্থক্য কি?

ভূমিকা(Introduction):
বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মারকে তার ব্যবহার, ভোল্টেজ লেভেল, লোডের ধরন ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে শ্রেণীবিন্যাস করা হয় থাকে। ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফর্মার এবং পাওয়ার ট্রান্সফর্মার এদের মধ্যে অন্যতম যা ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার সিস্টেমে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। চলুন দেখে নেই ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফর্মার এবং পাওয়ার ট্রান্সফর্মার এর মধ্যে মূল পার্থক্য গুলি কি কি:

১। উদ্দেশ্য

ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফর্মার: বৈদ্যুতিক বিতরণ ব্যবস্থায় বিভিন্ন ধরনের গ্রাহক যেমন, আবাসিক, বাণিজ্যিক বা শিল্পে বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে ব্যবহৃত হয়। উচ্চ ভোল্টেজকে নিম্ন ভোল্টেজে রূপান্তরের জন্য স্টেপ ডাউন ট্রান্সফর্মার হিসেবে কাজ করে।
পাওয়ার ট্রান্সফর্মার: বিদুৎ কেন্দ্র উৎপাদিত বিদ্যুৎ উচ্চ ভোল্টেজে রূপান্তর করে দূরবর্তী স্থানে সঞ্চালনের জন্য পাওয়ার ট্রান্সফর্মার ব্যবহৃত হয়। এটি সাধারণত বিদুৎ কেন্দ্র বা সঞ্চালন সিস্টেমে স্থাপন করা হয়।

২। ভোল্টেজ লেভেল

ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফর্মার: নিম্ন ভোল্টেজ লেভেলে পরিচালিত হয়। সাধারণত ৩০কেভি এর কম ভোল্টেজে হতে গ্রাহককে ৪০০/২৩০ ভোল্টেজে বিদুৎ সরবরাহ প্রদানের জন্য ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফর্মার ব্যবহৃত হয়।
পাওয়ার ট্রান্সফর্মার: উচ্চ ভোল্টেজ যেমন ৩০ কেভি বা তার বেশি ভোল্টেজে বিদুৎ সঞ্চালনের জন্য পরিচালিত হয়। বাংলাদেশে ব্যবহৃত সঞ্চালন ভোল্টেজ গুলি হলো: ৩৩ কেভি, ১৩২ কেভি, ২৩০ কেভি, ৪০০ কেভি ইত্যাদি।

৩। লোডের ধরন

ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফর্মার: ভোক্তার চাহিদা অনুযায়ী পরিবর্তনশীল লোডে পরিচালিত হয়। পরিবর্তনশীল লোডে ব্যবহারের জন্য হালকা লোডে ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফর্মারের দক্ষতাকে খুবই গুরুত্ত্বসহকারে বিবেচনা করা হয়।
পাওয়ার ট্রান্সফর্মার: সাধারণত ফুল লোড বা ফুল লোডের কাছাকাছি লোডে পরিচালিত হোয়। তাই পাওয়ার ট্রান্সফর্মারের ক্ষেত্রে ফুল লোডের দক্ষতাকে বিবেচনা করা হয়।

৪। সাইজ এবং ক্যাপাসিটি

ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফর্মার: আকারে ছোট এবং কম সক্ষমতা সম্পন্ন হয়ে থাকে, সাধারণত ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফর্মার সর্বচ্চ ৫০০কিঃওঃ পর্যন্ত হয়।
পাওয়ার ট্রান্সফর্মার: আকারে বড় এবং বেশি সক্ষমতা সম্পন্ন হয়ে থাকে। পাওয়ার ট্রান্সফর্মার ১ মেঃওঃ বা তার থেকে বড় আকারের হয়ে থাকে।

৫। দক্ষতা

ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফর্মার: যেহেতু ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফর্মারের মাধ্যমে পরিবর্তনশীল লোডে সরবরাহ প্রদান করা হয় এবং অধিকাংশ সময়ই হালকা লোডে পরিচালিত হয় তাই দক্ষ এবং সাস্রয়িভাবে পরিচালনার জন্য নো-লোড লসকে বিশেষ গুরুত্ত সহকারে বিবেচনা করা হয়।
পাওয়ার ট্রান্সফর্মার: যেহেতু পাওয়ার ট্রান্সফর্মার বেশিরভাগ সময় ফুল লোডে পরিচালিত হয় তাই দক্ষতা পরিমাপের ক্ষেত্রে ফুল লোড লস এবং নো-লোড লস উভয়ই গুরুত্ত্বসহকারে বিবেচনা করা হয়।

৬। শীতলীকরণ পদ্ধতি

ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফর্মার: আকারে ছোট হওয়ায় ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফর্মারে কোনো ফোর্স কুলিং ব্যবহার করা হয় না। সাধারণত প্রাকৃতিক এয়্যার-কুলিং বা অয়েল কুলিং ব্যবহৃত হয়।
পাওয়ার ট্রান্সফর্মার: আকারে বৃহৎ হওয়ায় প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয়, তাই শীতলীকরণের জন্য বৃহৎ রেডিয়েটরসহ ফোর্স কুলিং ব্যবহার করা হয়।

৭। ডিজাইন

ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফর্মার: পাওয়ার ট্রান্সফর্মারের তুলনায় ডিজাইন এবং গঠন সহজ। ডিজাইনের সময় সহযে রক্ষণাবেক্ষণ এবং স্থানান্তরের কথা বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
পাওয়ার ট্রান্সফর্মার: এর ডিজাইন অপেক্ষাকৃত জটিল এবং অতি উচ্চ ভোল্টেজ ও কারেন্ট এর কারণে অধিক নিরাপত্তা বিধানের কথা বিবেচনা করে ডিজাইন করতে হয়।

