ট্রান্সফরমারের লসসমূহ । প্রকারভে, সূত্র এবং কমানোর উপায়: বিস্তারিত

ভূমিকা:

ট্রান্সফরমার পরিচালনার ক্ষেত্রে পাওয়ার লস একটি অনিবার্য বিষয় যা ট্রান্সফরমারের দক্ষতা ও স্থায়িত্বের উপর সরাসরি প্রভাব বিস্তার করে। ট্রান্সফরমারকে উচ্চ দক্ষতায় পরিচালিত হওয়ার জন্য তৈরি করা হলেও বৈদ্যুতিক পাওয়ার এর একটা অংশ ট্রান্সফরমার কর্তৃক পাওয়ার ট্রান্সফরমেশন এর সময় হারিয়ে যায়। এই হারিয়ে যাওয়ায় পাওয়ারই ট্রান্সফরমারের লস।

এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন ধরনের ট্রান্সফরমার লস, তাদের কারণ, গাণিতিক সূত্র এবং লস কমানোর উপায় সম্পর্কে জানতে পারবো।

ট্রান্সফরমার লসের প্রকারভেদ:

ট্রান্সফরমার লসকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়:
১. কোর লস এবং ২. কপার লস।

১. কোর লস:

ট্রান্সফরমারের কোরে পরিবর্তনশীল চুম্বক ক্ষেত্রের কারণে ট্রান্সফরমারে কোর লস হয়ে থাকে। ট্রান্সফরমারে এই লস এর পরিমাণ স্থির থাকে এবং লোডের প্রভাব হতে মুক্ত থাকে।

ট্রান্সফরমারে দুই ধরনের কোর লস হয়ে থাকে, যথা:

১. হিস্টেরেসিস লস:

ট্রান্সফরমারে পরিবর্তনশীল বিদুৎ সরবরাহ দেয়ার ফলে ট্রান্সফরমারের কোর ম্যাটেরিয়াল অনবরত ম্যাগনেটাইজড এবং ডি-ম্যাগনেটাইজড হয় ফলে। কোর ম্যাটেরিয়ালের অনু সমূহের মধ্যে ঘর্ষণ হয় এবং তাপ শক্তি রূপে বৈদ্যুতিক লস হয়। এই লসকেই হিস্টেরেসিস লস বলে।

হিস্টেরেসিস লসের সূত্র:
হিস্টেরেসিস লসে, Ph​=η⋅Bm1.6​⋅f⋅V

এখানে,
η = হিস্টেরেসিস ধ্রুবক,
Bm = সর্বোচ্চ ফ্লাক্স ডেনসিটি,
f = সরবরাহ ফ্রিকোয়েন্সি,
V = কোরের আয়তন।

হিস্টেরেসিস লস কমানোর উপায়: ভালো মানের কোর ম্যাটেরিয়াল যেমন সিলিকন স্টিল ব্যবহার করে হিস্টেরেসিস লস কমানো সম্ভব।

২. এডি কারেন্ট লস:

যখন ট্রান্সফরমারে পরিবর্তনশীল বিদুৎ সরবরাহ প্রদান করা হয় তখন ট্রান্সফরমারের প্রাইমারী উইন্ডিং এ ম্যাগনেটিক ফ্লাক্স তৈরি হয় এবং তা ট্রান্সফরমারের সেকেন্ডারি উইন্ডিং দ্বারা আবিষ্ট হয়। যেহেতু ট্রান্সফরমারের কোর ম্যাগনেটিক মেটেরিয়াল দ্বারা তৈরী, তাই উইন্ডিং এ উৎপন্ন ম্যাগনেটিক ফ্লাক্স এর কিছু অংশ করেও আবিষ্ট হয় এবং কোরে একটি সার্কুলেটিং কারেন্ট প্রবাহিত হয়। কোরে প্রবাহিত সার্কুলেটিং কারেন্টের জন্য ট্রান্সফরমার কোরে যে লস হয় তাকে এডি কারেন্ট লস বলে।

এডি কারেন্ট লসের সূত্র:
এডি কারেন্ট লসে, Pe​=Ke​⋅Bm2​⋅f2⋅t2⋅V

এখানে,
Bm = সর্বোচ্চ ফ্লাক্স ডেনসিটি,
f = সরবরাহ ফ্রিকোয়েন্সি,
V = কোরের আয়তন,
Ke= এডি কারেন্ট লস ধ্রুবক,
t = কোর পদার্থের পুরুত্ব।

এডি কারেন্ট লস কমানোর উপায়: সলিড কোর ব্যবহারের পরিবর্তে ল্যামিনেশন যুক্ত পাতলা ইস্পাতের পাত দিয়ে তৈরি কোর ব্যবহার করে এডি কারেন্ট লস কমানো যায়।

কপার লস:

ট্রান্সফরমারের উইন্ডিং এর অভ্যন্তরীণ রেজিস্ট্যান্স এর কারণে ট্রান্সফরমারের ভিতর দিয়ে কারেন্ট প্রবাহিত হওয়ার সময় যে I2*R লস হয় তাকে ট্রান্সফরমারের কপার লস বলে। কপার লস ট্রান্সফরমারের লোড পরিবর্তনের সাথে পরিবর্তন হয়।

কপার লসের গাণিতিক সূত্র:
কপার লস, Pcu = I2*R

এখানে,
I = লোড কারেন্ট এবং
R = ট্রান্সফরমারের সমতুল্য রেজিস্ট্যান্স।

কপার লস কমানোর উপায়:
১. উইন্ডিং এ উচ্চ পরিবাহিতা সম্পন্ন পরিবাহীর ব্যবহার,
২. সঠিক শীতলীকরণ পদ্ধতি ব্যবহার এর মাধ্যমে লোড বৃদ্ধির কারণে উইন্ডিং এর রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ।

ট্রান্সফরমারের কোর লস এবং কপার লস ছাড়াও আরো দুই ধরনের লস হয়, যথা: ১. স্ট্রে লস এবং ২. ডাই-ইলেকট্রিক লস।

১. স্ট্রে লস:

ট্রান্সফরমারের ধাবত অংশ যেমন মেইন ট্যাংক, সাপোর্ট ইত্যাদির এডি কারেন্ট প্রবাহের ফলে ট্রান্সফরমারে স্ট্রে লস হয়।

২. ডাই-ইলেকট্রিক লস:

ট্রান্সফরমারের ইন্সুলেশন ম্যাটেরিয়ালে পরিবর্তনশীল চুম্বক ক্ষেত্রের প্রভাবে ডাই-ইলেকট্রিক লস হয়।

ট্রান্সফরমারে স্ট্রে লস এবং ডাই-ইলেকট্রিক লসের পরিমাণ খুবই সামান্য হলেও সঠিক ম্যাটেরিয়াল এবং ডিজাইন পছন্দ না করা হলে এই লসের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেতে পারে।

ট্রান্সফরমারের মোট লস ক্যালকুলেশন:

মোট লস = কোর লস + কপার লস
মোট লস = হিস্টেরেসিস লস + এডি কারেন্ট লসে+ কপার লস
Ptotal = Pcore + Pcopper
Ptotal = Ph + Pe + Pcopper

ট্রান্সফরমারের দক্ষতা নির্ণয়:

ট্রান্সফরমারের দক্ষতা নির্ণয়ের জন্য নিচের সূত্র ব্যবহার করা হয়।

দক্ষতা=\frac{অউটপুট\; পাওয়ার}{ইনপুট\; পাওয়ার}×১০০\%

দক্ষতা=\frac{অউটপুট\; পাওয়ার}{অউটপুট\; পাওয়ার+মোট\; লস}×১০০\%

বিবেচ্য বিষয়:
১. যখন ট্রান্সফরমারের পরিবর্তনশীল লস অর্থাৎ কপার লস স্থির লস অর্থাৎ কোর লসের সমান হয় তখন ট্রান্সফরমার সর্বোচ্চ দক্ষতায় পরিচালিত হয়।
২. লোড এবং লোডের পাওয়ার ফ্যাক্টর ট্রান্সফরমারের লস এবং দক্ষতাকে সরাসরি প্রভাবিত করে।

উপসংহার:

ট্রান্সফরমারের লস সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকলে লস হ্রাসের মাধ্যমে ট্রান্সফরমারকে দক্ষতার সহিত পরিচালনা করা সম্ভব হবে। কোর লস এবং কপার লস কমানোর মাধ্যমে ট্রান্সফরমারের দক্ষ, নির্ভরযোগ্য এবং মৃতব্যায়ী অপারেশন নিশ্চিত হবে এবং বিদুৎ শক্তি সাশ্রয় করা যাবে।

ট্রান্সফরমারের ওপেন সার্কিট, শর্ট সার্কিট এবং ব্যাক টু ব্যাক টেস্ট

ভূমিকা:

বিভিন্ন পরিস্থিতে ট্রান্সফরমারের দক্ষতা, লস এবং সক্ষমতা নির্ণয়ে ট্রান্সফরমার টেস্টিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ট্রান্সফরমারে যে টেস্ট গুলি করা হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো:

  • ওপেন সার্কিট টেস্ট,
  • শর্ট সার্কিট টেস্ট এবং
  • ব্যাক টু ব্যাক টেস্ট।

এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা ট্রান্সফরমারের ওপেন সার্কিট, শর্ট সার্কিট এবং ব্যাক টু ব্যাক টেস্ট সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

ওপেন সার্কিট টেস্ট:

ট্রান্সফরমারের কোর লস এবং নো লোড প্যারামিটারসমূহ নির্ণয় করার জন্য নো-লোড টেস্ট করা হয়।

