Home » ট্রান্সফর্মার প্যারালাল অপারেশন এর প্রয়োজনীয় শর্ত
ভূমিকা(Introduction):
ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার সিস্টেমে প্রায়শই সিস্টেমের ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি, নির্ভরযোগ্যতা অর্জন এবং লোড শেয়ারিং এর জন্য ট্রান্সফর্মার প্যারালাল অপারেশন করা হয় থাকে। তবে ট্রান্সফর্মারের দক্ষ এবং নিরাপদ প্যারালাল অপারেশন এর জন্য কি সুনির্দিষ্ট শর্ত পালন করতে হয়। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা ট্রান্সফর্মারের প্যারালাল অপারেশন এর প্রয়োজনীয় শর্তগুলো সম্পর্কে জানবো।
প্যারালাল অপারেশন এর প্রয়োজনীয় শর্তসমূহ(Necessary condition for Transformer Parallel Operation):
১. প্রাইমারী এবং সেকেন্ডারি উইন্ডিংয়ে একই ভোল্টেজ রেটিং: ট্রান্সফর্মারের প্যারালাল অপারেশন এর জন্য প্রাইমারী এবং সেকেন্ডারি উইন্ডিং এর ভোল্টেজ রেটিং অবশ্যই এক হতে হবে। ভোল্টেজ রেটিং আলাদা হলে ট্রান্সফর্মারের মধ্যে সার্কুলেটিং কারেন্ট প্রভাবিত হবে, ফলে ট্রান্সফর্মারের দক্ষতা হ্রাস পাবে, অতিরিক্ত তাপ উৎপন্ন হবে এবং স্থায়ীভাবে ট্রান্সফর্মারের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
২. একই টার্ন রেশিও বা ভোল্টেজ রেশিও: ট্রান্সফর্মারের সমূহের প্রাইমারী এবং সেকেন্ডারি উইন্ডিং এর টার্ন রেশিও(ভোল্টেজ রেশিও) অবশ্যই এক হতে হবে। এটা ট্রান্সফর্মার সমূহ যাতে সেকেন্ডারি উইন্ডিংয়ে একই ভোল্টেজ সরবরাহ করে তো নিশ্চিত করবে এবং ভারসাম্যহীনতা রোধ করবে।
৩. একই পোলারিটি: ট্রান্সফর্মারের সফল প্যারালাল অপারেশন এর জন্য অবশ্যই সকল ট্রান্সফর্মারের উইন্ডিং এর পোলারিটি এক হতে হবে। যদি কোনো ট্রান্সফর্মারের এক ফেজ উল্টিয়ে দেয়া হয় তবে তা অন্য ট্রান্সফর্মারের সাথে ফেজ রিভার্সাল ঘটবে যা শর্ট সার্কিট তৈরি করবে এবং মারাত্বক দুর্ঘটনা ঘটবে।
৪. একই ফেজ সিকোয়েন্স: প্যারালাল অপারেশনে থাকা সকল ট্রান্সফর্মারের ফেজ সিকোয়েন্স অবশ্যই একই হতে হবে। ফেজে সিকোয়েন্সের অমিল অস্বাভাবিক ভোল্টেজ এবং বিপরীতমুখী কারেন্ট তৈরি করবে এবং ট্রান্সফর্মারের ক্ষতি সাধন করতে পারে।
৫. একই পার্সেন্টেজ ইম্পিডেন্স: প্যারালাল অপারেশনে থাকা ট্রান্সফর্মার সমূহের পার্সেন্টেজ ইমপিডেন্স যথাসম্ভব কাছাকাছি হতে হবে এবং পার্সেন্টেজ ইম্পিডেন্স এর মানের পার্থক্য কোনো ভাবেই ১০% এর বেশি হওয়া যাবে না। পার্সেন্টেজ ইম্পিডেন্স এর পার্থক্য খুব বেশি হলে ট্রান্সফর্মার সমূহ অসম লোড শেয়ারিং হবে যার ফলে দক্ষতা হ্রাস পাবে।
উপসংহার(Conclusion):
পরিশেষে বলা যায় যে, ট্রান্সফর্মার প্যারালাল অপারেশন এর জন্য অবশ্যই ট্রান্সফর্মারের প্রাইমারী এবং সেকেন্ডারি উইন্ডিং এর ভোল্টেজ রেটিং, টার্ন রেশিও বা ভোল্টেজ রেশিও, পোলারিটি,ফেজ সিকোয়েন্স এবং পার্সেন্টেজ ইম্পিডেন্স এক হতে হবে। এই শর্তগুলো পালন করতে পারলে ট্রান্সফর্মারের নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য এবং দক্ষ প্যারালাল অপারেশন করা যাবে এবং চাহিদা মাফিক কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই বিদুৎ সরবরাহ করা যাবে।
আমার যদি কোনো বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মারের নেমপ্লেট এর দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাবো যে ট্রান্সফরমারটি kW এর পরিবর্তে KVA তে রেটিং করা হয়েছে। এই পোস্টের মাধ্যমে আমার জানবো কেনো ট্রান্সফরমারকে kVA তে রেটিং করা হয় এবং kW রেটিং এর সাথে এর পার্থক্য কি।
ট্রান্সফরমারকে kVA তে রেটিং করার কারণ (Reason for rating transformer in kVA):