৮। স্থাপন

ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফর্মার: সাধারণত লোড ছেন্টারের কাছে যেমনঃ বৈদ্যুতিক পোল, বাসা বারির আঙ্গিনা ইত্যদিতে স্থাপন করা হয়।
পাওয়ার ট্রান্সফর্মার: বিদ্যুৎ কেন্দ্র বা সঞ্চালন উপকেন্দ্রে পাওয়ার ট্রান্সফর্মার স্থাপন করা হয়।

৯। ব্যয় এবং রক্ষণাবেক্ষণ

ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফর্মার: এর সহজ ডিজাইন এবং ছোট আকারের জন্য এটি কম ব্যায়বহুল এবং খুব সহজেই রক্ষণাবেক্ষণ করা যায়।
পাওয়ার ট্রান্সফর্মার: জটিল ডিজাইন এবং আকারে বড় হওয়ায় এটি বেশি ব্যায়বহুল এবং রক্ষণাবেক্ষণ জটিল। দক্ষ পরিচালনার জন্য নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয়।

সারসংক্ষেপ
পার্থক্যর বিষয়পাওয়ার ট্রান্সফর্মারডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফর্মার
উদ্দেশ্যসঞ্চালন নেটওার্কে ব্যবহৃত হয়বিতরণ নেটওার্কে ব্যবহৃত হয়।
ভোল্টেজ লেভেল৩৩ কেভি বা তার বেশি।৩৩ কেভি এর থেকে কম।
লোডের ধরনফুল লোড।পরিবর্তনশীল লোড।
আকার এবং ক্যাপাসিটিবড়(১ মেঃও বা তার বেশি)।ছোট(৫০০ কেঃওঃ বা তার কম।
দক্ষতাফুল লোডে বেশি।হালকা লোডে বেশি।
শীতলীকরণ পদ্ধতিফোর্স কুলং।প্রাকৃতিক কুলিং।
স্থাপনউৎপাদন বা সঞ্চালন উপকেন্দ্র।গ্রাহক স্থাপনার কাছে।
ব্যায়ব্যায়বহুলকম ব্যায়বহুল।
উপসংহার

ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফর্মার এবং পাওয়ার ট্রান্সফর্মার এর মূল পার্থক্য তাদের ব্যবহার এবং লোডের আকারের উপর নির্ভর করে। উচ্চ লোডে দক্ষ অপারেশনের জন্য সঞ্চালন প্রান্তে পাওয়ার ট্রান্সফর্মার ব্যবহৃত হয়, যেখানে পরিবর্তনশীল লোডে গ্রাহককে সরবরাহ প্রদানের জন্য ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফর্মার ব্যবহৃত হয়। একটি নির্ভরযোগ্য এবং দক্ষ বৈদ্যুতিক সিস্টেমের জন্য ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফর্মার এবং পাওয়ার ট্রান্সফর্মার উভয়ই অত্যাবশ্যকীয় উপাদান।

ইলেকট্রিক্যাল সঞ্চালন লাইনে কি কি ফল্ট ঘটে?

ভূমিকা(Introduction):
Faults in Electrical Transmission Lines
Faults in Electrical Transmission Lines

বৈদ্যুতিক সিস্টেমে ফল্ট হলো এমন কোনো অনাকাঙ্খিত ঘটনা যার ফলে স্বাভাবিক বিদুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে এবং সরঞ্জামের ক্ষতি সাধন হয় বা নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়। সাধারণত কয়টি ফেজে ফল্ট সংঘঠিত হয়েছে এবং কি ধরনের ফল্ট সংঘঠিত হয়েছে তার উপর ভিত্তি করে ফল্টকে শ্রেণী বিন্যাস করা হয়ে থাকে। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইন সংঘঠিত ফল্ট, ফল্ট এর কারণ এবং তার প্রভাব নিয়ে আলোচনা করবো।

বৈদ্যুতিক সিস্টেম প্রধানত দুই ধরনের ফল্ট সংঘঠিত হয়ে থাকে, যথা: 1. সিমেট্রিক্যাল ফল্ট এবং 2. আন-সিমেট্রিক্যাল ফল্ট।

1. সিমেট্রিক্যাল ফল্ট(Symmetrical Fault):

ফল্ট সংঘঠনের সময় যখন ট্রান্সমিশন লাইনের তিন ফেজেই সমান ফল্ট কারেন্ট প্রবাহিত হয় তখন তাকে সিমেট্রিক্যাল ফল্ট বলে। একে তিন ফেজ ফল্টও বলা হয়ে থাকে। যদিও বৈদ্যুতিক সিস্টেমে সিমেট্রিক্যাল খুবই কম সংঘঠিত হয় তবে এই ফল্ট বৈদ্যুতিক সিস্টেমের জন্য মারাত্বক ক্ষতির কারণ হতে পারে এবং খুবই তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেয়া দরকার হয়।

i. তিন ফেজ শর্ট সার্কিট ফল্ট(Three Phase Short Circuit Fault):
Three phase short circuit fau
Three Phase Short Circuit Fault

যখন সঞ্চালন লাইনের তিন ফেজ একত্রে এক অপরকে স্পর্শ করে বা শর্ট সার্কিট হয় তখন সিমেট্রিক্যাল ফল্ট সংঘঠিত হয়।

  • কারণ: ইন্সুলেশন ফেইলর, বজ্রপাত বা ফিজিক্যাল ড্যামেজ যেমন তারের উপর গাছ পরে তার ছিঁড়ে যাওয়া ইত্যাদি।
  • প্রভাব: ফল্ট এর সময় অতি উচ্চ কারেন্ট প্রবাহিত হয় এবং সঞ্চালন লাইন ও লাইনের সাথে যুক্ত যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
  • পরিমাণ: বৈদ্যুতিক সিস্টেমে সংগঠিত ফল্ট এর শতকরা ৫% বা তার কম সিমেট্রিক্যাল ফল্ট হয়ে থাকে।
ii. তিন ফেজ গ্রাউন্ড ফল্ট(Three Phase Ground Fault):