উদ্দেশ্য:
১. ট্রান্সফরমারের কোর লস (এডি কারেন্ট লস এবং হিস্টেরিসিস লস) নির্ণয় করা।
২. নো লোড প্যারামিটার তথা ম্যাগনেটাইজিং রিয়াক্ট্যান্স (Xm) এবং কোর লস রেজিস্ট্যান্স (R0) নির্ণয় করা।

পদ্ধতি:

Open Circuit Test of a Single Phase Transformer
Open Circuit Test of a Single Phase Transformer


১. প্রাইমারী উইন্ডিং (হাই ভোল্টেজ) খোলা রাখা হয় অর্থাৎ কোনো লোড যুক্ত থাকে না।।
২. সেকেন্ডারি উইন্ডিং (লো ভোল্টেজ) এ রেটেড ভোল্টেজ সরবরাহ করা হয়।
৩. নো লোড অবস্থায় ট্রান্সফরমারের ব্যবহৃত পাওয়ার (P0), নো লোড ভোল্টেজ (V1) এবং নো লোড কারেন্ট (I0) পরিমাপ করা হয়। পরবর্তীতে এই পরিমাপকৃত তথ্য হতে ম্যাগনেটাইজিং রিয়াক্ট্যান্স (Xm) এবং কোর লস রেজিস্ট্যান্স (Rc) নির্ণয় করা হয়।

ক্যালকুলেশন:

১. কোর লস (P0) = নো-লোড ইনপুট পাওয়ার।

২. নো-লোড পাওয়ার ফ্যাক্টর, Cos\theta=\frac{P_0}{V_1\times I_0}

৩. ম্যাগনেটাইজিং কারেন্ট, Im​ = I0​Sinθ

৪. কোর লস কারেন্ট, Ic = I0​Cosθ

৫. কোর লস রেজিস্ট্যান্স, R0 = V1/IC

৬. ম্যাগনেটাইজিং রিয়াক্ট্যান্স, Xm = V1/Im

সুবিধা:
১. পরীক্ষা পদ্ধতি সহজ।
২. লোডিং ছাড়াই ট্রান্সফরমারের কোর লস নির্ণয় করা যায়।

শর্ট সার্কিট টেস্ট:

ট্রান্সফরমারের পরিবর্তনশীল লস এবং সমতুল্য সার্কিটের প্যারামিটারসমূহ নির্ণয়ের জন্য শর্ট সার্কিট টেস্ট করা হয়।

উদ্দেশ্য:
১. ফুল লোড অবস্থায় ট্রান্সফরমারের কপার লস নির্ণয় করা।
২. ট্রান্সফরমারের সমতুল্য রেজিস্ট্যান্স (Req) এবং সমতুল্য রিয়াক্ট্যান্স (Xeq) নির্ণয় করা।

পরীক্ষা পদ্ধতি:

Short Circuit Test of a Single Phase Transformer
Short Circuit Test of a Single Phase Transformer


১. ট্রান্সফরমারের সেকেন্ডারি (লো ভোল্টেজ) প্রান্তকে একটি অ্যামিটারের সাহায্যে শর্ট করা হয়।
২. ট্রান্সফরমারের প্রাইমারী প্রান্তে রেটেড ভোল্টেজের ৫-১০% ভোল্টেজ সরবরাহ করা হয় যাতে শর্ট কৃত ট্রান্সফরমারের সেকেন্ডারি প্রান্ত দিয়ে রেটেড কারেন্ট প্রবাহিত হয়।
৩. পরীক্ষা চলাকালে নির্মক্ত রিডিং নেয়া হয়

  • প্রাইমারী ভোল্টেজ (V1),
  • শর্ট সার্কিট কারেন্ট (Is) এবং
  • ইনপুট পাওয়ার বা শর্ট সার্কিট পাওয়ার (Psc)।

ক্যালকুলেশন:

১. কপার লস, Pcu = শর্ট সার্কিট ইনপুট পাওয়ার (শর্ট সার্কিট টেস্টে কোর লসের পরিমান খুবই কম থাকায় তা অগ্রাহ্য করা হয়)

২. সমতুল্য রেজিস্ট্যান্স, Req = Pcu/Is2

৩. সমতুল্য রিয়্যাক্ট্যান্স,
X_{eq}=\sqrt{{(\frac{V_1}{I_s})}^2-R_{eq}^2}

সুবিদা:
১. ফুল লোড প্রয়োগ না করেই ফুল লোডের কপার লস নির্ণয় করা যায়।
২. ট্রান্সফরমারের সমতুল্য সার্কিটের উপাদান সমূহ সহজে নির্ণয় করা যায়।

ব্যাক টু ব্যাক টেস্ট:

ওপেন সার্কিট টেস্ট এবং শর্ট সার্কিট টেস্ট হতে ট্রান্সফরমারের কোর লস, কপার লস পরিমাপ করা গেলেও ফুল লোডে ট্রান্সফরমারের তাপীয় দক্ষতা কেমন হয় তো জানা যায় না। ব্যাক টু ব্যাক টেস্ট এর মাধ্যমে একটু ট্রান্সফরমার ফুল লোডে কেমন আচরণ করে এবং লোড বৃদ্ধির সাথে সাথে তাপমাত্রার পরিবর্তন বা বৃদ্ধি কেমন হয় তা জন্য যায়। এই টেস্টকে সাম্পনার টেস্টও (Sumpner’s Test) বলা হয়ে থাকে।

উদ্দেশ্য:
১. কোর এবং কপার লস উভয় পরিমাপ করা।
২. বাস্তব ব্যবহারিক ক্ষেত্রে ট্রান্সফরমারের দক্ষতা নির্ণয় এবং তাপমাত্রা এর পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করা।

পরীক্ষা পদ্ধতি:

Back to Back or Sumpner's Test
Back to Back or Sumpner’s Test


১. পরীক্ষার জন্য সম্পূর্ণ একই ধরনের দুটি ট্রান্সফরমার ব্যবহার করা হয়।
২. ট্রান্সফরমার দুটির প্রাইমারী উইন্ডিংকে মেইন সাপ্লাইয়ের সাথে প্যারালাল এ সংযোগ করা হয়।
৩. ট্রান্সফরমার দুটির সেকেন্ডারি উইন্ডিংকে একে অপরের সাথে সিরিজে বিপরীতমুখী ভাবে লুপ আকারে সংযোগ করা হয়।
৪. ট্রান্সফরমারের সেকেন্ডারি প্রান্ত অন্য আরেকটি উৎস হতে অক্সিলারি সাপ্লাই দেয়া হয়।
৫. ওয়াট মিটার W1 হতে দুই ট্রান্সফরমারের মোট কোর লস পাওয়া যায় এবং ওয়াট মিটার W2 হতে দুই ট্রান্সফরমারের মোট কপার লস পাওয়া যায়।
সুতারং, প্রতিটি ট্রান্সফরমারের মোট লস,
W = (W1 + W2)/2

তাপমাত্রা বৃদ্ধি নির্ণয়:
পরিক্ষা চলাকালে ট্রান্সফরমারের তেলের তাপমাত্রা নির্দিষ্ট সময় পর পর পরিমাপ করা হয়। উভয় ট্রান্সফরমারকে ব্যাক টু ব্যাক অবস্থায় দির্ঘ সময় পরিচালনারর ফলে ট্রান্সফরমারের অয়েলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং ফুল লোডে ট্রান্সফরমারের তাপমাত্রা কেমন হবে তা সম্পরকে ধারনা পাওয়া যায়।

সুবিদা:
১. কোনো ধরনের লোড সংযোগ ছাড়াই ফুল লোডে ট্রান্সফরমারের আচরন সম্পর্কে জানা যায়।
২. সুক্ষভাবে দক্ষতা এবং তাপমত্রার প্রভাব নির্ণয় করা যায়।

উপসংহার:

ট্রান্সফরমারের দক্ষতা, নির্ভরযোগ্যতা এবং সক্ষমতা নির্ণয়ে ট্রান্সফরমার টেস্টিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। ওপেন সার্কিট টেস্ট এবং শোর্ট সার্কিট টেস্ট হতে ট্রান্সফরমারের লস সমূহ এবং সমতুল্য সারকিটের প্যারামিটার সমূহ জানা যায়। অন্যদিকে ব্যাক টু ব্যাক টেস্ট হবে ফুল লোডে ট্রান্সফরমার কেমন আচরন করবে তা জানা যায়।

ট্রান্সফর্মারের ভোল্টেজ রেগুলেশন কি?