১. পাওয়ার ফ্যাক্টরের প্রভাবমুক্ত: ট্রান্সফরমার প্রকৃত পাওয়ার এবং রিয়াকটিভ পাওয়ার উভয়ই ট্রান্সফার করে যার মান লোডের পাওয়ার ফ্যাক্টর এর উপর নির্ভর করে। কোনো ট্রান্সফর্মারের পাওয়ার ফ্যাক্টর কেমন হবে তা নির্ভর করে ওই ট্রান্সফর্মারের সাথে কোন ধরনের লোড সংযুক্ত আছে তার উপর এবং লোড পরিবর্তনের সাথে সাথে পাওয়ার ফ্যাক্টরও পরিবর্তিত হয়। তাই ট্রান্সফরমার প্রস্তুতকারক ট্রান্সফরমারকে kW বা kVAR এ রেটিং না করে kVA বা আপাতত পাওয়ার এ রেটিং করে থাকেন কারণ kVA এর মানে পাওয়ার ফ্যাক্টর এর কোনো প্রভাব নেই। ফলে পাওয়ার ফ্যাক্টর এর কথা বিবেচনা না করেই স্বাধীনভাবে সকল ধরনের লোডকে ট্রান্সফর্মারের মাধ্যমে চালানো যায়।
২. কোর লস এবং কপার লস: ট্রান্সফর্মারের কোর লস ভোল্টেজ এর উপর নির্ভরশীল এবং কপার লস কারেন্টের উপর নির্ভর করে। তাই ট্রান্সফরমারকে kW বা kVAR এ রেটিং না করে kVA তে রেটিং করাই বেশি সঠিকতর হবে কারণ kVA সরাসরি ভোল্টেজ এবং কারেন্টের উপর নির্ভরশীল।
৩. সকল লোডে ক্যাপাসিটি নির্ধারণ: ট্রান্সফরমারকে kW এর পরিবর্তে kVA তে রেটিং করলে বিভিন্ন ধরনের লোডে পাওয়ার ফ্যাক্টর বিবেচনা না করেই ট্রান্সফরমারকে ব্যবহার করা যাবে। kVA তে রেটিং করলে সকল ধরনের লোড এবং পাওয়ার ফ্যাক্টরের ক্ষেত্রে ট্রান্সফর্মারের ক্যাপাসিটি একই থাকে যা সঠিক ক্যাপাসিটির ট্রান্সফরমার নির্বাচনে গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা পালন করে।
এক কথায়, সকল ধরনের লোড এবং পাওয়ার ফ্যাক্টরে ট্রান্সফর্মারের ক্যাপাসিটি সঠিকভাবে নির্ধারণের জন্য ট্রান্সফরমারকে kVA তে রেটিং করা হয়।
ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার সিস্টেমে ট্রান্সফরমার ভেক্টর গ্রুপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় যা ট্রান্সফর্মারের প্রাইমারী এবং সেকেন্ডারি কয়েলের মধ্যে ফেজ পার্থক্যকে বুঝায়। এই ফেজ পার্থক্য বিভিন্ন কোড যেমন: Dyn11, Dyn1 ইত্যাদি দ্বারা প্রকাশ করা হয় যা ইলেকট্রিক্যাল যা পাওয়ার সিস্টেমের বিভিন্ন অংশে অবস্থিত ট্রান্সফরমার সমূহকে যুক্ত করার সময় অত্যাবশ্যকীয় ভাবে অনুসরণ করা হয়। এই পোস্টে আমরা ট্রান্সফরমারের ভেক্টর গ্রুপ এবং এর বিভিন্ন প্রকারভেদ নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করব।
ট্রান্সফরমার ভেক্টর গ্রুপ:
কোনো ট্রান্সফর্মারের প্রাইমারী উইন্ডিং এর সাপেক্ষে সেকেন্ডারি উইন্ডিং এর ফেজ পার্থক্যকে ট্রান্সফর্মারের ভেক্টর গ্রুপ বলে। ভেক্টর গ্রুপ ট্রান্সফরমার সম্পর্কে কিছু মৌলিক তথ্য প্রদান করে, যেমন:
১. উইন্ডিং সমূহের এর গঠন (স্টার অথবা ডেল্টা),
২. প্রাইমারী এবং সেকেন্ডারি উইন্ডিং এর মধ্যে ফেজ পার্থক্য,
৩. সেকেন্ডারি উইন্ডিং সঙ্গে নিউট্রাল এর সংযোগ আছেকিনা।
এই তথ্যগুলো ট্রান্সফরমার নির্বাচনের ক্ষেত্রে অত্যাবশ্যকীয় বিশেষ করে যখন কোনো ইলেকট্রিক্যাল নেটওয়ার্কে একাধিক ট্রান্সফরমারকে সংযুক্ত করা হয়।
ভেক্টর গ্রুপের অর্থ | Dyn11 অথবা Dyn1:
ট্রান্সফর্মারের ভেক্টর গ্রুপ প্রকাশে একটি নির্দিন্ট ফরম্যাট ব্যবহার করা হয়। যেমন: Dyn11, যেখানে এই কোডের প্রতিটি অক্ষরের একটি সুনির্দিষ্ট অর্থ রয়েছে। অর্থাৎ
এখানে বড় হাতের অক্ষর দিয়ে হাই ভোল্টেজ উইন্ডিং এবং ছোট হাতের অক্ষর দিয়ে লো ভোল্টেজ উইন্ডিংকে বুঝানো হয়।ফেজ পার্থক্য হিসেবের সময় ঘড়ির কাটার উল্টো দিকে লিডিং এবং ঘড়ির কাটার দিকে ল্যাগিং ধরা হয়।