বৈদ্যুতিক লাইনের তিনটি ফেজ যখন একত্রে গ্রাউন্ড স্পর্শ করে তখন তাকে তিন ফেজ গ্রাউন্ড ফল্ট বলে। বৈদ্যুতিক সিস্টেমে তিন ফেজ গ্রাউন্ড ফল্ট ঘটেনা বললেই চলে তবে এই ফল্টের ঘটলে বৈদ্যুতিক সিস্টেম এবং এর সঙ্গে সংযুক্ত যন্ত্রপাতির মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হয়।

2. আন-সিমেট্রিক্যাল ফল্ট(Unsymmetrical Fault):

বৈদ্যুতিক সিস্টেমে যখন কোনো এক বা দুই ফেজে ফল্ট সংগঠিত হয় তখন তাকে আন-সিমেট্রিক্যাল ফল্ট বলে। ট্রান্সমিশন লাইনে সংঘঠিত বেশিরভাগ ফল্টই আন-সিমেট্রিক্যাল ফল্ট। তিন ধরনের আন-সিমেট্রিক্যাল ফল্ট সংঘঠিত হয়ে থাকে, যথা:

i. সিঙ্গেল লাইন টু গ্রাউন্ড ফল্ট(Single Line to Ground Fault or L-G Fault):
Single Line to Ground Fault
Single Line to Ground Fault

যখন কোনো অনাকাঙ্খিত কারণে বৈদ্যুতিক লাইনের এক ফেজ গ্রাউন্ড স্পর্শ করে তখন তাকে সিঙ্গেল লাইন টু গ্রাউন্ড ফল্ট বলে।

  • কারণ: বজ্রপাত, লাইনের উপর গাছ পড়া, ইন্সুলেশন ডেমেজ ইত্যাদি।
  • প্রভাব: যেই ফেজে ফল্ট সংঘঠিত হয়েছে সেই ফেজে উচ্চ ফল্ট কারেন্ট প্রবাহিত হয় তবে তা সিমেট্রিক্যাল ফল্ট এর তুলনায় কম বিপদজনক।
  • পরিমাণ: বৈদ্যুতিক সিস্টেমের ফল্ট সমূহের মধ্যে সবচে বেশি সংঘঠিত হয় সিঙ্গেল লাইন টু গ্রাউন্ড ফল্ট। মোট ফল্ট এর প্রায় ৭০% ফল্টই সিঙ্গেল লাইন টু গ্রাউন্ড ফল্ট।
ii. লাইন টু লাইন ফল্ট(Line to Line Fault or L-L Fault):
Line to Line Fault
Line to Line Fault

যখন বৈদ্যুতিক লাইনের দুই ফেজের মধ্যে শর্ট সার্কিট সংঘঠিত হয় তাকে লাইন টু লাইন ফল্ট বলে।

  • কারণ: ইন্সুলেশন ফেইলিওর অথবা ফিজিক্যাল ডেমেজ।
  • প্রভাব: লাইনে অসম কারেন্ট প্রবাহিত হয় এবং যন্ত্রপাতির ক্ষতি সাধন করে।
  • পরিমাণ: বিতরণ লাইনে সংঘঠিত ফল্ট এর প্রায় 15% লাইন টু লাইন ফল্ট।
iii. ডাবল লাইন টু গ্রাউন্ড ফল্ট(Double Line to Ground Fault or L-L-G Fault):
Double Line to Ground Fault
Double Line to Ground Fault

যখন বৈদ্যুতিক লাইনের দুটি ফেজ একত্রে গ্রাউন্ড স্পর্শ করে তখন তাকে ডাবল লাইন টু গ্রাউন্ড ফল্ট বলে।

  • কারণ: প্রবল ঝড়, প্রাকৃতিক দূর্যোগ বা যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ডাবল লাইন টু গ্রাউন্ড ফল্ট সংগঠিত হয় ।
  • প্রভাব: লাইনে অসম কারেন্ট প্রবাহিত হয় এবং মারাত্বক ক্ষতি সাধন করে।
  • পরিমাণ: বৈদ্যুতিক লাইন সংঘঠিত ফল্ট এর প্রায় ১০% ডাবল লাইন টু গ্রাউন্ড ফল্ট।
4. ওপেন সার্কিট ফল্ট(Open Circuit Fault):

বৈদ্যুতিক লাইনের এক বা একাধিক ফেজ এর সংযোগ অনাকাঙ্খিত কারণে বিচ্ছিন্ন হলে তাকে ওপেন সার্কিট ফল্ট বলে। ফল্ট এর কারণে কতটি ফেজ বিচ্ছিন্ন হয়েছে তার উপর ভিত্তি করে ওপেন সার্কিট ফল্টকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে, যথা:

  1. এক ফেজ ওপেন সার্কিট,
  2. দুই ফেজ ওপেন সার্কিট এবং
  3. তিন ফেজ ওপেন সার্কিট ফল্ট।

ট্রান্সফরমারে কি কি টেস্ট করা হয়?

ভূমিকা(Introduction):

ইলেক্ট্রিক্যাল সিস্টেমে ট্রান্সফরমার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান এবং সেই কারণেই নিয়মিত টেস্টিং মাধ্যমে ট্রান্সফর্মারের দক্ষতা, নির্ভরযোগ্যতা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। ট্রান্সফর্মারের টেস্টসমূহকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়ঃ ১। রুটিন টেস্ট এবং ২। টাইপ টেস্ট। এছাড়াও, বিশেষ পরিস্থিতিতে কিছু বিশেষ টেস্ট করা হয়ে থাকে যা স্পেশাল টেস্ট নামে পরিচিত। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা ট্রান্সফর্মারের বিভিন্ন টেস্ট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

1. টাইপ টেস্ট(Type Test):