ভূমিকা:

ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার সিস্টেমে ভোল্টেজ রেগুলেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বিশেষ করে ট্রান্সফর্মার ডিজাইন এবং এর দক্ষতা পর্যালোচনার ক্ষেত্রে ভোল্টেজ রেগুলেশন অন্যতম বিবেচ্য বিষয়। পরিবর্তনশীল লোডে ট্রান্সফর্মারের সেকেন্ডারি প্রান্তের ভোল্টেজ স্থির রাখার ক্ষমতাকেই ভোল্টেজ রেগুলেশন এর মাধ্যমে পরিমাপ করা হয়।

এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা ভোল্টেজ রেগুলেশন কি, ভোল্টেজ রেগুলেশন এর ফর্মুলা, কারণ, ভোল্টেজ রেগুলেশন এর ধরন এবং ভোল্টেজ রেগুলেশন দুর করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

ভোল্টেজ রেগুলেশন:

নির্দিষ্ট নো লোড ভোল্টেজ এর জন্য পরিবর্তনশীল লোডে ফুল লোড ভোল্টেজ শতকরা কি পরিমাণ পরিবর্তন হয় তাকে ভোল্টেজ রেগুলেশন রেগুলেশন বলে।

ভোল্টেজ রেগুলেশন এর মাধ্যমে নো লোড ভোল্টেজ এবং ফুল লোড ভোল্টেজ এর পার্থক্যকে পরিমাপ করা হয় এবং একে ফুল লোড ভোল্টেজ এর শতকরা হারে প্রকাশ করা হয়।

Transformer Equivalent Circuit
Transformer Equivalent Circuit

ভোল্টেজ রেগুলেশন এর ফর্মুলা:

ভোল্টেজ রেগুলেশন (%) = \frac {নো\; লোড\; ভোল্টেজ-ফুল\; লোড\; ভোল্টেজ}{ফুল\; লোড\; ভোল্টেজ}×১০০%

ভোল্টেজ রেগুলেশন (%) = \frac {V_{no-load}-V_{full-load}}{V_{full-load}}×১০০%

ভোল্টেজ রেগুলেশনের প্রকারভেদ:

১. ধনাত্মক ভোল্টেজ রেগুলেশন: যখন ফুল লোড ভোল্টেজ এর মান নো লোড ভোল্টেজ থেকে কম হয় তখন ধনাত্মক ভোল্টেজ রেগুলেশন ঘটে। ইন্ডাকটিভ বা রেজিস্টিভ লোডের ক্ষেত্রে ধনাত্মক ভোল্টেজ রেগুলেশন তৈরি হয়।

২. ঋনাত্মক ভোল্টেজে রেগুলেশন: যখন ফুল লোড ভোল্টেজ এর মান নো লোড ভোল্টেজ থেকে বেশি হয় তখন ঋণাত্মক ভোল্টেজ রেগুলেশন ঘটে। ক্যাপাসিটিভ লোডের ক্ষেত্রে ধনাত্মক ভোল্টেজ রেগুলেশন তৈরি হয়।

ভোল্টেজ রেগুলেশন এর তাৎপর্য:

১. লোডের দক্ষতা নির্ণয়: ভোল্টেজ রেগুলেশন কম হলে লোডে সব সময় নির্ধারিত সীমার মধ্যে ভোল্টেজ সরবরাহ করা যাবে ফলে লোড দক্ষ ভাবে পরিচালিত হবে।

২. নির্ভরযোগ্যতা: সেনসিটিভ যন্ত্রপাতিতে বিদুৎ সরবরাহের জন্য নির্ভরযোগ্য উৎস প্রয়োজন যার ভোল্টেজ রেগুলেশন অবশ্যই কম হবে।

৩. নিরাপত্তা ও সুরক্ষা: ওভার ভোল্টেজ এবং আন্ডার ভোল্টেজ থেকে সুরক্ষার ক্ষেত্রে ভোল্টেজ রেগুলেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ভোল্টেজ রেগুলেশনের প্রভাবকসমূহ:

১. লোডের পাওয়ার ফ্যাক্টর: ভোল্টেজ রেগুলেশনে বিভিন্ন ধরনের পাওয়ার ফ্যাক্টর আলাদা আলাদা ভাবে প্রভাব বিস্তার করে, যেমন:

  • ল্যাগিং পাওয়ার ফ্যাক্টর: পাওয়ার ফ্যাক্টর এর মান ল্যাগিং হলে ভোল্টেজ ড্রপের মান বৃদ্ধি পায়। ফলে ভোল্টেজ রেগুলেশনও বৃদ্ধি পায়।
  • লিডিং পাওয়ার ফ্যাক্টর: পাওয়ার ফ্যাক্টর এর লিডিং হলে লাইনে ভোল্টেজ ড্রপ হওয়ার পরিবর্তে ভোল্টেজের মান বৃদ্ধি পায় ফলে ঋণাত্মক ভোল্টেজ রেগুলেশন ঘটে।
  • ইউনিটি পাওয়ার ফ্যাক্টর: ইউনিটি পাওয়ার ফ্যাক্টর এর ক্ষেত্রে ভোল্টেজ ড্রপের মান সর্বনিম্ন হয় ফলে ভোল্টেজ রেগুলেশনও সর্বনিম্ন হয়।

২. ট্রান্সফরমারের ইম্পিডেন্স: ট্রান্সফরমারের সমতুল্য ইম্পিডেন্স ভোল্টেজ রেগুলেশনকে সরাসরি প্রভাবিত করে। ইম্পিডেন্স যত বেশি হবে ভোল্টেজ রেগুলেশনও তত বৃদ্ধি পাবে।

৩. লোড কারেন্ট: লোড কারেন্টের মান বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে ভোল্টেজ ড্রপ বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোল্টেজ রেগুলেশনের মানও বৃদ্ধি পায়।

ভোল্টেজ রেগুলেশন কমানোর উপায়:

১. নিম্ন ইম্পিড্যান্স বিশিষ্ট ট্রান্সফর্মারের ব্যবহার: ট্রান্সফর্মারের ইম্পিড্যান্স কম হলে ভোল্টেজ ড্রপ কম হবে ফলে ভোল্টেজ রেগুলেশন মানও কম হবে।

২. লোডের পাওয়ার ফ্যাক্টর বৃদ্ধি: লোডের পাওয়ার ফ্যাক্টর বৃদ্ধি পেলে ভোল্টেজ ড্রপ হ্রাস পায় এবং ভোল্টেজ রেগুলেশনও হ্রাস পায়। লোডে ক্যাপাসিটর ব্যাংক বা সিনক্রনাস কন্ডেনসার ব্যবহার করে লোডের পাওয়ার ফ্যাক্টর বৃদ্ধি করা যায়।

৩. ট্রান্সফরমারে ট্যাপ চেঞ্জার এর ব্যবহার: ট্যাপ চেঞ্জার ব্যবহার করে লোড পরিবর্তনের সাথে সাথে ট্রান্সফরমারের সেকেন্ডারি প্রান্তের ভোল্টেজ পরিবর্তন করা যায়। ফলে ভোল্টেজ রেগুলেশন নিয়ন্ত্রণে থাকে।

৪. ভোল্টেজে রেগুলেটর ব্যবহার: ভোল্টেজ রেগুলেটর ব্যবহার করে লোডে সব সময় নির্দিষ্ট ভোল্টেজ সরবরাহ করা সম্ভব হয়। ফলে ভোল্টেজ রেগুলেশন নিয়ন্ত্রণে থাকে।

৫. ভালো মানের পরিবাহীর ব্যবহার: কম রেজিস্ট্যান্স যুক্ত তার ব্যবহার করলে ভোল্টেজ ড্রপ কম হবে এবং ভোল্টেজ রেগুলেশন হ্রাস পাবে।

উপসংহার:

বৈদ্যুতিক সিস্টেমে দক্ষ, নির্ভরযোগ্য এবং নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রে ভোল্টেজ রেগুলেশন এর মান কম থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উপরে উল্লেখিত কৌশন এবং উপায় সমূহ অবলম্বন করে সহজেই ভোল্টেজ রেগুলেশন এর মান হ্রাস করা সম্ভব।

ট্রান্সফর্মারের টার্ন রেশিও এবং ট্রান্সফরমেশন রেশিও কি?

ভূমিকা:
বৈদ্যুতিক পাওয়ার সিস্টেমে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হচ্ছে ট্রান্সফর্মার যা বৈদ্যুতিক নেটওয়ার্কের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বিদুৎ সরবরাহের জন্য ব্যবহার করা হয়। ট্রান্সফর্মারের দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো টার্ন রেশিও এবং ট্রান্সফরমেশন রেশিও যা ট্রান্সফর্মারের দক্ষতা এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মারের টার্ন রেশিও এবং ট্রান্সফরমেশন রেশিও সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

১. টার্ন রেশিও: ট্রান্সফর্মারের প্রাইমারী উইন্ডিং এর টার্ন সংখ্যা (Np) এবং সেকেন্ডারি উইন্ডিং এর টার্ন সংখ্যার (Ns) অনুপাতকে টার্ন রেশিও বলে। টার্ন রেশিওকে a দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

সূত্র: টার্ন রেশিও,

a = \frac{প্রাইমারী\; উইন্ডিং\; এর\; টার্ন\; সংখ্যা}{সেকেন্ডারি\; উইন্ডিং\; এর\; টার্ন\; সংখ্যা} = \frac{N_P}{N_S}

টার্ন রেশিও এর তাৎপর্য:
১. ট্রান্সফর্মারের প্রাইমারী এবং সেকেন্ডারি প্রান্তের ভোল্টেজ নির্ধারণ করে।
২. টার্ন রেশিও যত বেশি হবে প্রাইমারী এবং সেকেন্ডারি প্রান্তের ভোল্টেজ পার্থক্যও তত বেশি হবে।

উদাহরণ: যদি একটি ট্রান্সফর্মারের প্রাইমারী উইন্ডিং এ ১০০ টি টার্ন এবং সেকেন্ডারি উইন্ডিং এ ১০ টি টার্ন থাকে তবে ট্রান্সফর্মারটির টার্ন রেশিও,

a = \frac{১০০}{১০} = ১০

ট্রান্সফরমেশন রেশিও: ট্রান্সফর্মারের সেকেন্ডারি ভোল্টেজ (Vs) এবং প্রাইমারী ভোল্টেজ (Vp) এর অণুপাত বা প্রাইমারী কারেন্ট (Ip) এবং সেকেন্ডারি কারেন্ট (Is) এর অণুপাতকে ট্রান্সফরমেশন রেশিও বলে। একে k দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

