বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্রে কি কি যন্ত্রপাতি থাকে?

ভূমিকা:

উপকেন্দ্র বৈদ্যুতিক পাওয়ার সিস্টেমের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা যা ভোল্টেজের রূপান্তর করে, বিদুৎ বিতরণ করে এবং বৈদ্যুতিক সিস্টেমের স্থিতিশীলতা রাখে। কাজের ধরনের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের উপকেন্দ্র রয়েছে, যেমন: স্টেপ অপ উপকেন্দ্র, স্টেপ ডাউন উপকেন্দ্র, বিতরণ উপকেন্দ্র ইত্যাদি।

এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্রের প্রধান অংশসমূহ এবং তাদের কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

উপকেন্দ্রের অংশসমূহ:

১. পাওয়ার ট্রান্সফরমার:

চাহিদা অনুযায়ী ভোল্টেজকে নিম্ন লেভেল হতে উচ্চ লেভেল বা উচ্চ লেভেল হতে নিম্ন লেভেলে রূপান্তরের জন্য ট্রান্সফরমার ব্যবহার করা হয়। সাধারণত উৎপাদন প্রান্তের উৎপাদিত নিম্ন ভোল্টেজকে সঞ্চালনের জন্য স্টেপ অপ ট্রান্সফরমারের মাধ্যমে উচ্চ ভোল্টেজে রূপান্তর করা হয় এবং বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্র হতে গ্রাহক প্রান্তে নিম্ন ভোল্টেজ সরবরাহের জন্য স্টেপ ডাউন ট্রান্সফরমারের মাধ্যমে উচ্চ ভোল্টেজকে নিম্ন ভোল্টেজে রূপান্তর করা হয়।

২. বাস বার:

1000114906
“Bus bars and inductive filters at substation near Denver International Airport, Colorado, 2006” by Greg Goebel is licensed under CC BY-SA 2.0

সাধারনত উচ্চ পরিবাহিতা সম্পন্ন তামা বা অ্যালুমিনিয়ামের বার বা তার দিয়ে বাসবার তৈরি করা হয় যার মাধ্যমে ইনকামিং লাইন হতে উপকেন্দ্রে পাওয়ার গৃহীত হয় এবং আউটগোয়িং লাইনের মাধ্যমে পাওয়ার বিতরণ করা হয়।

৩. সার্কিট ব্রেকার:

সাভাবিক অবস্থায় বা ফল্ট এর সময় সয়ংক্রিয় ভাবে বা ম্যানুয়ালি বৈদ্যুতিক সরবরাহ বিচ্ছিন্ন করার জন্য জন্য সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করা হয়। সার্কিট ব্রেকার বৈদ্যুতিক সিস্টেমের নিরাপত্তার অত্যাবশ্যকীয় উপাদান যা স্থাপনা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম এবং ব্যক্তিবর্গকে সম্ভাব্য ক্ষতির হতে সুরক্ষা প্রদান করে।

৪. আইসোলেটর:

RNDZ 1 110

“Isolator”
 by Buryka is licensed under CC BY-SA 3.0

উপকেন্দ্রের কোনো অংশকে বিদুৎ হতে পরিপূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন করার জন্য আইসলেটর ব্যবহার করা হয়। আইসোলটরে কোনো আর্ক নির্বাপক ব্যবস্থা থাকে না ফলে আইসোলেটর শুধুমাত্র নো লোড বা হালকা লোডে পরিচালনা করা হয়।

৫. রিলে:

তাৎক্ষণিক বৈদ্যুতিক ফল্ট নির্ণয় এবং সার্কিট ব্রেকারকে পরিচালিত হওয়ার সংকেত প্রদানের জন্য রিলে ব্যবহার করা হয়। রিলে হতে সংকেত পেলেই সার্কিট ব্রেকার সয়ংক্রিয়ভাবে খুলে (Open) যায়। রিলেকে উপকেন্দ্রের মস্তিষ্ক বলা হয়। বিভিন্ন ধরনের রিলে রয়েছে, যেমন: ওভার কারেন্ট রিলে, ডিফারেনশিয়াল রিলে, ডিসটেন্স রিলে ইত্যাদি।

৬. ইন্সট্রুমেন্ট ট্রান্সফরমার:

বৈদ্যুতিক কারেন্ট এবং ভোল্টেজকে সহজে পরিমাপের জন্য ইন্সট্রুমেন্ট ট্রান্সফরমার এর মাধ্যমে নিরাপদে পরিমাপযোগ্য মানে রূপান্তর করা হয়। দুই ধরনের ইন্সট্রুমেন্ট ট্রান্সফরমার রয়েছে:

  • ১. কারেন্ট ট্রান্সফরমার (CT):উচ্চ কারেন্টকে পরিমাপযোগ্য নিম্ন মানে রূপান্তরের জন্য কারেন্ট ট্রান্সফরমার ব্যবহার করা হয়।
  • ২. পোটেনশিয়াল ট্রান্সফরমার (PT):উচ্চ ভোল্টেজকে পরিমাপযোগ্য এবং নিরাপদ মানে রূপান্তরের জন্য পোটেনশিয়াল ট্রান্সফরমার ব্যবহার করা হয়।

৭. লাইটনিং অ্যারেস্টার:

উপকেন্দ্রের বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিকে বজ্রপাতের আক্রমন হতে রক্ষার জন্য লাইটনিং অ্যারেস্টার ব্যবহার করা হয়। বজ্রপাতের ফলে সৃষ্ট অতি উচ্চ সার্জ ভোল্টেজেকে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিতে প্রবেশ করতে না দিয়ে লাইটনিং অ্যারেস্টার এর মাধ্যমে নিরাপদে ভূমিতে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

৮. সার্জ ডাইভার্টার:

উপকেন্দ্রের যন্ত্রপাতিকে ফল্ট এর কারণে সৃষ্ট সার্জ ভোল্টেজের হাত থেকে রক্ষার জন্য সার্জ ডাইভার্টার ব্যবহার করা হয়।

৯. ক্যাপাসিটির ব্যাংক এবং রিয়্যাক্টর:

উপকেন্দ্রের ভোল্টেজ নিয়ন্ত্রণ এবং পাওয়ার ফ্যাক্টর উন্নয়নের জন্য ক্যাপাসিটির ব্যাংক এবং রিয়্যাক্টর ব্যবহার করা হয়।

১০. গ্রাউন্ডিং সিস্টেম:

ফল্ট এর সময় ফল্ট কারেণ্ট প্রবাহের নিরাপদ পথ প্রদান করা জন্য গ্রাউন্ডিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। এতে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি উচ্চ ফল্ট কারেন্ট প্রবাহের এর ক্ষতি হতে সুরক্ষিত থাকে।

১১. অক্সিলিয়ারি পাওয়ার সাপ্লাই:

বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্রের নিজস্ব ব্যবহার অক্সিলিয়ারি পাওয়ার সাপ্লাই। উপকেন্দ্রে এক বা একাধিক অক্সিলিয়ারি ট্রান্সফরমার থাকে যার মাধ্যমে শুধুমাত্র উপকেন্দ্রের নিজস্ব লোড যেমন বাতি, ফ্যান, শীততাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র এবং উপকেন্দ্রের অন্যান্য সকল যন্ত্রপাতিতে সরবরাহ প্রদান করা হয়।