প্রস্তুতকারক কর্তৃক ট্রান্সফর্মার বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের পূর্বে ট্রান্সফর্মারের যে প্রোটোটাইপ তৈরি করা হয় সেসব প্রোটোটাইপ ট্রান্সফর্মারের ডিজাইন এবং আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ডের সাথে সামঞ্জস্যতা প্রমাণের জন্য টাইপ টেস্ট করা হয় থাকে। এই টেস্টগুলি কোনো প্রোডাকশন গ্রুপের সব ট্রান্সফর্মারে না করে কিছু স্যাম্পল ইউনিটের উপর করা হয়। এই টেস্টের অন্তর্গত কিছু পরিচিত টেস্ট হলো:

  1. তাপমাত্রা বৃদ্ধি পরীক্ষা(Temperature Rise Test): ফুল লোডে তাপমাত্রা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা পরীক্ষা করার জন্য ট্রান্সফর্মারের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পরীক্ষা করা হয়। টেস্ট চলাকালীন ট্রান্সফর্মারে ফুল লোড প্রয়োগ করা হয় এবং টেম্পারেচার সেন্সরের মাধ্যমে উইন্ডিং এবং অয়েলের তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করা হয়।
  2. ইম্পালস্‌ টেস্ট(Impulse Test): বজ্রপাত এবং সুইচিং সার্জ হতে সুরক্ষিত থাকার ক্ষমতা পরীক্ষার জন্য ইম্পালস্‌ টেস্ট করা হয়। এই টেস্টে ট্রান্সফর্মারে হাই-ভোল্টেজ ইম্পালস্‌ ওয়েভ প্রয়োগ করে ট্রান্সফর্মারের ইন্সুলেশনের কার্যকারিতা পর্যবেক্ষন করা হয়।
  3. নয়েজ লেভেল টেস্ট(Noise Level Test): ভিভিন্ন পরিস্থিতিতে ট্রান্সফর্মার কর্তৃক উৎপন্ন শব্দের মাত্রা পরীক্ষার জন্য নয়েজ লেভেল টেস্ট করা হয়।
  4. হারমনিক কনটেন্ট টেস্ট(Harmonic Content Test): ট্রান্সফর্মার চলার সময় উৎপন্ন হারমনিক পরিমাপ করার জন্য হারমনিক কনটেন্ট টেস্ট করা হয়।
2. রুটিন টেস্ট(Routine Test):

ফ্যাক্টরি হতে ডেলিভারির পূর্বে প্রতিটি ট্রান্সফর্মারে রুটিন টেস্ট করা হয়। প্রতিটি ট্রান্সফর্মারের দক্ষতা এবং নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য নিশ্চিত করার জন্য নিম্নবর্নিত টেস্টসমূহ করা হয়ঃ

  1. উইন্ডিং রেজিস্ট্যান্স টেস্ট(Winding Resistance Test): ট্রান্সফর্মারের প্রাইমারী এবং সেকেন্ডারি উইন্ডিং এর রেজিস্ট্যান্স পরিমাপের জন্য উইন্ডিং রেজিস্ট্যান্স টেস্ট করা হয়। ট্রান্সফর্মারের উইন্ডিং এ কোন লুজ কানেকশন এবং ড্যামেজ আছে কিনা তা এই পরীক্ষার মাধ্যমে জানা জায়। এই টেস্টে ট্রান্সফর্মারের উইন্ডিং এর মধ্য দিয়ে ডিসি কারেন্ট প্রবাহিত করে উইন্ডিং এর ভোল্টেজ ড্রপ পরিমাপের মাধ্যমে উইন্ডিং এর রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ করা হয়।
  2. ভোল্টেজ রেশিও টেস্ট(Voltage Ratio Test): ট্রান্সফর্মারের ডিজাইন এর চাহিদা মোতাবেক ট্রান্সফর্মারের ভোল্টেজ রেশিও ঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষার জন্য ভোল্টেজ রেশিও টেস্ট করা হয়। রেশিও পরিমাপের জন্য একটি জানা উৎস হতে ট্রান্সফর্মারের প্রাইমারী উইন্ডিং এ ভোল্টেজ সরবরাহ করে সেকেন্ডারি উইন্ডিং এ ভোল্টেজ পরিমাপ করা হয়।
  3. নো-লোড টেস্ট(No Load test or Open Circuit Test):  ট্রান্সফর্মারের কোর লস(Core Loss) বা আইরন লস(Iron Loss) পরিমাপের জন্য নো-লোড টেস্ট করা হয়। এই টেস্টে ট্রান্সফর্মারে সেকেন্ডারি উইন্ডিং খোলা রেখে প্রাইমারী উইন্ডিং রেটেড ভোল্টেজ প্রয়োগ করা হয় এবং ট্রান্সফর্মারের ব্যবহৃত পাওয়ার পরিমাপ করা হয়। এই পরিমাপকৃত পাওয়ারই কোর লস।
  4. শর্ট সার্কিট টেস্ট(Short Ciruit Test): ট্রান্সফর্মারের কপার লস এবং উইন্ডিং ইম্পিডেন্স পরিমাপ করার জন্য শর্ট সার্কিট টেস্ট করা হয়। এই টেস্টে ট্রান্সফর্মারের লো- ভোল্টেজ উইন্ডিংকে শর্ট করে প্রাইমারী উইন্ডিং এ রেটেড ভোল্টেজ এর ৩-৫% ভোল্টেজ প্রয়োগ করা হয় এবং ট্রান্সফর্মারের কারেন্ট ও ব্যবহৃত পাওয়ার পরিমাপ করা হয়। পরিমাপকৃত ডাটা হতে কপার লস এবং ইম্পিডেন্স পরিমাপ করা হয়।
  5. ইন্সুলেশুন রেজিস্ট্যান্স টেস্ট(Insulation Resistance Test): ট্রান্সফর্মারের কোর, উইন্ডিং এবং ট্যাংকের মধ্যাকার ইন্সুলেশন রেজিস্ট্যান্স পরীক্ষার জন্য এই টেস্ট করা হয়। মেগার(Megger or Mega Ohm Meter) এর মাধ্যমে ট্রান্সফর্মারের ইন্সুলেশনে উচ্চ ডিসি ভোল্টেজ প্রয়োগ করা হয় এবং ইন্সুলেসন রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ করা হয়।
  6. ডাই-ইলেক্ট্রিক স্ট্রেস টেস্ট(Dielectric Stress Test): ওভার ভোল্টেজ প্রতিরোধে ট্রান্সফর্মারের সক্ষমতা পরীক্ষার জন্য ডাই-ইলেকট্রিক স্ট্রেস টেস্ট করা হয়। উচ্চ ভোল্টেজ প্রয়োগের মাধ্যমে এই টেস্ট করা হয়ে থাকে।
3. স্পেশাল টেস্ট(Special Test):