সূত্র: ট্রান্সফরমেশন রেশিও,

k = \frac{সেকেন্ডারি\; ভোল্টেজ}{প্রাইমারী\; ভোল্টেজ} = \frac{V_S}{V_P}

= \frac{প্রাইমারী\; কারেন্ট}{সেকেন্ডারি\; কারেন্ট} = \frac{I_P}{I_S}

ট্রান্সফরমেশন রেশিও এর তাৎপর্য:
১. প্রাইমারী ভোল্টেজ এবং কারেন্টের সাথে সেকেন্ডারি ভোল্টেজ এবং কারেন্টের সম্পর্ক নির্ণয় করে।
২. পাওয়ার বিতরণ এবং লোড এর বৈশিষ্ট বুঝতে সহায়তা করে।

উপসংহার:
ট্রান্সফর্মারের টার্ন রেশিও এবং ট্রান্সফরমেশন রেশিও একে অপরের সাথে ওতপ্রোত ভাবে সংযুক্ত পৃথক দুটি ধারণা। দক্ষভাবে ট্রান্সফর্মার ডিজাইন, পরিচালন এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এই দুটি বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কোর টাইপ এবং শেল টাইপ ট্রান্সফর্মারের পার্থক্য

ভূমিকা:
ট্রান্সফর্মারের কোর এবং উইন্ডিং এর গঠনের উপর ভিত্তি করে ট্রান্সফর্মারকে কোর টাইপ এবং শেল টাইপ ট্রান্সফর্মারে বিভক্ত করা হয়। ব্যবহারিক ক্ষেত্রে উভয় ট্রান্সফর্মারেরই কিছু বৈশিষ্ট্য এবং সুবিধা-অসুবিধা রয়েছে। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা কোর টাইপ এবং শেল টাইপ ট্রান্সফর্মারের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করবো।

কোর টাইপ এবং শেল টাইপ ট্রান্সফর্মারের পার্থক্য:
১. কোরের গঠন:
কোর টাইপ: উইন্ডিং সমূহ কোরকে ঘিরে রাখে। কোর আয়তাকার বা সিলিনড্রিক্যাল আকারের হয়ে থাকে। কোরের দুইটি উলম্ব বহু থাকে যা দুই পার্শ্বের দুটি আনুভূমিক বাহুর (ইয়োক) মাধ্যমে যুক্ত থাকে। উভয় উলম্ব বাহুর উপর উইন্ডিং প্যাঁচানো হয়।
শেল টাইপ: কোর সমূহ উইন্ডিংকে ঘিরে রাখে। কোরে তিনটি উলম্ব বাহু রয়েছে। মাঝের বাহুতে উইন্ডিং প্যাঁচানো হয় এবং বাইরের দুই বাহু চুম্বকীয় ফ্লাক্স প্রবাহের পথ হিসেবে কাজ করে।

২. চুম্বকীয় ফ্লাক্স প্রবাহের পথ:
কোর টাইপ: চুম্বকীয় ফ্লাক্স কোরের মাধ্যমে প্রবাহিত হয় এবং ইয়োক এর মাধ্যমে ফিরে আসে। ফলে চুম্বকীয় ফ্লাক্স প্রবাহের জন্য শুধুমাত্র একটি চুম্বকীয় পথ পাওয়া যায়।
শেল টাইপ: চুম্বকীয় ফ্লাক্স মাঝের বাহু দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দুই পার্শ্বের দুই বাহু দিয়ে ফিরে আসে। ফলে চুম্বকীয় ফ্লাক্স প্রবাহের জন্য দুটি চুম্বকীয় পথ পাওয়া যায়।

৩. উইন্ডিং এর গঠন:
কোর টাইপ: উইন্ডিং সিলিনড্রিকাল আকৃতির হয়ে থাকে এবং কোরের এক বাহুতে প্রাইমারী এবং অন্য বাহুতে সেকেন্ডারি উইন্ডিং প্যাঁচানো হয়।
শেল টাইপ: কোরের একই বাহুতে একটি উইন্ডিং এর উপর আরেকটি উইন্ডিং প্যাঁচানো হয়। ফলে ভালো চুম্বকীয় ফ্লাক্স এর কাপলিং ভালো হয় এবং লিকেজ ফ্লাক্স হ্রাস পায়।

৪. কোর-কয়েলের সম্পর্ক:
কোর টাইপ: উইন্ডিং সমূহ আলাদা আলাদা বাহুতে থাকায় সহজেই উইন্ডিং এর পর্যবেক্ষণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা গেলেও উইন্ডিং সমূহ উন্মুক্ত থাকায় তা কম নিরাপদ।
শেল টাইপ: উইন্ডিং সমূহ কোরের মধ্যে আবদ্ধ থাকায় অধিকতর নিরাপত্তা পাওয়ায় গেলেও পর্যবেক্ষণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ জটিল হয়।

৫. যান্ত্রিক গঠন:
কোর টাইপ: বিশেষ করে শর্ট সার্কিট অবস্থায় যান্ত্রিক শক্তি কম থাকে।
শেল টাইপ: অধিক শক্তিশালী এবং শর্ট সার্কিট অবস্থায় সহজে ক্ষতিগ্রস্থ হয় না।

৬. শীতলীকরণ দক্ষতা:
কোর টাইপ: উইন্ডিং সমূহ কোরের বাইরের দিকে থাকায় সহজেই শীতল হয়। ফলে ভালো শীতলীকরণ দক্ষতা পাওয়া যায়।
শেল টাইপ: উইন্ডিং সমূহ কোরের মধ্যে আঁটসাঁট হয়ে থাকায় শীতলীকরণ জটিল হয়। ফলে শীতলীকরণ দক্ষতা কম পাওয়া যায়।

৭. উৎপাদন এবং ব্যয়:
কোর টাইপ: গঠন সহজ হওয়ার উৎপাদন সহজ হয় এবং খরচ কম।
শেল টাইপ: গঠন অপেক্ষাকৃত জটিল এবং বেশি ব্যয়বহুল।

৮. ব্যবহার:
কোর টাইপ: হাই ভোল্টেজ এবং হাই পাওয়ার ইকুইপমেন্ট এর জন্য ব্যবহার উপযোগী। যেমন: পাওয়ার ট্রান্সফর্মার।
শেল টাইপ: লো ভোল্টেজ এবং লো পাওয়ার ইকুইপমেন্ট এর জন্য ব্যবহার উপযোগী। যেমন: বিতরণ ট্রান্সফর্মার।

একনজরে কোর টাইপ এবং শেল টাইপ ট্রান্সফর্মারের পার্থক্যের তালিকা:

পার্থক্যর বিষয়কোর টাইপ ট্রান্সফর্মারশেল টাইপ ট্রান্সফর্মার
কোরের গঠনকোর উইন্ডিং এর ভিতরে থাকে।উইন্ডিং কোরের ভিতরে থাকে।
চুম্বকীয় পথএকক চুম্বকিয় পথ থাকে।দুটি চুম্বকিয় পথ থাকে।
উইন্ডিং এর গঠনকোরের দুই বাহুর চারপাশে সিলিন্ড্রিক্যাল আকারে থাকে।কোরের মাঝের বাহুতে এক উইন্ডিং এর উপর অন্য উইন্ডিং স্যান্ডউইচ আকারে প্যাঁচানো থাকে।
শীতলীকরণ দক্ষতাসহজে শিতল হয়।সহজে শিতল হয় না।
যান্ত্রিক শক্তিকম শক্তিশালীবেশি শক্তিশালী
ব্যবহারউচ্চ ভোল্টেজ এবং উচ্চ পাওয়ার সিস্টেম।কম ভোল্টেজ এবং কম পাওয়ার সিস্টেম।
নির্মান ব্যয়কম।বেশি।

উপসংহার:
ব্যবহারিক ক্ষেত্রে কোর টাইপ বা শেল টাইপ ট্রান্সফর্মার পছন্দের ক্ষেত্রে আলদা আলাদা কিছু সুভিদা বা বৈশিষ্ট্যকে গুরুত্ব দেয়া হয়। ব্যবহারের ধরন অনুযায়ী সঠিক ট্রান্সফর্মার বাছাই করার মাধ্যমে দক্ষ, নির্ভরযোগ্য এবং নিরাপদ বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হয়।

প্রেশার রিলিফ ভালভ কি এবং ট্রান্সফর্মারে এটি কেনো ব্যবহার করা হয়?

PRV কি?