যেমন, Dyn11 বলতে বুঝায় ট্রান্সফরমারটির প্রাইমারী উইন্ডিং ডেল্টা কানেক্টেড, সেকেন্ডারি উইন্ডিং স্টার কানেক্টেড, সেকেন্ডারি উইন্ডিংয়ে নিউট্রাল সংযুক্ত রয়েছে এবং ট্রান্সফরমারটির সেকেন্ডারি উইন্ডিং প্রাইমারী উইন্ডিং এর সাপেক্ষে ৩০° লিডিং হিসেবে সংযুক্ত রয়েছে।
একই ভাবে, Yd1 বলতে বুঝায় ট্রান্সফরমারটির প্রাইমারী উইন্ডিং স্টার কানেক্টেড, সেকেন্ডারি উইন্ডিং ডেল্টা কানেক্টেড, ট্রান্সফরমারটির সেকেন্ডারি উইন্ডিংয়ে কোনো নিউট্রাল নেই এবং ট্রান্সফরমারটির সেকেন্ডারি উইন্ডিং প্রাইমারী উইন্ডিংয়ের সাপেক্ষে ৩০° ল্যাগিং অবস্থানে আছে।
ট্রান্সফরমার অয়েল ট্রান্সফরমার এবং অন্য অনেক ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্রপাতির দক্ষ এবং নিরাপদ অপারেশনের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন উপাদান। বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ট্রান্সফরমার অয়েল ব্যবহৃত হয়ে থাকে, যেমন:
১. ইন্সুলেশন: ট্রান্সফরমার অয়েল এর প্রাথমিক কাজ হলো ট্রান্সফরমার এর ভিতরের বিভিন্ন অংশকে ইলেকট্রিক্যাল ইন্সুলেশন প্রদান করা। ট্রান্সফরমারের মধ্যে বিভিন্ন ইলেকট্রিক্যাল অংশ যেমন: কোর ও উইন্ডিংসের মধ্যে ছোট ছোট ফাঁকা থাকে।ট্রান্সফরমার অয়েল সেই ফাঁকা স্থানগুলো পূরণ করে এবং ট্রান্সফর্মারের বিভিন্ন অংশকে এক অপরের থেকে ইনসুলেট বা পৃথক করে, যাতে শর্ট সার্কিট বা বিদ্যুৎজনিত দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমে।
২. কুলিং বা শীতলীকরণে সহায়তা: ট্রান্সফরমারের উইন্ডিংস ও কোর বিদ্যুৎ প্রবাহের কারণে প্রচুর তাপ উৎপন্ন করে, যা ট্রান্সফরমার ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং ট্রান্সফর্মারের দক্ষতা কমিয়ে দেয়।ট্রান্সফরমার অয়েল সেই তাপ শোষণ করে সম্প্রসারিত হয়ে রেডিয়েটরের মাধ্যমে ট্রান্সফরমার হতে তাপ বাইরে ছড়িয়ে দেয় ফলে ট্রান্সফরমার ঠান্ডা থাকে। এভাবে তাপ বিনিময় প্রক্রিয়া চলতে থাকে এবং ট্রান্সফরমারের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৩. আর্দ্রতা প্রতিরোধ: ট্রান্সফরমার অয়েল পরিবেশের আর্দ্রতা শোষণ করে এবং ট্রান্সফরমারের ভিতরের আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণে রাখে, যা ইন্সুলেটিং কাগজ বা অন্যান্য ইন্সুলেটরের আয়ু বৃদ্ধি করে।
৪. আর্ক নির্বাপন: লোড পরিবর্তন এবং ভোল্টেজ ফ্লাকচুয়েশন এর সময় ট্রান্সফর্মারের ভিতরে আর্ক তৈরি হতে পারে। ট্রান্সফরমার অয়েল এই আর্ককে নির্বাপন করে নিরবিচ্ছিন্ন এবং নিরাপদ অপারেশন নিশ্চিত করে। ফলে এটি ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্রপাতি এবং নিয়োজিত জনবলের নিরাপত্তায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
নির্ভরযোগ্য এবং দক্ষ পরিচালনার জন্য ট্রান্সফরমার অয়েল টেস্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং অত্যাবশ্যকীয়। বিভিন্ন টেস্টের মাধ্যমে ট্রান্সফরমার অয়েল এর শীতলীকরণ, ইন্সুলেশন ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যকে পরিমাপ করা হয়। নিয়মিত টেস্টের মাধ্যমে সহজেই ট্রান্সফর্মারের অয়েল এর সমস্যা চিহ্নিত করা যায় এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া যায়।
কিছু নির্দিষ্ট টেস্টের মাধ্যমে ট্রান্সফরমার অয়েলের গুণগত মান নিশ্চিত করা হয়। যেমন:
১. ডাইইলেকট্রিক ব্রেকডাউন ভোল্টেজ (BDV) টেস্ট: এটি ট্রান্সফরমার অয়েলের ইন্সুলেটিং ক্ষমতা মাপার পরীক্ষা। এই টেস্টে অয়েল কতটা উচ্চ ভোল্টেজ পর্যন্ত সহ্য করতে পারে তা পরীক্ষা করা হয়। ভালো ট্রান্সফরমার অয়েলের সর্বনিম্ন ব্রেকডাউন ভোল্টেজের মান 10kV/mm.