১২. ডিসি সিস্টেম:

ব্ল্যাকআউট এর সময় উপকেন্দ্রের উপকেন্দ্রকে আলোকিত করতে এবং গুরুত্বপুর্ন যন্ত্রপাতিতে বিদুৎ সরবরাহ করতে ডিসি সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। এছাড়া উপকেন্দ্রের রিলে সমূহ ডিসি পাওয়ার ব্যবহার করে।

১৩. যোগাযোগের যন্ত্রপাতি:

যোগাযোগ রক্ষা এবং তথ্য আদান প্রদানের জন্য উপকেন্দ্রে বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি যেমন ওয়াকিটকি, ওয়ারলেস রেডিও, ফাইবার অপটিক সিস্টেম ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়।

১৪. কন্ট্রোল রুম:

PSX 20241219 001302
Control room of an electrical substation at Dhaka, Bangladesh

উপকেন্দ্রের কন্ট্রোলরুমে এক বা একাধিক মনিটর, কন্ট্রোল প্যানেল এবং নিরাপত্তা সিস্টেম এর নিয়ন্ত্রণ থাকে। কন্ট্রোল রুম হতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ নিরাপদে উপকেন্দ্র সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণ করেন।

১৫. অগ্নি নির্বাপন সিস্টেম:

উপকেন্দ্রে অগ্নিকাণ্ড জনিত দুর্ঘটনা প্রতিরোধে বিভিন্ন ধরনের অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র ব্যবহার করা হয়।

উপসংহার:

একটি বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্রের বিভিন্ন অংশ একত্রে কাজ করে নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সঞ্চালন, রূপান্তর এবং বিতরণ নিশ্চিত করে। এই উপাদানগুলির সঠিক ডিজাইন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিচালনা বিদ্যুৎ ব্যবস্থার দক্ষতা এবং নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

দুই দেশের মধ্যে বিদুৎ আমদানি বা রপ্তানির জন্য HVDC ব্যবহার করা হয় কেন?

ভূমিকা:

দুটি ভিন্ন দেশের মধ্যে বৈদ্যুতিক পাওয়ার সরবরাহের ক্ষেত্রে উচ্চ ভোল্টেজ ডাইরেক্ট কারেন্ট (High Voltage Direct Current) বা HVDC একটি বহুল ব্যবহৃত প্রযুক্তি। নির্ভরযোগ্যতা, দক্ষতা এবং বিভিন্ন ধরনের গ্রিড নেটওয়ার্ককে যুক্ত করার ক্ষমতা HVDC প্রযুক্তির অন্যতম সুবিধা। দীর্ঘ দুরত্বে বেশি পরিমানে বিদুৎ সঞ্চালন এবং দুটি এসিংক্রোনাস (Asynchronous) গ্রিডকে যুক্ত করার কাজে HVAC এর তুলনায় HVDC অধিক উপযোগী এবং সুবিধাজনক।

এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা ক্রস বর্ডার পাওয়ার সঞ্চালনের ক্ষেত্রে HVDC প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

HVDC ব্যবহারের কারণ:

১. এসিংক্রোনাস (Asynchronous) গ্রিডের মধ্যে অন্তসংযোগ:
যখন দুটি গ্রিডে আলাদা আলাদা ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করা হয় তখন তাদের এসিংক্রোনাস গ্রিড বলে। ক্রস বর্ডার পাওয়ার সঞ্চালনের ক্ষেত্রে HVDC ব্যবহারের অন্যতম কারণ হলো দুটি ভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সির গ্রিডের মধ্যে আন্তসংযোগ তৈরি করা।

কারণ:

  • HVDC প্রযুক্তিতে HVAC এর মত গ্রিডের অন্তসংযোগের জন্য ফ্রিকোয়েন্সি একই হওয়ার প্রয়জন হয় না।
  • ফলে দুটি দেশ বা গ্রিডের ফ্রিকোয়েন্সি আলাদা হলেও তারা একে অপরের সাথে বৈদ্যুতিক পাওয়ার বিনিময় করতে পারে।

উদাহরণ:
জাপানের ৫০ হার্জ এবং ৬০ হার্জ গ্রিড নেটওয়ার্কের মধ্যকার অন্তঃসংযোগ HVDC প্রযুক্তির ব্যবহারের অন্যতম উধাহরন।

২. গ্রিডের স্থিতিশীলতা এবং ফল্ট আইসোলেসন (Grid Stability and Fault Isolation):
HVDC লিঙ্ক গ্রিডের স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করে এবং অন্তসংযুক্ত গ্রিডকে একে অপরের ফল্ট এর প্রভাব থেকে পৃথক (Isolate) রাখে। ফলে আন্তসংযুক্ত গ্রিডের কোনো একটিতে ফল্ট সংগঠিত হলে বাকি গ্রিড সমূহ ফল্ট এর প্রভাব থেকে সুরক্ষিত থাকে।

সুবিধা: HVDC লিঙ্ক একটি প্রতিরক্ষা দেয়াল হিসেবে কাজ করে ফল্ট কে বিস্তৃত হতে বাধা দেয়।
ফল্ট হতে তাৎক্ষণিক পৃথকীকরণ ( Isolation) এবং উদ্ধার (Recovery) এর কারণে ক্রস বর্ডার পাওয়ার সঞ্চালন সুনিশ্চিত হয়।

উদাহরণ:
ভারত থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে উভয় দেশের গ্রিডের ফ্রিকোয়েন্সি ৫০ হার্জ হওয়া সত্ত্বেও গ্রিডের স্ট্যাবিলিটি এবং ফল্ট আইসোলেশনের বিবেচনা করে ব্যাক টু ব্যাক HVDC লিঙ্ক ব্যবহার করা হয়েছে যাতে এক দেশের গ্রিডে ফল্ট সংগঠিত হলে অন্য দেশের গ্রিড ফল্টের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকে।

৩. সঞ্চালন লস হ্রাস:
HVAC এর তুলনায় HVDC প্রযুক্তিতে বৈদ্যুতিক লসের পরিমাণ কম হয়।

কারণ

  • DC তে স্কিন ইফেক্ট এর প্রভাব না থাকায় পরিবাহীর কার্যকরী রোধের পরিমাণ কম থাকে। ফলে I2*R লস কম হয়।
  • DC সিস্টেমে রিয়্যাক্টিভ পাওয়ার না থাকায় লস হ্রাস পায় এবং গ্রাহক প্রান্তে স্থির ভোল্টেজ পাওয়া যায়।

সুবিদা:
লস হ্রাসের মাধ্যমে দীর্ঘ দুরত্বে পাওয়ার ট্রান্সমিশনের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।

৪. ব্যয় হ্রাস:
HVDC এর প্রাথমিক সংস্থাপন খরচ বেশি হলেও দীর্ঘ দুরত্বে বিশাল পরিমাণ পাওয়ার সরবরাহের ক্ষেত্রে HVDC প্রযুক্তি অধিক সাশ্রয়ী এবং মিতব্যয়ী। ওভারহেড ৬০০ কিলোমিটার বা ৫০ কিলোমিটার বা তারচেয়ে দীঘ্র সাবমেরিন ক্যাবলের সঞ্চালন লাইনের ক্ষেত্রে HVAC এর তুলনায় HVDC কম ব্যয়বহুল।

কারণ:

  • HVDC তে সঞ্চালন লস কম হওয়ায় সঞ্চালন ব্যয় কম হয়।
  • উচ্চ ভোল্টেজ এবং দীর্ঘ দুরত্বে পাওয়ার ট্রান্সমিশনের খেরে HVAC এর তুলনায় HVDC এর সুইচ গিয়ার এবং টার্মিনাল ইকুইপমেন্ট এর খরচ তুলনামুলক কম।
  • ভবিষ্যতে সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে HVAC এর তুলনায় HVDC বেশি সাশ্রয়ী।

সুবিদা:
দীর্ঘ মেয়াদে স্বল্প খরচে বিদুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হয়।

৫. পাওয়ার এর প্রবাহে অধিকতর নিয়ন্ত্রণ:
HVDC প্রযুক্তিতে কি পরিমান পাওয়ার প্রবাহিত হবে এবং কেন দিকে প্রবাহিত হবে তা অতি সূক্ষ্মভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় যা ক্রস বর্ডার পাওয়ার ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সুবিদা:

  • কি পরিমান পাওয়ার ট্রান্সফার হবে তা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সিস্টেমকে ওভারলোড হতে রক্ষা করা যায়।
  • ফলে পরিবর্তনশীল লোডের ক্ষেত্রে গ্রিডের স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।

৬. ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ইন্টারফারেন্স এর প্রভাব হ্রাস:
HVAC এর তুলনায় HVDC ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ইন্টারফারেন্স দ্বারা কম প্রভাবিত হয় ফলে এবং আশেপাশের পরিবেশকে কম প্রভাবিত করে।

উপসংহার:

ক্রস বর্ডার পাওয়ার ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে দক্ষতা, নিরপত্তা এবং এসিংক্রোনাস গ্রিডকে যুক্ত করার বিষয় বিবেচনায় HVDC প্রযুক্তি অত্যাবশ্যক। এটা দীর্ঘ দুরত্বে পাওয়ার ট্রান্সমিশনের ক্ষেত্রে লস হ্রাস করে, স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করে এবং ফল্ট কে ছড়িয়ে পড়া হতে প্রতিহত করে যা একে আন্তর্জাতিক বিদুৎ বিনিময়ের ক্ষেত্রে সবচে ভালো বিকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

বিভিন্ন ধরনের থার্মোডাইনামিক সাইকেল এবং তাদের ব্যবহার

ভূমিকা:

বৈদ্যুতিক পাওয়ার উৎপাদনে থার্মোডাইনামিক সাইকেল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কারণ পাওয়ার উৎপাদনে ব্যবহৃত থার্মোডাইনামিক সাইকেলই নির্ধারণ করে কিভাবে তাপীয় শক্তি যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তর ঘটবে এবং রূপান্তরের দক্ষতা কেমন হবে। প্রতিটি থার্মোডাইনামিক সাইকেলের দক্ষতা, ব্যবহৃত জ্বালানির ধরন এবং অপারেটিং কন্ডিশন বিবেচনা করে একেক অবস্থায় একেক থার্মোডাইনামিক সাইকেল ব্যবহার করা হয়।

এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা বৈদ্যুতিক পাওয়ার উৎপাদনে ব্যবহৃত বিভিন্ন থার্মোডাইনামিক সাইকেল ও তাদের ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

থার্মোডাইনামিক সাইকেল (Thermodynamic Cycle):

থার্মোডাইনামিক সাইকেল হল এক ধরনের প্রক্রিয়া যেখানে একটি পদার্থ একাধিক ধাপ অতিক্রম করে শেষ পর্যন্ত আবার তার প্রাথমিক অবস্থায় ফিরে আসে। এই প্রক্রিয়ায় তাপ এবং কাজের আদান-প্রদান হয়। সহজ কথায়, এটি একটি ঘূর্ণায়মান প্রক্রিয়া যেখানে একটি পদার্থ একই চক্রের ভিতর দিয়ে দিয়ে বারবার অতিক্রম করে। এই প্রক্রিয়াগুলিতে সিস্টেম তাপ শক্তি গ্রহণ বা সরবরাহ করে এবং তা যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে বা বিপরীতভাবে যান্ত্রিক শক্তিকে তাপ শক্তিতে রূপান্তর করে।

একটি থার্মোডাইনামিক সাইকেল সাধারণত চারটি ধাপের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়:
1. প্রসারণ (Expansion): তাপে সিস্টেম প্রসারিত হয়।
2. তাপ সরবরাহ (Heat Addition): সিস্টেমে বাহ্যিক তাপ সরবরাহ করা হয়।
3. সংকোচন (Compression): সিস্টেম সংকুচিত হয়।
4. তাপ অপসারণ (Heat Rejection): সিস্টেম থেকে তাপ অপসারণ করা হয়।

বিদুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত থার্মোডাইনামিক সাইকেল সমূহ:

১. র‍্যাঙ্কিন সাইকেল (Rankine Cycle):

বিদুৎ উৎপাদনে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত থার্মোডাইনামিক সাইকেল হলো র‍্যাঙ্কিন সাইকেল।

কার্যপ্রণালী:


১. পানিকে উত্তপ্ত করে বাষ্প উৎপন্ন করা হয় এবং এই উৎপন্ন বাষ্পের মাধ্যমে টারবাইনকে ঘুরিয়ে যান্ত্রিক তাপ শক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তর করা হয়।
২. এই সাইকেলটি চারটি প্রধান ধাপে সম্পন্ন হয়, যথা: ১. isobaric heat addition, ২. adiabatic expansion, ৩. isobaric heat rejection, এবং ৪. adiabatic compression.

ব্যবহার:
১. তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং
২. পারমাণবিক বিদুৎ কেন্দ্র।

সুবিধা:
১. আধুনিক প্রযুক্তি যেমন Reheating এবং Regenerative Feed Water Heating ব্যবহার করে উচ্চ দক্ষতা অর্জন করা যায়।

২. ব্রেইটন সাইকেল (Brayton Cycle):

ব্রেইটন সাইকেল সাধারনত গ্যাস টারবাইন বিদুৎ কেন্দ্রে ব্যবহার করা হয়।

কার্যপ্রণালী:

১. বাতাসকে সংকুচিত করে জ্বালানির সাথে মিশ্রিত করা হয় এবং কম্বাসন চেম্বারের মধ্যে পোড়ানো হয়। ফলে এই উত্তপ্ত গ্যাস এর চাপ বৃদ্ধি পায় এবং এই উত্তপ্ত গ্যাসকে টারবাইনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করে টারবাইনকে ঘুরানো হয়।
২. এই সাইকেল চারটি প্রধান ধাপে সম্পন্ন হয়, যথা: ১. isobaric heat addition, ২. adiabatic compression, ৩. adiabatic expansion এবং ৪. isobaric heat rejection.