প্রেশার রিলিফ ভালভ (Pressure Relief Valve) বা PRV ট্রান্সফর্মারের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা ডিভাইস যা ট্রান্সফর্মারের ভিতরে ফল্ট, অতিরিক্ত তাপমাত্রা বা অয়েল এর আয়তন বৃদ্ধির কারণে সৃষ্ট অত্যধিক চাপ নির্গমন করে ট্রান্সফর্মারকে ড্যামেজ হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে।

PRV এর কাজ:

১. চাপ নির্গমন: অস্বাভাবিক অবস্থা যেমন ফল্ট বা অয়েল বিস্ফোরণের কারণে ট্রান্সফর্মারের অভ্যন্তরে অত্যধিক চাপ তৈরি হলে PRV এর মাধ্যমে সহজেই চাপ নির্গমন হয়ে যায় এবং সম্ভাব্য দুর্ঘটনা এড়ানো যায়।

২. ট্রান্সফর্মার সুরক্ষা: ট্রান্সফর্মারকে স্ট্রাকচারাল ডেমেজ হতে রক্ষা করে এবং ট্রান্সফর্মারের অভ্যন্তরে চাপ নিরাপদ মাত্রায় রেখে ট্রান্সফর্মারের দক্ষ পরিচালনা নিশ্চিত করে।

৩. অয়েল লিকেজ রোধ: অত্যধিক চাপে ট্রান্সফর্মারের মেইন ট্যাংক এবং গ্যাসকেট ক্ষতিগ্রস্ত হয় অয়েল লিকেজ হয়। PRV মেইন ট্যাংক এবং গাসকেটকে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া থেকে রক্ষা করে অয়েল লিকেজ রোধ করে।

PRV এর কার্যপ্রণালী:

সাভাবিক অবস্থায়: সাভাবিক অপারেশনের সময় ট্রান্সফর্মারের অভ্যন্তরীণ চাপ নিরাপদ সীমার মধ্যেই থাকে ফলে PRV বন্ধ (Closed) অবস্থায় থাকে। ফলে ট্রান্সফর্মারের নিশ্ছিদ্র অবস্থা অক্ষত থাকে।

অস্বাভাবিক অবস্থায়: যখন কোনো কারণে ট্রান্সফর্মারের অভ্যন্তরে চাপের পরিমার নির্ধারিত নিরাপদ মাত্রা অতিক্রম করে তখন PRV খুলে(Open) যায় যাতে চাপ সৃষ্টিকারী গ্যাস বা বাষ্প বের হয়ে যেতে পারে।

অভ্যন্তরীণ চাপ কমে নিরাপদ সীমায় আসলে পুনরায় PRV বন্ধ (Closed) হয়ে যায় এবং ট্রান্সফর্মার পুনরায় নিশ্ছিদ্র অক্ষত অবস্থায় ফিরে আসে।

PRV এর গঠন:

১. ভালভ বডি: এটি চরম আবহাওয়ার উচ্চ চাপ সহনুপযোগী মরিচারোধী ইস্পাত দিয়ে তৈরি করা হয়।

২. স্প্রিং মেকানিজম: অস্বাভাবিক অবস্থায় সাথে ভালভ খুলে তা নিশ্চিত করে।

৩. সিল: সাভাবিক অবস্থায় অয়েল লিকেজ রোধ করে।

৪. ডিসচার্জ আউটলেট: অবাঞ্ছিত গ্যাস বা বাস্পকে ট্রান্সফর্মার হতে নিরাপদে নির্গমনের ব্যবস্থা করে।

PRV ব্যবহারের সুবিধা:

১. বাড়তি নিরাপত্তা: ট্রান্সফর্মারকে বিস্ফোরণের হাত থেকে রক্ষা করে স্থাপনা এবং ব্যক্তিবর্গকে নিরাপদ রাখে।

২. যন্ত্রপাতির স্থায়িত্ব বৃদ্ধি: ট্রান্সফর্মারের মেইন ট্যাংক এর চাপ নিরাপদ সীমার মধ্যে থাকায় ট্রান্সফর্মারের যন্ত্রপাতি অক্ষত থাকে এবং ফলে ট্রান্সফর্মার দীর্ঘস্থায়ী হয়।

৩. ব্যয় হ্রাস: দুর্ঘটনা কম ঘটায় রক্ষণাবেক্ষণ কম প্রয়জন হয়। ফলে রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় হ্রাস পায়।

PRV এর রক্ষণাবেক্ষণ:

১. নিয়মিত ক্ষয়, প্রতিবন্ধকতা পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

২. ভালভ এর চাপ এর সেটিং সঠিক আছে কিনা তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

৩. ডিসচার্জ আউটলেট থেকে ময়লা, ধুলাবালি দুর করতে হবে।

উপসংহার:

প্রেশার রিলিফ ভালভ (Pressure Relief Valve) বা PRV ট্রান্সফর্মারের একটি গুরুত্বপুর্ন সুরক্ষা ডিভাইস যা ট্রান্সফর্মারকে অতিরিক্ত অভ্যন্তরীণ চাপ হতে সুরক্ষা দেয়। আটকে থাকা গ্যাস এবং বাষ্পের নিরাপদ নির্গমন নিশ্চিত করে ট্রান্সফর্মারের দক্ষতা, নিরাপত্তা এবং নির্ভরযোগ্যতা সুনিশ্চিত করে। PRV এর সঠিক অপারেশন নিশ্চিত করতে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ অত্যাবশ্যক।

ট্রান্সফর্মারের নেমপ্লেটে কি কি তথ্য থাকে? বিস্তারিত

ভূমিকা:
ট্রান্সফর্মারের নেমপ্লেট ট্রান্সফর্মার সম্পর্কে বিভিন্ন গুরুতবপূর্ণ তথ্য প্রদান করে, যেমন: অপারেশনাল প্যারামিটার, রেটিং এবং স্পেসিফিকেশন। ট্রান্সফর্মার স্থাপন, পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এই তথ্যগুলো অত্যাবশ্যকীয়। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা ট্রান্সফর্মারের নেমপ্লেটে যেসব তথ্য থাকে যা নিয়ে বিস্তারিত জানতে পারবো।

Power Transformer
“Power transformer” by Paul Chernikhowsky is licensed under CC BY 2.0

ট্রান্সফর্মারের নেমপ্লেটে যেসব তথ্য থাকে:
১. রেটেড পাওয়ার: ট্রান্সফর্মার সর্ব্বোচ কি পরিমান পাওয়ার নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে লোডে সরবরাহ করতে পারে তাকে ট্রান্সফর্মারের রেটেড পাওয়ার বলে। সাধারণত kVA বা MVA তে ট্রান্সফর্মারের রেটেড পাওয়ার প্রকাশ করা হয়।

২. প্রাইমারী এবং সেকেন্ডারি ভোল্টেজ রেটিং: ট্রান্সফর্মারের প্রাইমারী বা ইনপুট ভোল্টেজ এবং সেকেন্ডারি বা আউটপুট ভোল্টেজ নেমপ্লেটে উল্লেখ থাকে। কোনো ট্রান্সফর্মার এর নেমপ্লেটে 33kv/11kV লেখা থাকার অর্থ হচ্ছে ট্রান্সফর্মারটির প্রাইমারী ভোল্টেজ 33kV এবং সেকেন্ডারি ভোল্টেজ 11kV।

৩. ফ্রিকোয়েন্সি: ট্রান্সফর্মারটি যে ফ্রিকোয়েন্সিতে পরিচালনার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে সেই ফ্রিকোয়েন্সি হার্জ(Hz) এ উল্লেখ করা থাকে।

৪. ভেক্টর গ্রুপ: ভেক্টর গ্রুপের মাধ্যমে ট্রান্সফর্মারের উইন্ডিং সমূহের গঠন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। বহুল ব্যবহৃত দুইটি ভেক্টর গ্রুপ হলো Dyn1 এবং Dyn11.

৫. ইম্পিডেন্স ভোল্টেজ: পার্সেন্টেজ ইম্পিডেন্স ট্রান্সফর্মারের ফল্ট কারেন্টের উপর বড় প্রভাব ফেলে এবং একে ট্রান্সফর্মারের ইম্পিডেন্স এর কারণে সৃষ্ট ভোল্টেজ ড্রপের পার্সেন্টেজ আকারে প্রকাশ করা হয়।

৬. শীতলীকরণ পদ্ধতি: ফুল লোডে ট্রান্সফর্মারের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ট্রান্সফর্মারে বিভিন্ন ধরনের শীতলীকরণ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় যেমন ONAN, ONAF, OFAN, OFAF ইত্যাদি।

৭. তাপমাত্রা বৃদ্ধি: সর্বোচ্চ কত তাপমাত্রায় ট্রান্সফর্মার নিরাপদে পরিচালিত করা যাবে এবং লোড বৃদ্ধির সাথে সাথে ট্রান্সফর্মারের তাপমাত্রা কি পরিমাণ বৃদ্ধি পায় তাকে টেম্পারেচার রাইজ বলে।

৮. ইন্সুলেশন লেভেল: ট্রান্সফর্মারে ব্যবহৃত ইন্সুলেশন সমহু সর্বোচ্চ কত ভোল্টেজ পর্যন্ত সহ্য করতে পারে তাই ইন্সুলেশন লেভেল।

৯. ট্যাপ চেঞ্জার এর তথ্য: ট্রান্সফর্মার এ কোন ধরনের ট্যাপ চেঞ্জার ব্যবহার করা হয়েছে তা নেমপ্লেটে উল্লেখ থাকে। ব্যবহৃত ট্যাপ চেঞ্জার পদ্ধতি গুলি হলো অন লোড ট্যাপ চেঞ্জার এবং অফ লোড ট্যাপ চেঞ্জার।

১০. প্রস্তুতকারকের তথ্য: যে প্রতিষ্ঠান ট্রান্সফর্মার তৈরি করেছে তার তথ্যও ট্রান্সফর্মারের নেমপ্লেটে উল্লেখ থাকে।

১১. সিরিয়াল নম্বর: প্রস্তুতকৃত প্রতিটি ট্রান্সফর্মারেরই একটি স্বতন্ত্র সিরিয়াল নম্বর থাকে যা ভবিষ্যতে ট্রান্সফর্মারেকে চিহ্নিত করতে, রক্ষণাবেক্ষণ করতে এবং ওয়ারেন্টি এর কাজে ব্যবহৃত হয়।

১২. আর্ন্তজাতিক স্ট্যান্ডার্ড: ট্রান্সফর্মার প্রস্তুতিতে বিভিন্ন ধরনের আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করা হয় যেমন IEC, IEEE ইত্যাদি।

১৪. ট্রান্সফর্মারের ওজন: নেমপ্লেটে ট্রান্সফর্মারের ওজন কত তাও উল্লেখ থাকে।

১৫. ফেজ এর ধরন: ট্রান্সফর্মার সিঙ্গেল ফেজ নাকি থ্রি ফেজ তাও উল্লেখ থাকে।

১৬. বিবিধ তথ্য: উপর উল্লেখিত তথ্য ছাড়াও বিশেষক্ষেত্রে আরো কিছু অতিরিক্ত তথ্য যেমন নয়েজ লেভেল, উচ্চতা, ফল্ট কারেন্টের স্থায়িত্ব ইত্যাদিও উল্লেখ থাকে।