২. ফ্ল্যাশ পয়েন্ট টেস্ট: এটি তেলের দাহ্যতা পরীক্ষা করে, অর্থাৎ কত তাপমাত্রায় এটি আগুন ধরতে পারে। তেলের ফ্ল্যাশ পয়েন্ট যত বেশি, তেল তত নিরাপদ।
৩. অ্যাসিডিটি টেস্ট: অ্যাসিডটি কম থাকলে অয়েল দীর্ঘদিন ভালো থাকে। তাই এই টেস্টে অয়েল অ্যাসিডিক উপাদানসমূহ পরীক্ষা করা হয়।
৪. ভিস্কসিটি টেস্ট: এই পরীক্ষায় অয়েলের প্রবাহ ক্ষমতা (viscosity) নির্ধারণ করা হয়। কম ভিস্কসিটির অয়েল তাপ পরিবহনে কার্যকর হয়।
৫. ওয়াটার কন্টেন্ট টেস্ট(Karl Fischer Titration): এই টেস্টে ওয়েলে আর্দ্রতার পরিমাণ পরীক্ষা করা হয়। বেশি আর্দ্রতা ট্রান্সফরমারের জন্য ক্ষতিকর যা তেলের গুণাগুণ নষ্ট করে, তাই এটি নিয়মিত পরীক্ষা করা প্রয়োজন।
৬. ইন্টারফেসিয়াল টেনশন টেস্ট (IFT): এই টেস্টের মাধ্যমে ট্রান্সফরমার অয়েল এর পৃষ্ঠটান পরিমাপ করা হয় যা ট্রান্সফরমার অয়েলকে দূষণ এবং ডিগ্রেডেশন হতে মুক্ত থাকার ক্ষমতাকে নির্দেশ করে।
৭. ফুরান এনালাইসিস: ইন্সুলেশন পেপার খয়ের কারণে ট্রান্সফরমার এর ভিতরে ফুরাণ উপাদান তৈরি হয়। উচ্চ ফুরন উপাদানের উপস্থিতি ট্রান্সফরমার অয়েল এর মানহীনতাকা নির্দেশ করে।
৮. ট্রান্সফরমার অয়েলর রং(Color of Transformer Oil): সাধারণত ট্রান্সফরমার অয়েলর রং হালকা হলুদ বা সোনালী হয়। প্রাথমিক অবস্থায় উক্ত তেলের রং স্বচ্ছ থাকে। ট্রান্সফরমারের অভ্যন্তরে ঢালার ফলে ভার্নিসের সাথে মিশে রং কিছুটা পরিবর্তন হয়ে যায়। দীর্ঘদিন ব্যবহার করতে থাকলে তাপমাত্রার কারণে উহা বাদামী বর্ণ ধারণ করে। বাদামি বর্ণ ধারণ করলে বুঝতে হবে তেলের গুনাগুণ নষ্ট হয়ে গেছে। গুনাগুণ নষ্ট হয়ে যাওয়া তেল সেন্ট্রিফিউজ করে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করা যায়।
ট্রান্সফরমার অয়েল এর কার্যকারিতা এর গুণাগুণের উপর নির্ভর করে যা গুরুত্ব সহকারে পরিমাপ এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। ট্রান্সফরমার অয়েল এর এই গুণাগুণ গুলোই ইলেকট্রিক্যাল ইকুইপমেন্টকে দক্ষতার সাথে শীতলীকরণ, ইনসুলেশন এবং রক্ষণাবেক্ষণে সহায়তা করে। একটি ভালো ট্রান্সফরমার অয়েলের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলি হলো:
১. উচ্চ ডাইইলেকট্রিক স্ট্রেন্থ: কোনো পদার্থের ডাইইলেকট্রিক শক্তি বলতে বোঝায়, ওই পদার্থ সর্বোচ্চ যত ভোল্টেজ পর্যন্ত তার ইনস্যুলেটিং প্রপার্টি বজায় রাখতে পারে এবং কারেন্ট প্রবাহে বাধা দিতে পারে। ভালো ট্রান্সফরমার অয়েলের উচ্চ ডাইইলেকট্রিক স্ট্রেন্থ থাকে, যা ট্রান্সফরমারের বিভিন্ন অংশের মধ্যে উচ্চ আইসোলেশন প্রদান করে।
২. উচ্চ ফ্ল্যাশ পয়েন্ট: ফ্ল্যাশ পয়েন্ট হল একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা, যার উপরে গেলে তেলে আগুন ধরতে পারে। উচ্চ ফ্ল্যাশ পয়েন্ট থাকলে ট্রান্সফরমারের তেলের দাহ্যতা কম থাকে, যা ট্রান্সফরমারকে উচ্চ তাপমাত্রায় নিরাপদে পরিচালিত করতে সহায়তা করে।
৩. লো ভিস্কসিটি: কোনো তরল পদার্থ প্রবাহিত হওয়ার সময় যে বাধা অনুভব করে তাকে ভিস্কোসিটি বলে। ভিস্কসিটি কম থাকলে তেলটি সহজেই ট্রান্সফরমারের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং কুলিং এফিসিয়েন্সি বাড়ায়।