কোনো সুনির্দিষ্ট সমস্যা চিহ্নিত করেন বা ক্রেতার চাহিদার ভিত্তিতে টাইপ টেস্ট এবং রুটিন টেস্টের বাইরেও কিছু বিশেষ টেস্ট করা হয়ে থাকে, যেমনঃ

  1. পার্শিয়াল ডিসচার্জ টেস্ট(Partial Discharge Test): ট্রান্সফর্মারের পার্শিয়াল ডিসচার্জ পরিমাপ করার জন্য এই টেস্ট করা হয়। এই টেস্ট এর মাধ্যমে ট্রান্সফর্মারের কোনো সুনির্দিষ্ট স্থানের ইন্সুলেশনের ব্রেক-ডাউন নির্নয় করা হয়। ট্রান্সফর্মারে উচ্চ ভোল্টেজ প্রয়োগ করে বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে কাঙ্ক্ষিত স্থানের পার্শিয়াল ডিসচার্জ পরিমাপ করা হয়।
  2. লিকেজ রিয়্যাক্টেন্স টেস্ট(Leakage Reactance Test): ট্রান্সফর্মারের ভোল্টেজ রেগুলেশনে লিকেজ রিয়্যাক্টেন্স তীব্র নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। লিকেজ রিয়্যাক্টেন্সের মান বেশি হলে ভোল্টেজ ড্রপের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং ট্রান্সফর্মারের সরবরাহ প্রান্তে কাঙ্ক্ষিত ভোল্টেজ পাওয়া যায় না। ট্রান্সফর্মারের লিকেজ রিয়্যাক্টেন্স পরিমাপ করার জন্য এই টেস্ট করা হয়।
  3. মেকানিক্যাল স্ট্রেংথ টেস্ট(Mechanical Strength Test): এই টেস্টের মাধ্যমে ট্রান্সফর্মারের কাঠিন্য এবং বাহ্যিক আঘাত সহ্য করার ক্ষমতা পরীক্ষা করা হয়।
  4. টেন ডেল্টা টেস্ট(Ten Delta Test): এই টেস্টকে Dissipation Factor Test ও বলা হয়ে থাকে। আদর্শ ইন্সুলেশন অপরিবাহী এবং তা ট্রান্সফর্মারের ভিতরে ক্যাপাসিটরের ন্যায় আচরণ করে। ফলে যখন ট্রান্সফর্মারের ইন্সুলেশনের উপর ভোল্টেজ প্রয়োগ হয় তখন এর ভিতর দিয়ে রিয়্যাক্টিভ কারেন্ট প্রবাহিত হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে ইন্সুলেশন ধর্ম ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং রেজিস্টিভ বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। ট্রান্সফরমারের ইন্সুলেশনে একটি লো-ফ্রিকোয়েন্সি এসি-ভোল্টেজ প্রয়োগ করে ইন্সুলেশন এর ডিজিপেশন ফ্যাক্টর পরিমাপ করা হয়। অর্থাৎ, টেন ডেল্টা টেস্টের মাধ্যমে ইন্সুলেশন কতটা রিয়্যাক্টিভ বা রেজিস্টিভ বৈশিষ্টের তা নির্নয় করা হয়।
উপসংহার(Conclusion):

ট্রান্সফর্মারের দির্ঘস্থায়িত্ত্ব, নিরাপত্তা এবং দক্ষ পরিচালনার ক্ষেত্রে নিয়মিত পরীক্ষার কোনো বিকল্প নেই। রুটিন টেস্ট উৎপাদিত প্রতিটি ট্রান্সফর্মারের গুনগত মান নিশ্চিত করে, টাইপ টেস্ট ডিজাইন অনুযায়ী উৎপাদন নিশ্চিত করে এবং স্পেশাল টেস্টের মাধ্যমে বিশেষ চাহিদা এবং বৈশিষ্ট অর্জন করা হয়। এই টেস্টগুলি করার মাধ্যমে ট্রান্সফরমারের নির্ভযোগ্য এবং নিরাপদ পরিচালন সুনিশ্চিত হয়।

ট্রান্সফর্মার প্যারালাল অপারেশন এর প্রয়োজনীয় শর্ত

Transformer Parallel Operation
Parallel Operation of Transformer

ভূমিকা(Introduction):

ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার সিস্টেমে প্রায়শই সিস্টেমের ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি, নির্ভরযোগ্যতা অর্জন এবং লোড শেয়ারিং এর জন্য ট্রান্সফর্মার প্যারালাল অপারেশন করা হয় থাকে। তবে ট্রান্সফর্মারের দক্ষ এবং নিরাপদ প্যারালাল অপারেশন এর জন্য কি সুনির্দিষ্ট শর্ত পালন করতে হয়। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা ট্রান্সফর্মারের প্যারালাল অপারেশন এর প্রয়োজনীয় শর্তগুলো সম্পর্কে জানবো।

প্যারালাল অপারেশন এর প্রয়োজনীয় শর্তসমূহ(Necessary condition for Transformer Parallel Operation):