ব্যবহার:
১. গ্যাস টারবাইন বিদুৎ কেন্দ্র,
২. কম্বাইন্ড সাইকেল বিদুৎ কেন্দ্র,
৩. উড্ডয়ন শিল্প ইত্যাদি।

সুবিধা:
পিক লোডের জন্য দ্রুত স্ট্রাটঅপ সুবিধা পাওয়া যায়।

৩. কম্বাইন্ড সাইকেল (Combined Cycle):

সর্বোচ্চ দক্ষতা অর্জনের লক্ষ্যে র‍্যাঙ্কিন সাইকেল এবং ব্রেইটন সাইকেল কে একত্রে ব্যবহার করা হয় যা কম্বাইন্ড সাইকেল নামে পরিচিত।

কার্যপ্রণালী:

ব্রেইটন সাইকেলের গ্যাস টারবাইন হতে নির্গত গ্যাসের তাপকে কাজে লাগিয়ে র‍্যাঙ্কিন সাইকেলের মাধ্যমে বাষ্প উৎপন্ন করে স্টিম টারবাইনকে ঘুরানো হয় এবং বিদুৎ উৎপাদন করা হয়।

ব্যবহার:
বর্তমানে বেশিভাগ আধুনিক বিদুৎ কেন্দ্রই কম্বাইন্ড সাইকেল ব্যবহার করে বিদুৎ উৎপাদন করা হয়। এতে বিদুৎ কেন্দ্রের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।

সুবিধা:
কম্বাইন্ড সাইকেল বিদুৎ কেন্দ্রের দক্ষতা র‍্যাঙ্কিন সাইকেল এবং ব্রেইটন সাইকেলের থেকে তুলনামুলক বেশি হয় এবং এটি ৬০% পর্যন্ত দক্ষতায় শক্তির রূপান্তর করতে পারে।

৪. কার্নো সাইকেল (Carnot Cycle):

কার্নো সাইকেল একটি তাত্ত্বিক মডেল যা তাপ ইঞ্জিনের সর্বচ্চো তাপীয় দক্ষতা নির্ণয়ে ব্যবহার করা হয়।

কার্যপ্রণালী:

১. দুটি isothermal processes এবং two adiabatic processes এর মাধ্যমে শক্তির রূপান্তর ঘটে।
২. এটি একটি আদর্শ মডেল হিসেবে ব্যবহৃত হয় যার বাস্তব প্রয়োগ সম্ভব না।

ব্যবহার:
এটি তাপ ইঞ্জিনের সর্বচ্চো দক্ষতার আদর্শ মাপকাঠি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

সুবিধা:
থার্মোডাইনামিক সাইকেলের সর্বোচ্চ তাপীয় দক্ষতা নির্ণয় করা যায়।

৫. কালিনা সাইকেল (Kalina Cycle):

এটি র‍্যাঙ্কিন সাইকেলের একটি পরিবর্তিত রূপ এবং এক্ষেত্রে পানি ও অ্যামোনিয়ার মিশ্রণকে ওয়ার্কিং ফ্লুইড হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

কার্যপ্রণালী:

পানি এবং অ্যামোনিয়ার মিশ্রণের ফলে পরিবর্তনশীল স্ফুটনাঙ্ক পাওয়া যায়। ফলে নিম্ন তাম্পমাত্রার উৎস হতে তাপ উদ্ধারের জন্য সুবিধাজনক স্ফুটনাঙ্ক তৈরি করা যায়।

ব্যবহার:
১. আবর্জনা থেকে শক্তি উৎপাদন,
২. জিওথার্মাল বিদুৎ কেন্দ্র ইত্যাদি।

সুবিধা:
নিম্ন তাপমাত্রায় অধিক দক্ষতা অর্জন করা যায়।

৬. এরিকসন সাইকেল (Ericsson Cycle):

এরিকসন সাইকেল বাহিরের উৎস হতে তাপ গ্রহণ করে এবং পুনরায় তাপ উৎপন্ন করে।

কার্যপ্রণালী:
এই সাইকেলে দুইটি isothermal process এবং দুইটি isobaric processes ব্যবহৃত হয়।

ব্যবহার:
১. সোলার থার্মাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র।

সুবিদা:
১. উচ্চ তাত্ত্বিক দক্ষতা।

৭. অর্গানিক র‍্যাঙ্কিন সাইকেল (Organic Rankine Cycle):

পানির চেয়ে নিম্ন স্ফুটনাঙ্ক বিশিষ্ট অর্গানিক ফ্লুইড এর মাধ্যমে শক্তির রূপান্তরের ক্ষেত্রে অর্গানিক র‍্যাঙ্কিন সাইকেল ব্যবহৃত হয়।

কার্যপ্রনালী:
র‍্যাঙ্কিন সাইকেল এর মতই কাজ করে তবে তাপ উদ্ধারের জন্য নিম্ন তাপমাত্রা বিশিষ্ট অর্গানিক ফ্লুইড যেমন pentane, butane ইত্যাদি ব্যবহার করে।

ব্যবহার:
১. জিওথার্মাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রও,
২. সোলার থার্মাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রও,
৩. ময়লা-আবর্জনা হতে তাপ উদ্ধার।

সুবিদা:
১. নিম্ন তাপমত্রা বিশিষ্ট উৎস হতে উচ্চ দক্ষতায় শক্তির রূপান্তর করা যায়।

ব্ল্যাকআউট এবং ব্রাউনআউট কি?

ভুমিকা:

বিদুৎ বিভ্রাট আমাদের সাভাবিক কর্মকাণ্ডে ব্যাঘাত ঘটায় এবং জনজীবনে নানা রকমের সমস্যা তৈরি করে। বিদুৎ বিভ্রাটের বহুল আলোচিত দুইটি ধরন হলো ১. ব্ল্যাকআউট এবং ২. ব্রাউনআউট। শুনতে একইরকম মনে হলেও এদের কারণ, প্রভাব এবং স্থিতিকালের সুনির্দিষ্ট কিছু পার্থক্য রয়েছে।

এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা ব্ল্যাকআউট এবং ব্রাউনআউট এর কারণ, প্রভাব, পার্থক্য এবং ব্ল্যাকআউট ও ব্রাউনআউট ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

Electrical Blackout
A boy studying in kerosene lamp due to electrical blackout
ব্ল্যাকআউট:

কোনো নির্দিষ্ট বৃহৎ এলাকা বা দেশ সম্পূর্ণ রুপে বিদুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে তাকে ব্ল্যাকআউট বলে। ব্ল্যাকআউট এর স্থায়িত্ব কয়েক মিনিট হতে কয়েকদিন পর্যন্ত হতে পারে।

প্রধান বৈশিষ্ট্য:
স্থায়িত্ব: কয়েক মিনিট হতে কয়েকদিন।
ব্যাপ্তি: একটি ক্ষুদ্র এলাকা থেকে শুরু করে, একটি বৃহৎ শহর এমনকি পুরো দেশও আক্রান্ত হতে পারে।
কারণ: বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির মারাত্বক ক্ষতির কারনে গ্রিড বিপর্যয়, ওভারলোড, প্রাকৃতিক দূর্যোগ এবং সাইবার আক্রমন।

প্রভাব:
১. পরিপূর্ণ বিদ্যুৎ বিভ্রাট: সম্পূর্ণ এলাকা পুরোপুরি বিদুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
২. অর্থনৈতিক ক্ষতি: দীর্ঘসময় বিদুৎ বিচ্ছিন্ন থাকায় অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ব্যাহত হয় এবং আর্থিক ক্ষতি সাধিত হয়।৩. নিরাপত্তা ঝুঁকি: ট্র্যাফিক লাইট, নিরপত্তা ব্যবস্থা এবং বিভিন্ন জরুরী সেবা বিঘ্নিত হয়।