৪. নিম্ন অক্সিডাইজেশন: অক্সিডেশন হতে থাকলে তেল ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায় এবং তার কার্যক্ষমতা কমে যায়। ভালো ট্রান্সফরমার অয়েলে কম অক্সিডেশন হয়, ফলে এটি দীর্ঘদিন কার্যকর থাকে।
৫. নিম্ন জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি: ট্রান্সফরমার অয়েল এ জলীয় বাষ্প থাকলে এর ডাইলেকট্রিক স্ট্রেংথ হ্রাস পায় এবং এর ইন্সুলেশন প্রপার্টি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ট্রান্সফরমার অয়েলে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি অব্যশই কম হতে হবে এবং নিয়মিত তদারকী করতে হবে।
৬. নিম্ন Pour Point: সর্বনিম্ন যে তাপমাত্রায় অয়েল না জমে প্রবাহিত হতে পারে সেই তাপমাত্রাকে অয়েল এর Pour Point বলে। শীতপ্রধান এলাকায় নিম্ন Pour Point যুক্ত অয়েল ব্যবহার করা অত্যাবশ্যক যাতে নিম্ন তাপমাত্রায়ও দক্ষতার সাথে কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়।
ট্রান্সফরমার তেল (Transformer Oil) হলো এমন এক ধরনের বিশেষ তেল যা মূলত ট্রান্সফরমারের কুলিং ও ইনসুলেটিং জন্য ব্যবহৃত হয়। ট্রান্সফরমারের অভ্যন্তরে ওয়াইন্ডিং সমূহের মাঝে ইনসুলেশন রেজিস্ট্যান্স প্রদান করা ও ট্রান্সফরমারকে ঠান্ডা রাখার জন্য ট্যাংকের অভ্যন্তরে তেল ব্যবহার করা হয়। এই তেল সাধারণত খনিজ তেল দিয়ে তৈরি, যা ট্রান্সফরমারের জন্য আদর্শ ইন্সুলেটর ও তাপ পরিবাহী হিসেবে কাজ করে।
ট্রান্সফরমার অয়েল এর বাণিজ্যিক নাম পাইরানল বা সিলিকন অয়েল।
ট্রান্সফরমার অয়েল এর ব্যবহার | Use of Transformer Oil
১. বিতরণ ও পাওয়ার ট্রান্সফরমার,
২. সার্কিট ব্রেকার,
২. ক্যাপাসিটর এবং
৪. হাই ভোল্টেজ সুইচিং।
ট্রান্সফরমার অয়েল এর গুরুত্ব | Importance of Transformer Oil
বেশি ক্ষমতা সম্পন্ন বৃহৎ আকারের ট্রান্সফরমার অপারেশনের সময় প্রচুর তাপ উৎপন্ন করে। ট্রান্সফরমার অয়েল এই উচ্চ তাপকে অপসারণ করে ট্রান্সফর্মারের ভিতরের বিভিন্ন পার্টকে রক্ষা করে। কুলিং ছাড়াও ট্রান্সফরমার অয়েল ট্রান্সফর্মারের কোর এবং উইন্ডিংকে অক্সিডেশনের হাত থেকে রক্ষা করে। তাই এটি জলীয়বাষ্প হতে ট্রান্সফর্মারের রক্ষা কবচ হিসেবে কাজ করে।
ট্রান্সফরমার অয়েল এর প্রকারভেদ | Types of Transformer Oil
১. খনিজ তেল বা মিনারেল অয়েল: সাধারনত এটি সহজ প্রাপ্য এবং দামে সাশ্রয়ী হওয়ার কারণে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম হতে মিনারেল অয়েল তৈরি করা হয় এবং বিতরণ ও পাওয়ার ট্রান্সফরমারে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
২. সিনথেটিক অয়েল: বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যেখানে উচ্চ দক্ষতার দরকার হয় সেখানে সিনথেটিক অয়েল ব্যবহার করা হয় যেমন: উচ্চ তাপমাত্রার পরিবেশ। সিনথেটিক অয়েল যেমন: সিলিকন অয়েল খনিজ তেলের তুলনায় অধিক ব্যয়বহুল কিন্তু অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য এবং দীর্ঘস্থায়ী হয় থাকে।