১. প্রাইমারী এবং সেকেন্ডারি উইন্ডিংয়ে একই ভোল্টেজ রেটিং: ট্রান্সফর্মারের প্যারালাল অপারেশন এর জন্য প্রাইমারী এবং সেকেন্ডারি উইন্ডিং এর ভোল্টেজ রেটিং অবশ্যই এক হতে হবে। ভোল্টেজ রেটিং আলাদা হলে ট্রান্সফর্মারের মধ্যে সার্কুলেটিং কারেন্ট প্রভাবিত হবে, ফলে ট্রান্সফর্মারের দক্ষতা হ্রাস পাবে, অতিরিক্ত তাপ উৎপন্ন হবে এবং স্থায়ীভাবে ট্রান্সফর্মারের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে।

২. একই টার্ন রেশিও বা ভোল্টেজ রেশিও: ট্রান্সফর্মারের সমূহের প্রাইমারী এবং সেকেন্ডারি উইন্ডিং এর টার্ন রেশিও(ভোল্টেজ রেশিও) অবশ্যই এক হতে হবে। এটা ট্রান্সফর্মার সমূহ যাতে সেকেন্ডারি উইন্ডিংয়ে একই ভোল্টেজ সরবরাহ করে তো নিশ্চিত করবে এবং ভারসাম্যহীনতা রোধ করবে।

৩. একই পোলারিটি: ট্রান্সফর্মারের সফল প্যারালাল অপারেশন এর জন্য অবশ্যই সকল ট্রান্সফর্মারের উইন্ডিং এর পোলারিটি এক হতে হবে। যদি কোনো ট্রান্সফর্মারের এক ফেজ উল্টিয়ে দেয়া হয় তবে তা অন্য ট্রান্সফর্মারের সাথে ফেজ রিভার্সাল ঘটবে যা শর্ট সার্কিট তৈরি করবে এবং মারাত্বক দুর্ঘটনা ঘটবে।

৪. একই ফেজ সিকোয়েন্স: প্যারালাল অপারেশনে থাকা সকল ট্রান্সফর্মারের ফেজ সিকোয়েন্স অবশ্যই একই হতে হবে। ফেজে সিকোয়েন্সের অমিল অস্বাভাবিক ভোল্টেজ এবং বিপরীতমুখী কারেন্ট তৈরি করবে এবং ট্রান্সফর্মারের ক্ষতি সাধন করতে পারে।

৫. একই পার্সেন্টেজ ইম্পিডেন্স: প্যারালাল অপারেশনে থাকা ট্রান্সফর্মার সমূহের পার্সেন্টেজ ইমপিডেন্স যথাসম্ভব কাছাকাছি হতে হবে এবং পার্সেন্টেজ ইম্পিডেন্স এর মানের পার্থক্য কোনো ভাবেই ১০% এর বেশি হওয়া যাবে না। পার্সেন্টেজ ইম্পিডেন্স এর পার্থক্য খুব বেশি হলে ট্রান্সফর্মার সমূহ অসম লোড শেয়ারিং হবে যার ফলে দক্ষতা হ্রাস পাবে।

উপসংহার(Conclusion):

পরিশেষে বলা যায় যে, ট্রান্সফর্মার প্যারালাল অপারেশন এর জন্য অবশ্যই ট্রান্সফর্মারের প্রাইমারী এবং সেকেন্ডারি উইন্ডিং এর ভোল্টেজ রেটিং, টার্ন রেশিও বা ভোল্টেজ রেশিও, পোলারিটি,ফেজ সিকোয়েন্স এবং পার্সেন্টেজ ইম্পিডেন্স এক হতে হবে। এই শর্তগুলো পালন করতে পারলে ট্রান্সফর্মারের নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য এবং দক্ষ প্যারালাল অপারেশন করা যাবে এবং চাহিদা মাফিক কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই বিদুৎ সরবরাহ করা যাবে।

ট্রান্সফরমারে কোনো kVA ব্যবহার করা হয়? kW এ রেটিং করা হয়না কেনো?

A 20 kV / 400 V distribution transformer in Veikkola, Finland
A 20 kV / 400 V distribution transformer in Veikkola, Finland

ভূমিকা (Introduction):

আমার যদি কোনো বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মারের নেমপ্লেট এর দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাবো যে ট্রান্সফরমারটি kW এর পরিবর্তে KVA তে রেটিং করা হয়েছে। এই পোস্টের মাধ্যমে আমার জানবো কেনো ট্রান্সফরমারকে kVA তে রেটিং করা হয় এবং kW রেটিং এর সাথে এর পার্থক্য কি।

ট্রান্সফরমারকে kVA তে রেটিং করার কারণ (Reason for rating transformer in kVA):

১. পাওয়ার ফ্যাক্টরের প্রভাবমুক্ত: ট্রান্সফরমার প্রকৃত পাওয়ার এবং রিয়াকটিভ পাওয়ার উভয়ই ট্রান্সফার করে যার মান লোডের পাওয়ার ফ্যাক্টর এর উপর নির্ভর করে। কোনো ট্রান্সফর্মারের পাওয়ার ফ্যাক্টর কেমন হবে তা নির্ভর করে ওই ট্রান্সফর্মারের সাথে কোন ধরনের লোড সংযুক্ত আছে তার উপর এবং লোড পরিবর্তনের সাথে সাথে পাওয়ার ফ্যাক্টরও পরিবর্তিত হয়। তাই ট্রান্সফরমার প্রস্তুতকারক ট্রান্সফরমারকে kW বা kVAR এ রেটিং না করে kVA বা আপাতত পাওয়ার এ রেটিং করে থাকেন কারণ kVA এর মানে পাওয়ার ফ্যাক্টর এর কোনো প্রভাব নেই। ফলে পাওয়ার ফ্যাক্টর এর কথা বিবেচনা না করেই স্বাধীনভাবে সকল ধরনের লোডকে ট্রান্সফর্মারের মাধ্যমে চালানো যায়।

২. কোর লস এবং কপার লস: ট্রান্সফর্মারের কোর লস ভোল্টেজ এর উপর নির্ভরশীল এবং কপার লস কারেন্টের উপর নির্ভর করে। তাই ট্রান্সফরমারকে kW বা kVAR এ রেটিং না করে kVA তে রেটিং করাই বেশি সঠিকতর হবে কারণ kVA সরাসরি ভোল্টেজ এবং কারেন্টের উপর নির্ভরশীল।