উদাহরণ:
২০০৩ সালের যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ব্ল্যাকআউট এর কারণে প্রায় ৫০ মিলিয়ন লোক বিদুৎ বিভ্রাটের সম্মুখীন হয়েছিল।

ব্ল্যাকআউট মোকাবেলায় করণীয়:
১. বৈদ্যুতিক উৎপাদন, সঞ্চালন এবং বিতরণ ব্যবস্থায় নিয়মিত পর্যবেক্ষণ রক্ষণাবেক্ষণ এবং উন্নয়ন সাধন।
২. বিদুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন এবং বিতরণ ব্যবস্থার মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি।
৩. গ্রিড কোড অনুসরণ করা।
৩. বিকল্প ব্যবস্থা যেমন জেনারেটর ইত্যাদির ব্যবস্থা করা।

ব্রাউনআউট:

সাময়িকভাবে বিদ্যুতের সরবরাহ ভোল্টেজ কমে যাওয়াকে ব্রাউনআউট বলে। ব্রাউনআউটের সময় ব্ল্যাকআউট এর মত সম্পূর্ণরূপে বিদুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে না।

প্রধান বৈশিষ্ট্য:
স্থায়িত্ব: সাধারনত স্বল্প সময়ের জন্য ঘটে এবং তা কয়েক সেকেন্ড হতে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
ব্যাপ্তি: বৈদ্যুতিক গ্রিড ব্যবস্থাপনার উপর ভিত্তি করে কোনো ছোট এলাকা থেকে শুরু করে একটি বৃহৎ অঞ্চল পর্যন্ত আক্রান্ত হতে পারে।
কারণ: বিদুৎ সরবরাহ সংস্থা কর্তৃক লোড হ্রাসের জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে ভোল্টেজে কমানো হতে পরে। বৈদ্যুতিক সুইচ গিয়ার এবং যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণেও ভোল্টেজ কমে যেতে পারে। এছাড়াও ওভারলোড এর কারণেও ভোল্টেজ হ্রাস পায়।

প্রভাব:
১. বৈদ্যুতিক বাতি ফ্লিকার করে বা মিটমিট করে জ্বলে।
২. বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি যেমন মোটর, লিফট ইত্যাদির কর্মদক্ষতা হ্রাস পায়।
৩. ভোল্টেজ সংবেদনশীল যন্ত্রপাতি যেমন কম্পিউটার, রেফ্রিজারেটর, বিভিন্ন মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট ইত্যাদি সঠিকভাবে কাজ করতে ব্যার্থ হয় এমনকি স্থায়ীভাবে বিকল হয়ে যেতে পারে।

উদাহরণ:
তীব্র গরমের সময় প্রচুর পরিমাণে এয়ার কন্ডিশনার চালানোর ফলে বৈদ্যুতিক সিস্টেম ওভার লোড হয় এবং ভোল্টেজ হ্রাস পায়।

ব্রাউনআউট মোকাবেলায় করণীয়:
১. লোডের চাহিদা অনুযায়ী বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
২. দিনের বিভিন্ন সময়ের মধ্যে লোডের সুষম বণ্টন।
৩. ভোল্টেজে স্টেবিলাইজার এর ব্যবহার।

ব্ল্যাকআউট এবং ব্রাউনয়াউটের মধ্যে পার্থক্য:
পার্থক্যর বিষয়ব্ল্যাকআউটব্রাউনআউট
সংজ্ঞাস্থায়ী বিদ্যুৎ বিভ্রাট।অস্থায়ী ভোল্টেজ কমে যাওয়া।
স্থায়িত্বকয়েক মিনিট হতে কয়েক দিন।কয়েক সেকেন্ড হতে কয়েক ঘনটা।
বিদ্যুতের উপস্থিতিকোনো বিদ্যুৎ থাকে না।নিম্ন ভোল্টেজে আংশিক বিদ্যুৎ থাকে।
কারনগ্রিড বিপর্যয়, যন্ত্রপাতি বিকল হওয়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সাইবার আক্রমণ ইত্যাদি।ওভার লোড, গ্রিড ব্যালেন্সিং, যন্ত্রপাতির ত্রুটি ইত্যাদি।
প্রভাবসম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক বিকল হয়ে পরে।বৈদ্যুতিক বাতি মিটিমিটি করে জ্বলে, ভিবিন্ন যন্ত্রপাতি কম দক্ষতায় এবং কম সক্ষমতায় চলে।
নিরপত্যা ঝুঁকিউচ্চ, যেমন: সকল জরুরি সেবা ব্যহত হয়।মাঝারি, যেমন: যন্ত্রপাতির ক্ষতি।
উপসংহার:

ব্ল্যাকআউট এবং ব্রাউনআউট উভয়ই বিদুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটালেও তাদের কারণ, প্রভাব এবং ব্যবস্থাপনায় সুনির্দিষ্ট পার্থক্য রয়েছে। এই পার্থক্যগুলো সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকলে ব্ল্যাকআউট এবং ব্রাউনআউটকে প্রতিরোধ এবং দক্ষতার সাথে মোকাবেলা করা যাবে এর এর সাথে সংশ্লিষ্ট ক্ষয়ক্ষতি কমানো যাবে।

ট্রান্সফরমারের লসসমূহ । প্রকারভে, সূত্র এবং কমানোর উপায়: বিস্তারিত

ভূমিকা:

ট্রান্সফরমার পরিচালনার ক্ষেত্রে পাওয়ার লস একটি অনিবার্য বিষয় যা ট্রান্সফরমারের দক্ষতা ও স্থায়িত্বের উপর সরাসরি প্রভাব বিস্তার করে। ট্রান্সফরমারকে উচ্চ দক্ষতায় পরিচালিত হওয়ার জন্য তৈরি করা হলেও বৈদ্যুতিক পাওয়ার এর একটা অংশ ট্রান্সফরমার কর্তৃক পাওয়ার ট্রান্সফরমেশন এর সময় হারিয়ে যায়। এই হারিয়ে যাওয়ায় পাওয়ারই ট্রান্সফরমারের লস।

এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন ধরনের ট্রান্সফরমার লস, তাদের কারণ, গাণিতিক সূত্র এবং লস কমানোর উপায় সম্পর্কে জানতে পারবো।

ট্রান্সফরমার লসের প্রকারভেদ:

ট্রান্সফরমার লসকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়:
১. কোর লস এবং ২. কপার লস।

১. কোর লস:

ট্রান্সফরমারের কোরে পরিবর্তনশীল চুম্বক ক্ষেত্রের কারণে ট্রান্সফরমারে কোর লস হয়ে থাকে। ট্রান্সফরমারে এই লস এর পরিমাণ স্থির থাকে এবং লোডের প্রভাব হতে মুক্ত থাকে।

ট্রান্সফরমারে দুই ধরনের কোর লস হয়ে থাকে, যথা:

১. হিস্টেরেসিস লস:

ট্রান্সফরমারে পরিবর্তনশীল বিদুৎ সরবরাহ দেয়ার ফলে ট্রান্সফরমারের কোর ম্যাটেরিয়াল অনবরত ম্যাগনেটাইজড এবং ডি-ম্যাগনেটাইজড হয় ফলে। কোর ম্যাটেরিয়ালের অনু সমূহের মধ্যে ঘর্ষণ হয় এবং তাপ শক্তি রূপে বৈদ্যুতিক লস হয়। এই লসকেই হিস্টেরেসিস লস বলে।