ট্রান্সফরমার বৈদ্যুতিক এবং ইলেকট্রনিকস ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত একটি ডিভাইস। এটি একটি ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ডিভাইস যা মাইকেল ফ্যারাডে আবিষ্কৃত ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিজমের নীতি অনুসারে কাজ করে। এই পোস্টে আমরা ট্রান্সফরমার এর প্রকারভেদ এবং বিভিন্ন ধরনের ট্রান্সফরমার এর ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা করবো। যাইহোক, সব ধরনের ট্রান্সফরমার একই নীতি অনুসরণ করে তবে তাদের বিভিন্ন গঠন পদ্ধতি রয়েছে।
ভোল্টাজ লেভেল অনুসারে । In terms Voltage Level
ভোল্টেজ লেভেল অনুসারে ভোল্টেজ লেভেলের উপর নির্ভর করে ট্রান্সফর্মার তিন প্রকার। ১। স্টেপ ডাউন ট্রান্সফর্মার, ২। স্টেপ আপ ট্রান্সফর্মার এবং ৩। আইসোলেশন ট্রান্সফর্মার।
স্টেপ ডাউন ট্রান্সফর্মার | Step Down Transformer
উচ্চ মাত্রার ভোল্টেজকে কম ভোল্টেজে রূপান্তরিত করতে স্টেপ-ডাউন ট্রান্সফরমার ব্যাবহার করা হয়। এর প্রাইমারি সাইডে উচ্চ মাত্রার ভোল্টেজ প্রয়োগ করা হয় এবং সেকেন্ডারি সাইডে কাঙ্ক্ষিত নিম্ন মাত্রার ভোল্টেজ পাওয়া যায়। সেকেন্ডারি সাইডে কত মাত্রার ভোল্টেজ পাওয়া যাবে তা নির্ভর করে প্রাইমারি ওয়াইন্ডিং এবং সেকেন্ডারি ওয়াইন্ডিং এর টার্ন রেশিও এর উপর।
আমাদের ব্যবহার্য বেশিরভাগ ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রপাতিই ৯ ভোল্ট, ১২ ভোল্ট, ২৪ ভোল্ট বা ৪৮ ভোল্ট এ পরিচালিত হয়। কিন্তু আমরা ইউটিলিটি হতে যে বিদ্যুৎ পাই তা সাধারনত ২২০ ভোল্ট (এক ফেজ) বা ৪০০ ভোল্ট (৩ ফেজ) হয়ে থাকে। ইউটিলিটি হতে প্রাপ্ত ভোল্টেজকে আমাদের প্রয়োজনীয় মানে রূপান্তর করার জন্য স্টেপ-ডাউন ট্রান্সফরমার ব্যাবহার করা হয়।
বৈদ্যুতিক উৎপাদন, সঞ্চালন এবং বিতরন ব্যবস্থায় উচ্চ ভোল্টেজকে নিম্ন ভোল্টেজে রুপান্তরের জন্যও স্টেপ-ডাউন ট্রান্সফরমার ব্যবহৃত হয়।
স্টেপ আপ ট্রান্সফরমার | Step Up Transformer
স্টেপ আপ ট্রান্সফরমার স্টেপ-ডাউন ট্রান্সফরমারের সম্পূর্ণ বিপরীত। নিম্ন মাত্রার ভোল্টেজকে উচ্চ ভোল্টেজে রূপান্তরিত করতে স্টেপ-আপ ট্রান্সফরমার ব্যাবহার করা হয়। এর প্রাইমারি সাইডে কম মাত্রার ভোল্টেজ প্রয়োগ করা হয় এবং সেকেন্ডারি সাইডে কাঙ্ক্ষিত উচ্চ মাত্রার ভোল্টেজ পাওয়া যায়। সেকেন্ডারি সাইডে কত মাত্রার ভোল্টেজ পাওয়া যাবে তা নির্ভর করে প্রাইমারি ওয়াইন্ডিং এবং সেকেন্ডারি ওয়াইন্ডিং এর টার্ন রেশিও এর উপর।
স্টেপ আপ ট্রান্সফরমার বেশিরভাগ সময়ই স্টেবিলাইজার, ইনভার্টার ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয় যেখানে কম ভোল্টেজকে অনেক বেশি ভোল্টেজে রূপান্তর করা হয়।
বৈদ্যুতিক উৎপাদন, সঞ্চালন এবং বিতরন ব্যবস্থায় নিম্ন ভোল্টেজকে উচ্চ ভোল্টেজে রুপান্তরের জন্যও স্টেপ-আপ ট্রান্সফরমার ব্যবহৃত হয়।
আইসোলেশন ট্রান্সফমার | Isolation Transformer
আইসোলেশন ট্রান্সফরমার ভোল্টেজের কোনো পরিবর্তন করে না অর্থাৎ এর প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি সাইডে একই ভোল্টেজ থাকে। নিরাপত্তার জন্য দুটি ইলেক্ট্রিক্যাল সার্কিটকে আইসোলেট করতে আইসোলেশন ট্রান্সফরমার ব্যবহৃত হয়। এর প্রাইমারি ওয়াইন্ডিং এবং সেকেন্ডারি ওয়াইন্ডিং এর টার্ন রেশিও ১ হয়ে থাকে।