উপসংহার:
ট্রান্সফর্মারের নেমপ্লেট ট্রান্সফর্মারের সক্ষমতা, সীমাবদ্ধতা এবং রক্ষণাবেক্ষণ এর সর্ম্পকে গুরুত্বপুর্ন তথ্য প্রদান করে। এটা ট্রান্সফর্মারের নিরাপদ অপারেশন নিশ্চিত করে এবং দুর্ঘটনা রোধ করে।

বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মারের বিভিন্ন অংশের নাম এবং তাদের কাজ: বিস্তারিত

ভূমিকা:

বৈদ্যুতিক সিস্টেমের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন অংশ হচ্ছে ট্রান্সফরমার যা বৈদ্যুতিক নেটওয়ার্কের মধ্যে বিভিন্ন ভোল্টেজে বিদুৎ সরবরাহের কাজে ব্যবহৃত হয়। একটি ট্রান্সফর্মার বিভিন্ন অংশের সমন্বয়ে গঠিত হয়ে থাকে যার প্রতিটি অংশের আলাদা আলাদা কাজ রয়েছে। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মারের বিভিন্ন অংশ সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

একটি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মারের বিভিন্ন অংশগুলো হলো:
১. ট্রান্সফর্মার কোর:

গঠন: লেমিনেটেড সিলিকন স্টিল দিয়ে তৈরি করা হয় যাতে এডি কারেন্ট লস এবং হিস্টেরিসিস লস হয়।
উদ্দেশ্য: ট্রান্সফর্মার এর উইন্ডিং দ্বারা উৎপন্ন ফ্লাক্স প্রবাহের চুম্বকীয় পথ প্রদান করে। কোরের মাধ্যমে ফ্লাক্স ট্রান্সফর্মারের এক উইন্ডিং হতে অন্য উইন্ডিং এ আবিষ্ট হয়।

২. ট্রান্সফর্মার উইন্ডিং:

গঠন: ট্রান্সফর্মারের কোরের উপর যে তামা বা এলুমিনিয়ামের তারের কুণ্ডলী ব্যবহার করা হয় তাকে উইন্ডিং বলে। ট্রান্সফর্মারে দুই ধরনের উইন্ডিং থাকে, ১. প্রাইমারী উইন্ডিং এবং ২. সেকেন্ডারি উইন্ডিং। উইন্ডিং সাধারনত সিলিনড্রিক্যাল বা আয়তাকার আকারে তৈরি করা হয়।
উদ্দেশ্য: ভোল্টেজকে এক লেভেল থেকে অন্য লেভেলে পরিবর্তন করার জন্য প্রয়োজনীয় ফ্লাক্স তৈরিতে ট্রান্সফর্মারের উইন্ডিং ব্যবহৃত হয়।

৩. ট্রান্সফর্মার ট্যাংক:

গঠন: শক্তিশালী ইস্পাত দিয়ে ট্রান্সফর্মার ট্যাংক তৈরি করা হয় যাতে ট্রান্সফরমার বাহ্যিক আঘাত, বৈরী আবহাওয়া ইত্যাদিতেও টিকে থাকতে পারে।
উদ্দেশ্য: ট্রান্সফর্মার কোর এবং উইন্ডিংসমূহকে ঘিরে রেখে তাদের যান্ত্রিক সুরক্ষা প্রদান করে। বাহ্যিক আঘাত হতে ট্রান্সফর্মারের অভ্যন্তরের বিভিন্ন অংশকে রক্ষা করে এবং ট্রান্সফর্মার অয়েলের আধার হিসেবে কাজ করে।

৪. কনজারভেটর ট্যাংক:

গঠন: এটিও ট্রান্সফর্মার ট্যাংক এর ন্যায় শক্তিশালী ইস্পাত দিয়ে তৈরি করা হয়।
উদ্দেশ্য: তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে ট্রান্সফর্মারের মেইন ট্যাংকের অয়েল এর আয়তন বৃদ্ধি পেলে অয়েল মেইন ট্যাংক হতে কনজারভেটর ট্যাংকে প্রবেশ করে।

৫. ট্রান্সফর্মার অয়েল:

গঠন: উচ্চ ডাই-ইলেক্ট্রিক শক্তি সম্পন্ন খনিজ বা সিনথেটিক অয়েলকে ট্রান্সফর্মার অয়েল হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
উদ্যেশ্য: ট্রান্সফর্মার অয়েল ট্রান্সফর্মারের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অংশের মধ্যে বৈদ্যুতিক ইন্সুলেশন প্রদান করে এবং ট্রান্সফর্মার শীতলীকরণ করে।

৬. রেডিয়েটর:

গঠন: ট্রান্সফর্মারের মেইন ট্যাংকের সাথে ফাঁপা ডানার মতো ইস্পাতের তৈরি অংশই রেডিয়েটর।

উদ্দেশ্য: ট্রান্সফর্মার অয়েল হতে তাপ অপসারণের জন্য অধিক ক্ষেত্রফল প্রদান করে ট্রান্সফর্মার শীতল হতে সহায়তা করে। ট্রান্সফর্মারের মেইন ট্যাংকের গরম তেল রেডিয়েটর এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে শীতল হয় এবং পুনরায় মেইন ট্যাংকে প্রবেশ করে ট্রান্সফর্মার শীতল রাখে।

৭. বুশিং:

গঠন: উচ্চ বৈদ্যুতিক ইন্সুলেশন যুক্ত শক্তিশালী চিনামটি দিয়ে ট্রান্সফর্মারের বুশিং তৈরি করা হয়।
উদ্দেশ্য: ট্রান্সফর্মারের উইন্ডিং হতে টার্মিনাল বের করা এবং টার্মিনাল সমূহকে মেইন ট্যাংক হতে বৈদ্যুতিক ইন্সুলেশন প্রদান করা।

৮. ব্রেদার:

ব্রেদার এর সাহায্যে ট্রান্সফর্মার অয়েল এর আয়তন পরিবর্তনের সাথে সাথে বাইরে হতে ট্রান্সফর্মারে বাতাস প্রবেশ করে বা বাইরে বের হয়। বাতাস প্রবেশের সময় বাতাসের জলীয়বাষ্প শোষণের জন্য ব্রেদারে সিলিকা জেল ব্যবহার করা হয়।

৯. বুখলজ রিলে:

ট্রান্সফর্মারের মেইন ট্যাংক এবং কনজারভেটর ট্যাংকের মাঝে বুখলজ রিলে স্থাপন করা হয়। ফল্ট এর কারণে ট্রান্সফর্মারের অভ্যন্তরীণ অয়েল এর অস্বাভাবিক প্রবাহ এবং গ্যাসের উৎপত্তি সনাক্ত করতে বুখলজ রিলে ব্যবহার করা হয়। ট্রান্সফর্মার সুরক্ষায় এটি অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন একটু উপাদান।

১০. এক্সপ্লোশন ভেন্ট:

ফল্ট এর সময় ট্রান্সফর্মারের ভিতরের অতিরিক্ত চাপ বের করে দিয়ে ট্রান্সফর্মারকে রক্ষা করার জন্য এক্সপ্লোশন ভেণ্ট ব্যবহার করা হয়।

১১. কুলিং ফ্যান:

বৃহৎ আকারের ট্রান্সফর্মারকে শীতলীকরণ এর জন্য কুলিং ফ্যান ব্যবহার করা হয়।

১২. পরিমাপক যন্ত্র:

ট্রান্সফর্মারের তেলের পরিমাণ, অভ্যন্তরীণ চাপ এবং তাপমাত্রা পরিমাপের জন্য বিভিন্ন ধরনের পরিমাপক যন্ত্র ব্যবহার করা হয়।

১৩. ট্যাপ চেঞ্জার:

ট্রান্সফর্মারের সেকেন্ডারি প্রান্তের ভোল্টেজকে সমন্বয় করার জন্য ট্যাপ চেঞ্জার ব্যবহার করা হয়।

উপসংহার:

ট্রান্সফর্মারের দক্ষ পরিচালনার, রক্ষণাবেক্ষণ এবং মেরামতের ক্ষেত্রে এর প্রতিটি অংশ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন। ট্রান্সফর্মারের প্রতিটি অংশই ট্রান্সফর্মারের দক্ষতা, নির্ভরযোগ্যতা এবং নিরাপত্তায় মুখ্য ভূমিকা পালন করে।

ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফর্মার এবং পাওয়ার ট্রান্সফর্মার এর পার্থক্য কি?