হিস্টেরেসিস লসের সূত্র:
হিস্টেরেসিস লসে, Ph​=η⋅Bm1.6​⋅f⋅V

এখানে,
η = হিস্টেরেসিস ধ্রুবক,
Bm = সর্বোচ্চ ফ্লাক্স ডেনসিটি,
f = সরবরাহ ফ্রিকোয়েন্সি,
V = কোরের আয়তন।

হিস্টেরেসিস লস কমানোর উপায়: ভালো মানের কোর ম্যাটেরিয়াল যেমন সিলিকন স্টিল ব্যবহার করে হিস্টেরেসিস লস কমানো সম্ভব।

২. এডি কারেন্ট লস:

যখন ট্রান্সফরমারে পরিবর্তনশীল বিদুৎ সরবরাহ প্রদান করা হয় তখন ট্রান্সফরমারের প্রাইমারী উইন্ডিং এ ম্যাগনেটিক ফ্লাক্স তৈরি হয় এবং তা ট্রান্সফরমারের সেকেন্ডারি উইন্ডিং দ্বারা আবিষ্ট হয়। যেহেতু ট্রান্সফরমারের কোর ম্যাগনেটিক মেটেরিয়াল দ্বারা তৈরী, তাই উইন্ডিং এ উৎপন্ন ম্যাগনেটিক ফ্লাক্স এর কিছু অংশ করেও আবিষ্ট হয় এবং কোরে একটি সার্কুলেটিং কারেন্ট প্রবাহিত হয়। কোরে প্রবাহিত সার্কুলেটিং কারেন্টের জন্য ট্রান্সফরমার কোরে যে লস হয় তাকে এডি কারেন্ট লস বলে।

এডি কারেন্ট লসের সূত্র:
এডি কারেন্ট লসে, Pe​=Ke​⋅Bm2​⋅f2⋅t2⋅V

এখানে,
Bm = সর্বোচ্চ ফ্লাক্স ডেনসিটি,
f = সরবরাহ ফ্রিকোয়েন্সি,
V = কোরের আয়তন,
Ke= এডি কারেন্ট লস ধ্রুবক,
t = কোর পদার্থের পুরুত্ব।

এডি কারেন্ট লস কমানোর উপায়: সলিড কোর ব্যবহারের পরিবর্তে ল্যামিনেশন যুক্ত পাতলা ইস্পাতের পাত দিয়ে তৈরি কোর ব্যবহার করে এডি কারেন্ট লস কমানো যায়।

কপার লস:

ট্রান্সফরমারের উইন্ডিং এর অভ্যন্তরীণ রেজিস্ট্যান্স এর কারণে ট্রান্সফরমারের ভিতর দিয়ে কারেন্ট প্রবাহিত হওয়ার সময় যে I2*R লস হয় তাকে ট্রান্সফরমারের কপার লস বলে। কপার লস ট্রান্সফরমারের লোড পরিবর্তনের সাথে পরিবর্তন হয়।

কপার লসের গাণিতিক সূত্র:
কপার লস, Pcu = I2*R

এখানে,
I = লোড কারেন্ট এবং
R = ট্রান্সফরমারের সমতুল্য রেজিস্ট্যান্স।

কপার লস কমানোর উপায়:
১. উইন্ডিং এ উচ্চ পরিবাহিতা সম্পন্ন পরিবাহীর ব্যবহার,
২. সঠিক শীতলীকরণ পদ্ধতি ব্যবহার এর মাধ্যমে লোড বৃদ্ধির কারণে উইন্ডিং এর রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ।

ট্রান্সফরমারের কোর লস এবং কপার লস ছাড়াও আরো দুই ধরনের লস হয়, যথা: ১. স্ট্রে লস এবং ২. ডাই-ইলেকট্রিক লস।

১. স্ট্রে লস:

ট্রান্সফরমারের ধাবত অংশ যেমন মেইন ট্যাংক, সাপোর্ট ইত্যাদির এডি কারেন্ট প্রবাহের ফলে ট্রান্সফরমারে স্ট্রে লস হয়।

২. ডাই-ইলেকট্রিক লস:

ট্রান্সফরমারের ইন্সুলেশন ম্যাটেরিয়ালে পরিবর্তনশীল চুম্বক ক্ষেত্রের প্রভাবে ডাই-ইলেকট্রিক লস হয়।

ট্রান্সফরমারে স্ট্রে লস এবং ডাই-ইলেকট্রিক লসের পরিমাণ খুবই সামান্য হলেও সঠিক ম্যাটেরিয়াল এবং ডিজাইন পছন্দ না করা হলে এই লসের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেতে পারে।

ট্রান্সফরমারের মোট লস ক্যালকুলেশন:

মোট লস = কোর লস + কপার লস
মোট লস = হিস্টেরেসিস লস + এডি কারেন্ট লসে+ কপার লস
Ptotal = Pcore + Pcopper
Ptotal = Ph + Pe + Pcopper

ট্রান্সফরমারের দক্ষতা নির্ণয়:

ট্রান্সফরমারের দক্ষতা নির্ণয়ের জন্য নিচের সূত্র ব্যবহার করা হয়।

দক্ষতা=\frac{অউটপুট\; পাওয়ার}{ইনপুট\; পাওয়ার}×১০০\%

দক্ষতা=\frac{অউটপুট\; পাওয়ার}{অউটপুট\; পাওয়ার+মোট\; লস}×১০০\%

বিবেচ্য বিষয়:
১. যখন ট্রান্সফরমারের পরিবর্তনশীল লস অর্থাৎ কপার লস স্থির লস অর্থাৎ কোর লসের সমান হয় তখন ট্রান্সফরমার সর্বোচ্চ দক্ষতায় পরিচালিত হয়।
২. লোড এবং লোডের পাওয়ার ফ্যাক্টর ট্রান্সফরমারের লস এবং দক্ষতাকে সরাসরি প্রভাবিত করে।

উপসংহার:

ট্রান্সফরমারের লস সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকলে লস হ্রাসের মাধ্যমে ট্রান্সফরমারকে দক্ষতার সহিত পরিচালনা করা সম্ভব হবে। কোর লস এবং কপার লস কমানোর মাধ্যমে ট্রান্সফরমারের দক্ষ, নির্ভরযোগ্য এবং মৃতব্যায়ী অপারেশন নিশ্চিত হবে এবং বিদুৎ শক্তি সাশ্রয় করা যাবে।

ট্রান্সফরমারের ওপেন সার্কিট, শর্ট সার্কিট এবং ব্যাক টু ব্যাক টেস্ট

ভূমিকা:

বিভিন্ন পরিস্থিতে ট্রান্সফরমারের দক্ষতা, লস এবং সক্ষমতা নির্ণয়ে ট্রান্সফরমার টেস্টিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ট্রান্সফরমারে যে টেস্ট গুলি করা হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো:

  • ওপেন সার্কিট টেস্ট,
  • শর্ট সার্কিট টেস্ট এবং
  • ব্যাক টু ব্যাক টেস্ট।

এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা ট্রান্সফরমারের ওপেন সার্কিট, শর্ট সার্কিট এবং ব্যাক টু ব্যাক টেস্ট সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

ওপেন সার্কিট টেস্ট:

ট্রান্সফরমারের কোর লস এবং নো লোড প্যারামিটারসমূহ নির্ণয় করার জন্য নো-লোড টেস্ট করা হয়।

উদ্দেশ্য:
১. ট্রান্সফরমারের কোর লস (এডি কারেন্ট লস এবং হিস্টেরিসিস লস) নির্ণয় করা।
২. নো লোড প্যারামিটার তথা ম্যাগনেটাইজিং রিয়াক্ট্যান্স (Xm) এবং কোর লস রেজিস্ট্যান্স (R0) নির্ণয় করা।

পদ্ধতি:

Open Circuit Test of a Single Phase Transformer
Open Circuit Test of a Single Phase Transformer


১. প্রাইমারী উইন্ডিং (হাই ভোল্টেজ) খোলা রাখা হয় অর্থাৎ কোনো লোড যুক্ত থাকে না।।
২. সেকেন্ডারি উইন্ডিং (লো ভোল্টেজ) এ রেটেড ভোল্টেজ সরবরাহ করা হয়।
৩. নো লোড অবস্থায় ট্রান্সফরমারের ব্যবহৃত পাওয়ার (P0), নো লোড ভোল্টেজ (V1) এবং নো লোড কারেন্ট (I0) পরিমাপ করা হয়। পরবর্তীতে এই পরিমাপকৃত তথ্য হতে ম্যাগনেটাইজিং রিয়াক্ট্যান্স (Xm) এবং কোর লস রেজিস্ট্যান্স (Rc) নির্ণয় করা হয়।

ক্যালকুলেশন:

১. কোর লস (P0) = নো-লোড ইনপুট পাওয়ার।

২. নো-লোড পাওয়ার ফ্যাক্টর, Cos\theta=\frac{P_0}{V_1\times I_0}

৩. ম্যাগনেটাইজিং কারেন্ট, Im​ = I0​Sinθ

৪. কোর লস কারেন্ট, Ic = I0​Cosθ

৫. কোর লস রেজিস্ট্যান্স, R0 = V1/IC

৬. ম্যাগনেটাইজিং রিয়াক্ট্যান্স, Xm = V1/Im

সুবিধা:
১. পরীক্ষা পদ্ধতি সহজ।
২. লোডিং ছাড়াই ট্রান্সফরমারের কোর লস নির্ণয় করা যায়।

শর্ট সার্কিট টেস্ট:

ট্রান্সফরমারের পরিবর্তনশীল লস এবং সমতুল্য সার্কিটের প্যারামিটারসমূহ নির্ণয়ের জন্য শর্ট সার্কিট টেস্ট করা হয়।

উদ্দেশ্য:
১. ফুল লোড অবস্থায় ট্রান্সফরমারের কপার লস নির্ণয় করা।
২. ট্রান্সফরমারের সমতুল্য রেজিস্ট্যান্স (Req) এবং সমতুল্য রিয়াক্ট্যান্স (Xeq) নির্ণয় করা।

পরীক্ষা পদ্ধতি:

Short Circuit Test of a Single Phase Transformer
Short Circuit Test of a Single Phase Transformer


১. ট্রান্সফরমারের সেকেন্ডারি (লো ভোল্টেজ) প্রান্তকে একটি অ্যামিটারের সাহায্যে শর্ট করা হয়।
২. ট্রান্সফরমারের প্রাইমারী প্রান্তে রেটেড ভোল্টেজের ৫-১০% ভোল্টেজ সরবরাহ করা হয় যাতে শর্ট কৃত ট্রান্সফরমারের সেকেন্ডারি প্রান্ত দিয়ে রেটেড কারেন্ট প্রবাহিত হয়।
৩. পরীক্ষা চলাকালে নির্মক্ত রিডিং নেয়া হয়

  • প্রাইমারী ভোল্টেজ (V1),
  • শর্ট সার্কিট কারেন্ট (Is) এবং
  • ইনপুট পাওয়ার বা শর্ট সার্কিট পাওয়ার (Psc)।

ক্যালকুলেশন:

১. কপার লস, Pcu = শর্ট সার্কিট ইনপুট পাওয়ার (শর্ট সার্কিট টেস্টে কোর লসের পরিমান খুবই কম থাকায় তা অগ্রাহ্য করা হয়)

২. সমতুল্য রেজিস্ট্যান্স, Req = Pcu/Is2

৩. সমতুল্য রিয়্যাক্ট্যান্স,
X_{eq}=\sqrt{{(\frac{V_1}{I_s})}^2-R_{eq}^2}

সুবিদা:
১. ফুল লোড প্রয়োগ না করেই ফুল লোডের কপার লস নির্ণয় করা যায়।
২. ট্রান্সফরমারের সমতুল্য সার্কিটের উপাদান সমূহ সহজে নির্ণয় করা যায়।

ব্যাক টু ব্যাক টেস্ট:

ওপেন সার্কিট টেস্ট এবং শর্ট সার্কিট টেস্ট হতে ট্রান্সফরমারের কোর লস, কপার লস পরিমাপ করা গেলেও ফুল লোডে ট্রান্সফরমারের তাপীয় দক্ষতা কেমন হয় তো জানা যায় না। ব্যাক টু ব্যাক টেস্ট এর মাধ্যমে একটু ট্রান্সফরমার ফুল লোডে কেমন আচরণ করে এবং লোড বৃদ্ধির সাথে সাথে তাপমাত্রার পরিবর্তন বা বৃদ্ধি কেমন হয় তা জন্য যায়। এই টেস্টকে সাম্পনার টেস্টও (Sumpner’s Test) বলা হয়ে থাকে।

উদ্দেশ্য:
১. কোর এবং কপার লস উভয় পরিমাপ করা।
২. বাস্তব ব্যবহারিক ক্ষেত্রে ট্রান্সফরমারের দক্ষতা নির্ণয় এবং তাপমাত্রা এর পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করা।

পরীক্ষা পদ্ধতি:

Back to Back or Sumpner's Test
Back to Back or Sumpner’s Test


১. পরীক্ষার জন্য সম্পূর্ণ একই ধরনের দুটি ট্রান্সফরমার ব্যবহার করা হয়।
২. ট্রান্সফরমার দুটির প্রাইমারী উইন্ডিংকে মেইন সাপ্লাইয়ের সাথে প্যারালাল এ সংযোগ করা হয়।
৩. ট্রান্সফরমার দুটির সেকেন্ডারি উইন্ডিংকে একে অপরের সাথে সিরিজে বিপরীতমুখী ভাবে লুপ আকারে সংযোগ করা হয়।
৪. ট্রান্সফরমারের সেকেন্ডারি প্রান্ত অন্য আরেকটি উৎস হতে অক্সিলারি সাপ্লাই দেয়া হয়।
৫. ওয়াট মিটার W1 হতে দুই ট্রান্সফরমারের মোট কোর লস পাওয়া যায় এবং ওয়াট মিটার W2 হতে দুই ট্রান্সফরমারের মোট কপার লস পাওয়া যায়।
সুতারং, প্রতিটি ট্রান্সফরমারের মোট লস,
W = (W1 + W2)/2

তাপমাত্রা বৃদ্ধি নির্ণয়:
পরিক্ষা চলাকালে ট্রান্সফরমারের তেলের তাপমাত্রা নির্দিষ্ট সময় পর পর পরিমাপ করা হয়। উভয় ট্রান্সফরমারকে ব্যাক টু ব্যাক অবস্থায় দির্ঘ সময় পরিচালনারর ফলে ট্রান্সফরমারের অয়েলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং ফুল লোডে ট্রান্সফরমারের তাপমাত্রা কেমন হবে তা সম্পরকে ধারনা পাওয়া যায়।