গঠন অনুসারে | In terms of Construction
গঠন অনুসারে ট্রান্সফরমার দুই প্রকার। ১। কোর টাইপ ট্রান্সফরমার এবং ২। শেল টাইপ ট্রান্সফরমার।
কোর টাইপ ট্রান্সফরমার | Core Type Transformar
এই ট্রান্সফরমারের ম্যাগনেটিক সার্কিটটি দুটি উল্লম্ব অংশ (লিম্ব) এবং দুটি অনুভূমিক অংশ (ইয়োক) নিয়ে গঠিত। প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি উইন্ডিংগুলি লিম্বগুলির উপর এমনভাবে স্থাপন করা হয় যে, লিকেজ ফ্লাক্স এর মান কমানো যায়। নিম্ন ভোল্টেজ উইন্ডিং সবসময় কোরের উপর এবং উচ্চ ভোল্টেজ উইন্ডিং নিম্ন ভোল্টেজ উইন্ডিংয়ের উপর রাখা হয়।
এটি মেরামত এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সহজে পৃথক করা যায় এবং প্রাকৃতিক শীতলকরণ দক্ষভাবে কাজ করে। তবে, এটির জন্য উচ্চতর ম্যাগনেটাইজিং কারেন্ট প্রয়োজন।
এই ট্রান্সফরমারগুলি প্রধানত উচ্চ ভোল্টেজ অ্যাপ্লিকেশন যেমন বিতরণ এবং পাওয়ার ট্রান্সফরমারে ব্যবহৃত হয়।
শেল টাইপ ট্রান্সফরমার | Shel type Transformer
শেল টাইপ ট্রান্সফরমার কোরে তিনটি বাহু থাকে, একটি কেন্দ্রিও বাহু এবং দুটি বাইরের বাহু। প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি উভয় ওয়াইন্ডিংই মাঝের বাহুতে বসান হয়। বাইরের দুটি বাহুতে কোনো ওয়াইন্ডিং পেচানো হয় না। বাইরের বাহু দুটির কাজ হল ম্যাগনেটিক ফ্লাক্সের প্রবাহের জন্য একটি লো রিলাকট্যান্স পথ তৈরি করা যাতে কোনো বাঁধা ছাড়াই ম্যাগনেটিক ফ্লাক্স প্রবাহিত হতে পারে।
যেসব ক্ষেত্রে কম ভোল্টেজ প্রয়োজন সেসব যায়গায় শেল টাইপ ট্রান্সফরমার ব্যবহার করা হয়।
ব্যাবহার অনুসারে | In terms of usages
ট্রান্সফরমার কোন কাজের জন্য ব্যবহার করা হবে তার উপর ভিত্তি করে ট্রান্সফরমারকে বিভিন্ন ভাবে শ্রেণিবিন্যাস করা হয়, যেমন- ১। পাওয়ার ট্রান্সফরমার, ২। ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফরমার, ৩। মেজারমেন্ট ট্রান্সফরমার, ৪। পালস্ ট্রান্সফরমার এবং ৫। ওডিও আউটপুট ট্রান্সফরমার।
পাওয়ার ট্রান্সফরমার | Power Transformer
পাওয়ার ট্রান্সফরমার আকারে বড় হয় এবং উচ্চ ভোল্টেজে অধিক পরিমান পাওয়ার সরবরাহের জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি সাধারনত বৈদ্যুতিক উপ কেন্দ্রে ব্যবহৃত হয়।
পাওয়ার ট্রান্সফরমারে উচ্চ ভোল্টেজ ব্যবহারের কারনে কারেন্ট কম প্রবাহিত হয় এবং বৈদ্যুতিক সিস্টেম এর লস কম হয়। পাওয়ার ট্রান্সফরমার সব সময় পুর্ন লোডে পরিচালিত হয় এবং দক্ষতা হিসেব করার ক্ষেত্রে বানিজ্যিক দক্ষতা ব্যবহার করা হয়।
ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফরমার | Distribution Transformer
ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফরমার সাধারনত বৈদ্যুতিক বিতরন ব্যবস্থায় ব্যবহৃত হয় যা উচ্চ ভোল্টেজকে ব্যবহারকারিদের প্রয়োজন অনুযায়ী নিম্ন ভোল্টেজ যেমন ২২০ ভোল্ট বা ১১০ ভোল্টে রূপান্তর করে।
ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফরমার পরিবর্তনশীল লোডে পরিচালিত হয় এবং এর সারাদিনের দক্ষতা হিসেব করা হয়।
মেজারমেন্ট ট্রান্সফরমার | Measurement Transformer