৩. সকল লোডে ক্যাপাসিটি নির্ধারণ: ট্রান্সফরমারকে kW এর পরিবর্তে kVA তে রেটিং করলে বিভিন্ন ধরনের লোডে পাওয়ার ফ্যাক্টর বিবেচনা না করেই ট্রান্সফরমারকে ব্যবহার করা যাবে। kVA তে রেটিং করলে সকল ধরনের লোড এবং পাওয়ার ফ্যাক্টরের ক্ষেত্রে ট্রান্সফর্মারের ক্যাপাসিটি একই থাকে যা সঠিক ক্যাপাসিটির ট্রান্সফরমার নির্বাচনে গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা পালন করে।

এক কথায়, সকল ধরনের লোড এবং পাওয়ার ফ্যাক্টরে ট্রান্সফর্মারের ক্যাপাসিটি সঠিকভাবে নির্ধারণের জন্য ট্রান্সফরমারকে kVA তে রেটিং করা হয়।

স্কিন ইফেক্ট: কারণ, অসুবিধা এবং প্রতিকার

ভূমিকা(Introduction):

ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার সিস্টেমে স্কিন ইফেক্ট একটু গুরুত্বপুর্ন ঘটনা যা পরিবাহীর ভিতর দিয়ে প্রবাহিত কারেন্টের প্রবাহকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। বিশেষকরে উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সিতে এই প্রভাব খুবই তীব্র যা পাওয়ার সিস্টেমের দক্ষতা, ট্রান্সমিশন লাইন ডিজাইন এবং এনার্জি লসে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই একজন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে স্কিন ইফেক্ট সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা অত্যন্ত জরুরি। এই পোস্টে আমরা স্কিন ইফেক্ট কি, স্কিন ইফেক্ট কেনো হয় এবং ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার সিস্টেমে স্কিন ইফেক্ট এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করবো।

স্কিন ইফেক্ট(Skin Effect):

কোনো পরিবাহীর মধ্য দিয়ে অল্টারনেটিং কারেন্ট(AC) প্রবাহিত হওয়ার সময় কারেন্ট ওই পরিবাহীর সম্পূর্ণ ক্ষেত্রফল জুড়ে সুষমভাবে প্রবাহিত না হয়ে শুধুমাত্র পরিবাহীর বাহিরের বা উপরের পৃষ্ঠ দিয়ে প্রবাহিত প্রবণতাকে স্কিন ইফেক্ট বলে। এর ফলে পরিবাহীর মধ্য দিয়ে কারেন্ট প্রবাহের জন্য কার্যকরী ক্ষেত্রফল হ্রাস পায় এবং ফ্রিকোয়েন্সি বৃদ্ধির সাথে সাথে এই সমস্যা আরো তীব্র হয়।সহজ ভাষায়, যখন ফ্রিকোয়েন্সি বৃদ্ধি পায় তখন পরিবাহীর কেন্দ্রের তুলনায় বাহিরের স্তরে কারেন্টের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়। ফলে পরিবাহীর রোধ বৃদ্ধি পায়। নিম্ন ফ্রিকোয়েন্সিতে এই প্রভাব অতি সামান্য হলেও উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সিতে এর প্রভাব তীব্র যা পাওয়ার সিস্টেমের দক্ষতা হ্রাস পায়, পাওয়ার অপচয় হয় এবং খরচ বৃদ্ধি পায়।

স্কিন ইফেক্ট এর কারণ(Reason of Skin Effect):

পরিবাহীর ভিতরের ইন্ডাক্টিভ রিয়াক্টেন্সের জন্য স্কিন ইফেক্ট হয়। কোন পরিবাহীর ভিতর দিয়ে যখন পরিবর্তনশীল কারেন্ট(AC) প্রবাহিত হয় তখন ঐ পরিবাহীর চারপাশে একটি চুম্বক ক্ষেত্র তৈরি হয়। এই চুম্বক ক্ষেত্র নিজেই পরিবাহীর মধ্য দিয়ে একটি কারেন্ট প্রবাহিত করে যা মূল কারেন্টের বিপরীত হওয়ায় মূল কারেন্টের প্রবাহকেই বাধা প্রদান করে। ফলস্বরূপ, মূল কারেন্ট পরিবাহীর কেন্দ্র হতে সরে এসে বাহিরের পৃষ্ঠ দিয়ে চলাচলের চেষ্টা করে। যারফলে পরিবাহীর বাহিরের পৃষ্ঠে কারেন্টের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায় এবং পরিবাহীর কার্যকরী রোধ বৃদ্ধি পায়।

পরিবাহীর বাহিরের পৃষ্ঠ হতে কেন্দ্রের দিকে যে দুরত্বে কারেন্ট ঘনত্ব পরিবাহী পৃষ্ঠের কারেন্ট ঘনত্বের ৩৭% এ নেমে আসে তাকে স্কিন ডেপ্থ(skin depth) বা পেনিট্রেশন ডেপ্থ(penetration depth) বলে। একে গ্রীক অক্ষর δ(ডেল্টা) দ্বারা প্রকাশ করা হয় যা উপরের চিত্রে দেখানো হয়েছে। গাণিতিকভাবে ফ্রিকোয়েন্সি বাড়ার সাথে সাথে স্কিন ডেপ্থ কমে যায় এবং স্কিন ডেপ্থ কিছু বিষয়ের উপর নির্ভর করে যেমন:

১. পরিবর্তনশীল কারেন্টের ফ্রিকোয়েন্সি (Frequency),

২. পরিবাহীর পরিবাহিতা (Conductivity),

৩. পরিবাহীর ভেদ্যতা (Permeability) এবং

৪. পরিবাহীর গঠন।

পাওয়ার সিস্টেমে স্কিন ইফেক্ট এর প্রভাব(Affect of skin effect in Power System):