ভূমিকা(Introduction):
বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মারকে তার ব্যবহার, ভোল্টেজ লেভেল, লোডের ধরন ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে শ্রেণীবিন্যাস করা হয় থাকে। ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফর্মার এবং পাওয়ার ট্রান্সফর্মার এদের মধ্যে অন্যতম যা ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার সিস্টেমে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। চলুন দেখে নেই ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফর্মার এবং পাওয়ার ট্রান্সফর্মার এর মধ্যে মূল পার্থক্য গুলি কি কি:

১। উদ্দেশ্য

ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফর্মার: বৈদ্যুতিক বিতরণ ব্যবস্থায় বিভিন্ন ধরনের গ্রাহক যেমন, আবাসিক, বাণিজ্যিক বা শিল্পে বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে ব্যবহৃত হয়। উচ্চ ভোল্টেজকে নিম্ন ভোল্টেজে রূপান্তরের জন্য স্টেপ ডাউন ট্রান্সফর্মার হিসেবে কাজ করে।
পাওয়ার ট্রান্সফর্মার: বিদুৎ কেন্দ্র উৎপাদিত বিদ্যুৎ উচ্চ ভোল্টেজে রূপান্তর করে দূরবর্তী স্থানে সঞ্চালনের জন্য পাওয়ার ট্রান্সফর্মার ব্যবহৃত হয়। এটি সাধারণত বিদুৎ কেন্দ্র বা সঞ্চালন সিস্টেমে স্থাপন করা হয়।

২। ভোল্টেজ লেভেল

ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফর্মার: নিম্ন ভোল্টেজ লেভেলে পরিচালিত হয়। সাধারণত ৩০কেভি এর কম ভোল্টেজে হতে গ্রাহককে ৪০০/২৩০ ভোল্টেজে বিদুৎ সরবরাহ প্রদানের জন্য ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফর্মার ব্যবহৃত হয়।
পাওয়ার ট্রান্সফর্মার: উচ্চ ভোল্টেজ যেমন ৩০ কেভি বা তার বেশি ভোল্টেজে বিদুৎ সঞ্চালনের জন্য পরিচালিত হয়। বাংলাদেশে ব্যবহৃত সঞ্চালন ভোল্টেজ গুলি হলো: ৩৩ কেভি, ১৩২ কেভি, ২৩০ কেভি, ৪০০ কেভি ইত্যাদি।

৩। লোডের ধরন

ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফর্মার: ভোক্তার চাহিদা অনুযায়ী পরিবর্তনশীল লোডে পরিচালিত হয়। পরিবর্তনশীল লোডে ব্যবহারের জন্য হালকা লোডে ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফর্মারের দক্ষতাকে খুবই গুরুত্ত্বসহকারে বিবেচনা করা হয়।
পাওয়ার ট্রান্সফর্মার: সাধারণত ফুল লোড বা ফুল লোডের কাছাকাছি লোডে পরিচালিত হোয়। তাই পাওয়ার ট্রান্সফর্মারের ক্ষেত্রে ফুল লোডের দক্ষতাকে বিবেচনা করা হয়।

৪। সাইজ এবং ক্যাপাসিটি

ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফর্মার: আকারে ছোট এবং কম সক্ষমতা সম্পন্ন হয়ে থাকে, সাধারণত ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফর্মার সর্বচ্চ ৫০০কিঃওঃ পর্যন্ত হয়।
পাওয়ার ট্রান্সফর্মার: আকারে বড় এবং বেশি সক্ষমতা সম্পন্ন হয়ে থাকে। পাওয়ার ট্রান্সফর্মার ১ মেঃওঃ বা তার থেকে বড় আকারের হয়ে থাকে।

৫। দক্ষতা

ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফর্মার: যেহেতু ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফর্মারের মাধ্যমে পরিবর্তনশীল লোডে সরবরাহ প্রদান করা হয় এবং অধিকাংশ সময়ই হালকা লোডে পরিচালিত হয় তাই দক্ষ এবং সাস্রয়িভাবে পরিচালনার জন্য নো-লোড লসকে বিশেষ গুরুত্ত সহকারে বিবেচনা করা হয়।
পাওয়ার ট্রান্সফর্মার: যেহেতু পাওয়ার ট্রান্সফর্মার বেশিরভাগ সময় ফুল লোডে পরিচালিত হয় তাই দক্ষতা পরিমাপের ক্ষেত্রে ফুল লোড লস এবং নো-লোড লস উভয়ই গুরুত্ত্বসহকারে বিবেচনা করা হয়।

৬। শীতলীকরণ পদ্ধতি

ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফর্মার: আকারে ছোট হওয়ায় ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফর্মারে কোনো ফোর্স কুলিং ব্যবহার করা হয় না। সাধারণত প্রাকৃতিক এয়্যার-কুলিং বা অয়েল কুলিং ব্যবহৃত হয়।
পাওয়ার ট্রান্সফর্মার: আকারে বৃহৎ হওয়ায় প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয়, তাই শীতলীকরণের জন্য বৃহৎ রেডিয়েটরসহ ফোর্স কুলিং ব্যবহার করা হয়।

৭। ডিজাইন

ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফর্মার: পাওয়ার ট্রান্সফর্মারের তুলনায় ডিজাইন এবং গঠন সহজ। ডিজাইনের সময় সহযে রক্ষণাবেক্ষণ এবং স্থানান্তরের কথা বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
পাওয়ার ট্রান্সফর্মার: এর ডিজাইন অপেক্ষাকৃত জটিল এবং অতি উচ্চ ভোল্টেজ ও কারেন্ট এর কারণে অধিক নিরাপত্তা বিধানের কথা বিবেচনা করে ডিজাইন করতে হয়।

৮। স্থাপন

ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফর্মার: সাধারণত লোড ছেন্টারের কাছে যেমনঃ বৈদ্যুতিক পোল, বাসা বারির আঙ্গিনা ইত্যদিতে স্থাপন করা হয়।
পাওয়ার ট্রান্সফর্মার: বিদ্যুৎ কেন্দ্র বা সঞ্চালন উপকেন্দ্রে পাওয়ার ট্রান্সফর্মার স্থাপন করা হয়।

৯। ব্যয় এবং রক্ষণাবেক্ষণ

ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফর্মার: এর সহজ ডিজাইন এবং ছোট আকারের জন্য এটি কম ব্যায়বহুল এবং খুব সহজেই রক্ষণাবেক্ষণ করা যায়।
পাওয়ার ট্রান্সফর্মার: জটিল ডিজাইন এবং আকারে বড় হওয়ায় এটি বেশি ব্যায়বহুল এবং রক্ষণাবেক্ষণ জটিল। দক্ষ পরিচালনার জন্য নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয়।

সারসংক্ষেপ
পার্থক্যর বিষয়পাওয়ার ট্রান্সফর্মারডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফর্মার
উদ্দেশ্যসঞ্চালন নেটওার্কে ব্যবহৃত হয়বিতরণ নেটওার্কে ব্যবহৃত হয়।
ভোল্টেজ লেভেল৩৩ কেভি বা তার বেশি।৩৩ কেভি এর থেকে কম।
লোডের ধরনফুল লোড।পরিবর্তনশীল লোড।
আকার এবং ক্যাপাসিটিবড়(১ মেঃও বা তার বেশি)।ছোট(৫০০ কেঃওঃ বা তার কম।
দক্ষতাফুল লোডে বেশি।হালকা লোডে বেশি।
শীতলীকরণ পদ্ধতিফোর্স কুলং।প্রাকৃতিক কুলিং।
স্থাপনউৎপাদন বা সঞ্চালন উপকেন্দ্র।গ্রাহক স্থাপনার কাছে।
ব্যায়ব্যায়বহুলকম ব্যায়বহুল।
উপসংহার

ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফর্মার এবং পাওয়ার ট্রান্সফর্মার এর মূল পার্থক্য তাদের ব্যবহার এবং লোডের আকারের উপর নির্ভর করে। উচ্চ লোডে দক্ষ অপারেশনের জন্য সঞ্চালন প্রান্তে পাওয়ার ট্রান্সফর্মার ব্যবহৃত হয়, যেখানে পরিবর্তনশীল লোডে গ্রাহককে সরবরাহ প্রদানের জন্য ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফর্মার ব্যবহৃত হয়। একটি নির্ভরযোগ্য এবং দক্ষ বৈদ্যুতিক সিস্টেমের জন্য ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফর্মার এবং পাওয়ার ট্রান্সফর্মার উভয়ই অত্যাবশ্যকীয় উপাদান।

ট্রান্সফরমারে কি কি টেস্ট করা হয়?

ভূমিকা(Introduction):

ইলেক্ট্রিক্যাল সিস্টেমে ট্রান্সফরমার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান এবং সেই কারণেই নিয়মিত টেস্টিং মাধ্যমে ট্রান্সফর্মারের দক্ষতা, নির্ভরযোগ্যতা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। ট্রান্সফর্মারের টেস্টসমূহকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়ঃ ১। রুটিন টেস্ট এবং ২। টাইপ টেস্ট। এছাড়াও, বিশেষ পরিস্থিতিতে কিছু বিশেষ টেস্ট করা হয়ে থাকে যা স্পেশাল টেস্ট নামে পরিচিত। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা ট্রান্সফর্মারের বিভিন্ন টেস্ট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

1. টাইপ টেস্ট(Type Test):

প্রস্তুতকারক কর্তৃক ট্রান্সফর্মার বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের পূর্বে ট্রান্সফর্মারের যে প্রোটোটাইপ তৈরি করা হয় সেসব প্রোটোটাইপ ট্রান্সফর্মারের ডিজাইন এবং আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ডের সাথে সামঞ্জস্যতা প্রমাণের জন্য টাইপ টেস্ট করা হয় থাকে। এই টেস্টগুলি কোনো প্রোডাকশন গ্রুপের সব ট্রান্সফর্মারে না করে কিছু স্যাম্পল ইউনিটের উপর করা হয়। এই টেস্টের অন্তর্গত কিছু পরিচিত টেস্ট হলো:

  1. তাপমাত্রা বৃদ্ধি পরীক্ষা(Temperature Rise Test): ফুল লোডে তাপমাত্রা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা পরীক্ষা করার জন্য ট্রান্সফর্মারের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পরীক্ষা করা হয়। টেস্ট চলাকালীন ট্রান্সফর্মারে ফুল লোড প্রয়োগ করা হয় এবং টেম্পারেচার সেন্সরের মাধ্যমে উইন্ডিং এবং অয়েলের তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করা হয়।
  2. ইম্পালস্‌ টেস্ট(Impulse Test): বজ্রপাত এবং সুইচিং সার্জ হতে সুরক্ষিত থাকার ক্ষমতা পরীক্ষার জন্য ইম্পালস্‌ টেস্ট করা হয়। এই টেস্টে ট্রান্সফর্মারে হাই-ভোল্টেজ ইম্পালস্‌ ওয়েভ প্রয়োগ করে ট্রান্সফর্মারের ইন্সুলেশনের কার্যকারিতা পর্যবেক্ষন করা হয়।
  3. নয়েজ লেভেল টেস্ট(Noise Level Test): ভিভিন্ন পরিস্থিতিতে ট্রান্সফর্মার কর্তৃক উৎপন্ন শব্দের মাত্রা পরীক্ষার জন্য নয়েজ লেভেল টেস্ট করা হয়।
  4. হারমনিক কনটেন্ট টেস্ট(Harmonic Content Test): ট্রান্সফর্মার চলার সময় উৎপন্ন হারমনিক পরিমাপ করার জন্য হারমনিক কনটেন্ট টেস্ট করা হয়।
2. রুটিন টেস্ট(Routine Test):

ফ্যাক্টরি হতে ডেলিভারির পূর্বে প্রতিটি ট্রান্সফর্মারে রুটিন টেস্ট করা হয়। প্রতিটি ট্রান্সফর্মারের দক্ষতা এবং নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য নিশ্চিত করার জন্য নিম্নবর্নিত টেস্টসমূহ করা হয়ঃ

  1. উইন্ডিং রেজিস্ট্যান্স টেস্ট(Winding Resistance Test): ট্রান্সফর্মারের প্রাইমারী এবং সেকেন্ডারি উইন্ডিং এর রেজিস্ট্যান্স পরিমাপের জন্য উইন্ডিং রেজিস্ট্যান্স টেস্ট করা হয়। ট্রান্সফর্মারের উইন্ডিং এ কোন লুজ কানেকশন এবং ড্যামেজ আছে কিনা তা এই পরীক্ষার মাধ্যমে জানা জায়। এই টেস্টে ট্রান্সফর্মারের উইন্ডিং এর মধ্য দিয়ে ডিসি কারেন্ট প্রবাহিত করে উইন্ডিং এর ভোল্টেজ ড্রপ পরিমাপের মাধ্যমে উইন্ডিং এর রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ করা হয়।
  2. ভোল্টেজ রেশিও টেস্ট(Voltage Ratio Test): ট্রান্সফর্মারের ডিজাইন এর চাহিদা মোতাবেক ট্রান্সফর্মারের ভোল্টেজ রেশিও ঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষার জন্য ভোল্টেজ রেশিও টেস্ট করা হয়। রেশিও পরিমাপের জন্য একটি জানা উৎস হতে ট্রান্সফর্মারের প্রাইমারী উইন্ডিং এ ভোল্টেজ সরবরাহ করে সেকেন্ডারি উইন্ডিং এ ভোল্টেজ পরিমাপ করা হয়।
  3. নো-লোড টেস্ট(No Load test or Open Circuit Test):  ট্রান্সফর্মারের কোর লস(Core Loss) বা আইরন লস(Iron Loss) পরিমাপের জন্য নো-লোড টেস্ট করা হয়। এই টেস্টে ট্রান্সফর্মারে সেকেন্ডারি উইন্ডিং খোলা রেখে প্রাইমারী উইন্ডিং রেটেড ভোল্টেজ প্রয়োগ করা হয় এবং ট্রান্সফর্মারের ব্যবহৃত পাওয়ার পরিমাপ করা হয়। এই পরিমাপকৃত পাওয়ারই কোর লস।
  4. শর্ট সার্কিট টেস্ট(Short Ciruit Test): ট্রান্সফর্মারের কপার লস এবং উইন্ডিং ইম্পিডেন্স পরিমাপ করার জন্য শর্ট সার্কিট টেস্ট করা হয়। এই টেস্টে ট্রান্সফর্মারের লো- ভোল্টেজ উইন্ডিংকে শর্ট করে প্রাইমারী উইন্ডিং এ রেটেড ভোল্টেজ এর ৩-৫% ভোল্টেজ প্রয়োগ করা হয় এবং ট্রান্সফর্মারের কারেন্ট ও ব্যবহৃত পাওয়ার পরিমাপ করা হয়। পরিমাপকৃত ডাটা হতে কপার লস এবং ইম্পিডেন্স পরিমাপ করা হয়।
  5. ইন্সুলেশুন রেজিস্ট্যান্স টেস্ট(Insulation Resistance Test): ট্রান্সফর্মারের কোর, উইন্ডিং এবং ট্যাংকের মধ্যাকার ইন্সুলেশন রেজিস্ট্যান্স পরীক্ষার জন্য এই টেস্ট করা হয়। মেগার(Megger or Mega Ohm Meter) এর মাধ্যমে ট্রান্সফর্মারের ইন্সুলেশনে উচ্চ ডিসি ভোল্টেজ প্রয়োগ করা হয় এবং ইন্সুলেসন রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ করা হয়।
  6. ডাই-ইলেক্ট্রিক স্ট্রেস টেস্ট(Dielectric Stress Test): ওভার ভোল্টেজ প্রতিরোধে ট্রান্সফর্মারের সক্ষমতা পরীক্ষার জন্য ডাই-ইলেকট্রিক স্ট্রেস টেস্ট করা হয়। উচ্চ ভোল্টেজ প্রয়োগের মাধ্যমে এই টেস্ট করা হয়ে থাকে।
3. স্পেশাল টেস্ট(Special Test):

কোনো সুনির্দিষ্ট সমস্যা চিহ্নিত করেন বা ক্রেতার চাহিদার ভিত্তিতে টাইপ টেস্ট এবং রুটিন টেস্টের বাইরেও কিছু বিশেষ টেস্ট করা হয়ে থাকে, যেমনঃ

  1. পার্শিয়াল ডিসচার্জ টেস্ট(Partial Discharge Test): ট্রান্সফর্মারের পার্শিয়াল ডিসচার্জ পরিমাপ করার জন্য এই টেস্ট করা হয়। এই টেস্ট এর মাধ্যমে ট্রান্সফর্মারের কোনো সুনির্দিষ্ট স্থানের ইন্সুলেশনের ব্রেক-ডাউন নির্নয় করা হয়। ট্রান্সফর্মারে উচ্চ ভোল্টেজ প্রয়োগ করে বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে কাঙ্ক্ষিত স্থানের পার্শিয়াল ডিসচার্জ পরিমাপ করা হয়।
  2. লিকেজ রিয়্যাক্টেন্স টেস্ট(Leakage Reactance Test): ট্রান্সফর্মারের ভোল্টেজ রেগুলেশনে লিকেজ রিয়্যাক্টেন্স তীব্র নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। লিকেজ রিয়্যাক্টেন্সের মান বেশি হলে ভোল্টেজ ড্রপের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং ট্রান্সফর্মারের সরবরাহ প্রান্তে কাঙ্ক্ষিত ভোল্টেজ পাওয়া যায় না। ট্রান্সফর্মারের লিকেজ রিয়্যাক্টেন্স পরিমাপ করার জন্য এই টেস্ট করা হয়।
  3. মেকানিক্যাল স্ট্রেংথ টেস্ট(Mechanical Strength Test): এই টেস্টের মাধ্যমে ট্রান্সফর্মারের কাঠিন্য এবং বাহ্যিক আঘাত সহ্য করার ক্ষমতা পরীক্ষা করা হয়।
  4. টেন ডেল্টা টেস্ট(Ten Delta Test): এই টেস্টকে Dissipation Factor Test ও বলা হয়ে থাকে। আদর্শ ইন্সুলেশন অপরিবাহী এবং তা ট্রান্সফর্মারের ভিতরে ক্যাপাসিটরের ন্যায় আচরণ করে। ফলে যখন ট্রান্সফর্মারের ইন্সুলেশনের উপর ভোল্টেজ প্রয়োগ হয় তখন এর ভিতর দিয়ে রিয়্যাক্টিভ কারেন্ট প্রবাহিত হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে ইন্সুলেশন ধর্ম ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং রেজিস্টিভ বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। ট্রান্সফরমারের ইন্সুলেশনে একটি লো-ফ্রিকোয়েন্সি এসি-ভোল্টেজ প্রয়োগ করে ইন্সুলেশন এর ডিজিপেশন ফ্যাক্টর পরিমাপ করা হয়। অর্থাৎ, টেন ডেল্টা টেস্টের মাধ্যমে ইন্সুলেশন কতটা রিয়্যাক্টিভ বা রেজিস্টিভ বৈশিষ্টের তা নির্নয় করা হয়।
উপসংহার(Conclusion):

ট্রান্সফর্মারের দির্ঘস্থায়িত্ত্ব, নিরাপত্তা এবং দক্ষ পরিচালনার ক্ষেত্রে নিয়মিত পরীক্ষার কোনো বিকল্প নেই। রুটিন টেস্ট উৎপাদিত প্রতিটি ট্রান্সফর্মারের গুনগত মান নিশ্চিত করে, টাইপ টেস্ট ডিজাইন অনুযায়ী উৎপাদন নিশ্চিত করে এবং স্পেশাল টেস্টের মাধ্যমে বিশেষ চাহিদা এবং বৈশিষ্ট অর্জন করা হয়। এই টেস্টগুলি করার মাধ্যমে ট্রান্সফরমারের নির্ভযোগ্য এবং নিরাপদ পরিচালন সুনিশ্চিত হয়।