মেজারমেন্ট ট্রান্সফরমার, যাকে ইনস্ট্রুমেন্ট ট্রান্সফরমারও বলা হয়, সাধারণত বিদ্যুৎ শিল্পে ভোল্টেজ, কারেন্ট এবং বিদ্যুৎ পরিমাপ করতে ব্যবহৃত হয়। এগুলি মূল সার্কিটকে সেকেন্ডারি সার্কিট থেকে আইসোলেট করে, যা উচ্চ ভোল্টেজ এবং কারেন্টকে নিরাপদে এবং সঠিকভাবে পরিমাপের সুযোগ দেয়।
মেজারমেন্ট ট্রান্সফরমার সাধারনত দুই প্রকার- ১। কারেন্ট ট্রান্সফরমার এবং ২। ভোল্টেজ ট্রান্সফরমার।
পালস্ ট্রান্সফরমার | Pulse Transformer
পাল্স ট্রান্সফরমার এক ধরনের বিশেষ ট্রান্সফরমার যা কন্সট্যান্ট এমপ্লিচিউডের বৈদ্যুতিক পালস উৎপন্ন করে। এগুলি সাধারণত PCB মাউন্টেড সার্কিটে ব্যবহৃত হয় যেখানে বিচ্ছিন্ন পালস উৎপাদন প্রয়োজন।
অডিও ট্রান্সফরমার ইলেকট্রনিক্সে সাধারণভাবে ব্যবহৃত আরেক ধরনের ট্রান্সফরমার। এটি বিশেষভাবে অডিও অ্যাপ্লিকেশনে ব্যবহৃত হয় যেখানে ইম্পিডেন্স ম্যাচিং প্রয়োজন। অডিও ট্রান্সফরমার আমপ্লিফায়ার সার্কিট এবং লোডকে ভারসাম্যযুক্ত করে, যা সাধারণত একটি লাউডস্পিকার। অডিও ট্রান্সফরমারে একাধিক প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি কয়েল থাকতে পারে, যা পৃথক বা কেন্দ্রে ট্যাপ করা হতে পারে।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ বাস্তবে আদর্শ ট্রান্সফরমার তৈরি করা সম্ভব নয়। অর্থাৎ প্র্যাকটিক্যাল ট্রান্সফরমারে উপরোক্ত সবগুলো বিষয়ই বিদ্যমান থাকে। সাধারনত ট্রান্সফরমার ডিজাইন এবং এর বিভিন্ন গানিতিক সমস্যা সহজে সমাধানের জন্য আদর্শ ট্রান্সফরমার এর ধারনা ব্যবহার করা হয়। এতে সমস্যার সমাধান সহজ হয়।
ট্রান্সফর্মার একটি স্ট্যাটিক বা স্থির ডিভাইস যাহা প্রয়োজন অনুসারে ভোল্টেজের মান বাড়াতে বা কমাতে পারে। ইহাতে কমপক্ষে দুইটি ওয়াইন্ডিং থাকে। একটি প্রাইমারি ওয়াইন্ডিং ও অপরটি সেকেন্ডারি ওয়াইন্ডিং। ওয়াইন্ডিংসমূহকে লেমিনেটেড ম্যাগনেটিক কোরের উপর পেঁচানো হয়। যে ওয়াইন্ডিংকে এসি সরবরাহের সাথে যুক্ত করা হয় উহাকে প্রাইমারি ওয়াইন্ডিং এবং উহার ভোল্টেজকে প্রাইমারি ভোল্টেজ (Vp) বলা হয়। যে ওয়াইন্ডিংকে লোডের সাথে যুক্ত করা হয় উহাকে সেকেন্ডারি ওয়াইন্ডিং এবং উহার ভোল্টেজকে সেকেন্ডারি ভোল্টেজ (Vs) বলা হয়। যদি Vs > Vp হয় তবে উহাকে স্টেপ-আপ ট্রান্সফরমার বলা হয়। যদি Vs < Vp হয় তবে উহাকে স্টেপ- ডাউন ট্রান্সফরমার বলা হয়।
ট্রান্সফর্মার এর মূলনীতি | Principle of Transformer
১। ট্রান্সফর্মার অ্যাকশন ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ইন্ডাকশন নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত।।
২) প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি ওয়াইন্ডিং এর মধ্যে ইলেকট্রিক্যাল সংযোগ থাকে না। প্রাইমারি হতে সেকেন্ডারি ওয়াইন্ডিং এ পাওয়ার সরবরাহ হয় ম্যাগনেটিক ফ্লাক্সের দ্বারা।
৩) প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি সাইডে ক) পাওয়ার খ) ফ্রিকুয়েন্সি গ) অ্যাম্পিয়ার টার্ন ও ঘ) প্রতি টার্নের ভোল্টেজের মান একই থাকে।
৪) যেহেতু ট্রান্সফরমারে কোন ঘূর্ণায়মান অংশ নেই তাই অন্যান্য মেশিনের তুলনায় উহার দক্ষতা বেশি হয়।