১. রেজিস্ট্যান্স এবং পাওয়ার লস বৃদ্ধি: যেহেতু স্কিন ইফেক্টের কারণে কারেন্ট পরিবাহী পৃষ্ঠে কারেন্ট ঘনীভূত হয়ে পরিবাহীর সম্পূর্ণ ক্ষেত্রফল দিয়ে প্রবাহিত না হয়ে পরিবাহী পৃষ্ঠ দিয়ে প্রবাহিত হয় তাই পরিবাহীর কার্যকরী দৈর্ঘ্য হ্রাস পেয়ে পরিবাহীর রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধি পায়। ফলে I²*R লসও বৃদ্ধি পায়। বিশেষত উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সিতে এই লসের পরিমাণ অনেক বেশি হয়। ফলে দক্ষতা কমে যায়।

২. পরিবাহীর দক্ষতা হ্রাস: যেহেতু স্কিন ইফেক্ট এর কারণে পরিবাহীর কার্যকরী ক্ষেত্রফল কমে যায় ফলে একই পরিমাণ কারেন্টের জন্য উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সিতে বড় ক্ষেত্রফল বিশিষ্ট পরিবাহী ব্যবহার করতে হয়। এতে করে পরিবাহীর ওজন বৃদ্ধি পায়, বড় আকারের পোল এবং অন্যান্য উপাদান ব্যবহার করতে হয়। সর্বোপরি বিদুৎ পরিবহনের খরচ বৃদ্ধি পায়।

৩. পরিবাহীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি: যেহেতু স্কিন ইফেক্ট এর কারণে পরিবাহীর রোধ এবং পাওয়ার লস বৃদ্ধি পায়, সেহেতু পাওয়ার লসের কারণে পরিবাহীর তাপমাত্রায়ও বৃদ্ধি পায়। অতিরিক্ত তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে ট্রান্সফর্মারের উইন্ডিংসহ বিভিন্ন উপাদান ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং কার্যকাল হ্রাস পায়।

৪. সঞ্চালন লাইনের উপর প্রভাব: দীর্ঘ দুরত্বে পাওয়ার পরিবহনের সময় পাওয়ার লস হ্রাসের লক্ষেই সঞ্চালন লাইন ডিজাইন করা হয়। হাই ভোল্টেজ সঞ্চালন লাইনের ক্ষেত্রে(৫০-৬০ হার্টজ) স্কিন ইফেক্ট জনিত লস খুব সামান্য হলেও সঞ্চালন লাইন ডিজাইনের ক্ষেত্রে তা গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হয়।

স্কিন ইফেক্ট কমানোর উপায়(Way to reduce skin effect):

বিশেষত উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সিতে ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্কিন ইফেক্ট কমানোর জন্য বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করা হয়, যেমন:

১. ফাঁপা পরিবাহী ব্যবহার: যেহেতু স্কিন ইফেক্ট এর কারণে কারেন্ট পরিবাহী পৃষ্ঠ দিয়ে প্রবাহিত হয় তাই ফাঁপা পরিবাহী ব্যবহার করা হলে পরিবাহীর ওজন হ্রাস পায়, ফলে সামগ্রিক খরচ হ্রাস পায় এবং দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।

২. বান্ডলড(Bundled) বা একাধিক খেইযুক্ত(Stranded) পরিবাহী ব্যবহার: একক পরিবাহীর তুলনায় কয়েকটি পরিবাহিকে একত্রে বান্ডিল আকারে ব্যবহার করলে পরিবাহীর সমগ্র ক্ষেত্রফল জুড়ে সুষম কারেন্ট প্রবাহিত হয় এবং স্কিন ইফেক্ট হ্রাস পায়।

৩. পরিবাহীর আকার বৃদ্ধি: অপেক্ষাকৃত বড় ক্ষেত্রফল যুক্ত পরিবাহীর কার্যকরী ক্ষেত্রফল বেশি হওয়ায় স্কিন ইফেক্ট কম হয় এবং স্কিন ইফেক্ট এর কারনে সৃষ্ট লস হ্রাস পায়। তবে পরিবাহীর আকার বৃদ্ধির কারণে পরিবাহীর ওজন ও খরচ উভয়ই বৃদ্ধি পায়।

৪. লিটজ্ তারের(Litz Wire) ব্যবহার: কয়েকটি পরিবাহীর খেইয়ে(Strand) আলাদা আলাদা ভাবে ইনস্যুলেশন পেঁচিয়ে সবগুলি খেইকে একসাথে বুননের মাধ্যমে লিটজ্ তার তৈরি করা হয়। এই তার কয়েক কিলো হার্জ থেকে এক মেগাহার্জ পর্যন্ত ফ্রিকোয়েন্সির স্কিন ইফেক্ট কমাতে পারে।

৫. নিম্ন ভেদ্যতা(Permeability) এবং পরিবাহিতা যুক্ত পরিবাহির ব্যবহার: নিন্ম ভেদ্যতা যুক্ত ক্যাবলে স্কিন এফেক্ট কম হয় এবং ক্যাবলের পরিবাহিতা বেশি হলে লস কম হয়।

উপসংহার(Conclusion):

বৈদ্যুতিক পাওয়ার সিস্টেমে স্কিন ইফেক্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা, বিশেষ করে উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সিতে অ্যাপ্লিকেশনগুলিতে এর প্রভাব তীব্র। তাই স্কিন ইফেক্ট সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা থাকলে একজন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এর পক্ষে সঠিক ম্যাটেরিয়ালের ক্যাবল নির্বাচন করা, ক্যাবলের আকার নির্ধারণ করাসহ ইলেকট্রিক্যাল সিস্টেম ডিজাইনের অন্যান সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হবে এবং কম খরচে দক্ষ ইলেকট্রিক্যাল নেটওয়ার্ক তৈরিতে সক্ষম হবে।