সুবিদা:
১. কোনো ধরনের লোড সংযোগ ছাড়াই ফুল লোডে ট্রান্সফরমারের আচরন সম্পর্কে জানা যায়।
২. সুক্ষভাবে দক্ষতা এবং তাপমত্রার প্রভাব নির্ণয় করা যায়।

উপসংহার:

ট্রান্সফরমারের দক্ষতা, নির্ভরযোগ্যতা এবং সক্ষমতা নির্ণয়ে ট্রান্সফরমার টেস্টিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। ওপেন সার্কিট টেস্ট এবং শোর্ট সার্কিট টেস্ট হতে ট্রান্সফরমারের লস সমূহ এবং সমতুল্য সারকিটের প্যারামিটার সমূহ জানা যায়। অন্যদিকে ব্যাক টু ব্যাক টেস্ট হবে ফুল লোডে ট্রান্সফরমার কেমন আচরন করবে তা জানা যায়।

ট্রান্সফর্মারের ভোল্টেজ রেগুলেশন কি?

ভূমিকা:

ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার সিস্টেমে ভোল্টেজ রেগুলেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বিশেষ করে ট্রান্সফর্মার ডিজাইন এবং এর দক্ষতা পর্যালোচনার ক্ষেত্রে ভোল্টেজ রেগুলেশন অন্যতম বিবেচ্য বিষয়। পরিবর্তনশীল লোডে ট্রান্সফর্মারের সেকেন্ডারি প্রান্তের ভোল্টেজ স্থির রাখার ক্ষমতাকেই ভোল্টেজ রেগুলেশন এর মাধ্যমে পরিমাপ করা হয়।

এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা ভোল্টেজ রেগুলেশন কি, ভোল্টেজ রেগুলেশন এর ফর্মুলা, কারণ, ভোল্টেজ রেগুলেশন এর ধরন এবং ভোল্টেজ রেগুলেশন দুর করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

ভোল্টেজ রেগুলেশন:

নির্দিষ্ট নো লোড ভোল্টেজ এর জন্য পরিবর্তনশীল লোডে ফুল লোড ভোল্টেজ শতকরা কি পরিমাণ পরিবর্তন হয় তাকে ভোল্টেজ রেগুলেশন রেগুলেশন বলে।

ভোল্টেজ রেগুলেশন এর মাধ্যমে নো লোড ভোল্টেজ এবং ফুল লোড ভোল্টেজ এর পার্থক্যকে পরিমাপ করা হয় এবং একে ফুল লোড ভোল্টেজ এর শতকরা হারে প্রকাশ করা হয়।

Transformer Equivalent Circuit
Transformer Equivalent Circuit

ভোল্টেজ রেগুলেশন এর ফর্মুলা:

ভোল্টেজ রেগুলেশন (%) = \frac {নো\; লোড\; ভোল্টেজ-ফুল\; লোড\; ভোল্টেজ}{ফুল\; লোড\; ভোল্টেজ}×১০০%

ভোল্টেজ রেগুলেশন (%) = \frac {V_{no-load}-V_{full-load}}{V_{full-load}}×১০০%

ভোল্টেজ রেগুলেশনের প্রকারভেদ:

১. ধনাত্মক ভোল্টেজ রেগুলেশন: যখন ফুল লোড ভোল্টেজ এর মান নো লোড ভোল্টেজ থেকে কম হয় তখন ধনাত্মক ভোল্টেজ রেগুলেশন ঘটে। ইন্ডাকটিভ বা রেজিস্টিভ লোডের ক্ষেত্রে ধনাত্মক ভোল্টেজ রেগুলেশন তৈরি হয়।

২. ঋনাত্মক ভোল্টেজে রেগুলেশন: যখন ফুল লোড ভোল্টেজ এর মান নো লোড ভোল্টেজ থেকে বেশি হয় তখন ঋণাত্মক ভোল্টেজ রেগুলেশন ঘটে। ক্যাপাসিটিভ লোডের ক্ষেত্রে ধনাত্মক ভোল্টেজ রেগুলেশন তৈরি হয়।

ভোল্টেজ রেগুলেশন এর তাৎপর্য:

১. লোডের দক্ষতা নির্ণয়: ভোল্টেজ রেগুলেশন কম হলে লোডে সব সময় নির্ধারিত সীমার মধ্যে ভোল্টেজ সরবরাহ করা যাবে ফলে লোড দক্ষ ভাবে পরিচালিত হবে।

২. নির্ভরযোগ্যতা: সেনসিটিভ যন্ত্রপাতিতে বিদুৎ সরবরাহের জন্য নির্ভরযোগ্য উৎস প্রয়োজন যার ভোল্টেজ রেগুলেশন অবশ্যই কম হবে।

৩. নিরাপত্তা ও সুরক্ষা: ওভার ভোল্টেজ এবং আন্ডার ভোল্টেজ থেকে সুরক্ষার ক্ষেত্রে ভোল্টেজ রেগুলেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ভোল্টেজ রেগুলেশনের প্রভাবকসমূহ:

১. লোডের পাওয়ার ফ্যাক্টর: ভোল্টেজ রেগুলেশনে বিভিন্ন ধরনের পাওয়ার ফ্যাক্টর আলাদা আলাদা ভাবে প্রভাব বিস্তার করে, যেমন:

  • ল্যাগিং পাওয়ার ফ্যাক্টর: পাওয়ার ফ্যাক্টর এর মান ল্যাগিং হলে ভোল্টেজ ড্রপের মান বৃদ্ধি পায়। ফলে ভোল্টেজ রেগুলেশনও বৃদ্ধি পায়।
  • লিডিং পাওয়ার ফ্যাক্টর: পাওয়ার ফ্যাক্টর এর লিডিং হলে লাইনে ভোল্টেজ ড্রপ হওয়ার পরিবর্তে ভোল্টেজের মান বৃদ্ধি পায় ফলে ঋণাত্মক ভোল্টেজ রেগুলেশন ঘটে।
  • ইউনিটি পাওয়ার ফ্যাক্টর: ইউনিটি পাওয়ার ফ্যাক্টর এর ক্ষেত্রে ভোল্টেজ ড্রপের মান সর্বনিম্ন হয় ফলে ভোল্টেজ রেগুলেশনও সর্বনিম্ন হয়।

২. ট্রান্সফরমারের ইম্পিডেন্স: ট্রান্সফরমারের সমতুল্য ইম্পিডেন্স ভোল্টেজ রেগুলেশনকে সরাসরি প্রভাবিত করে। ইম্পিডেন্স যত বেশি হবে ভোল্টেজ রেগুলেশনও তত বৃদ্ধি পাবে।

৩. লোড কারেন্ট: লোড কারেন্টের মান বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে ভোল্টেজ ড্রপ বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোল্টেজ রেগুলেশনের মানও বৃদ্ধি পায়।

ভোল্টেজ রেগুলেশন কমানোর উপায়:

১. নিম্ন ইম্পিড্যান্স বিশিষ্ট ট্রান্সফর্মারের ব্যবহার: ট্রান্সফর্মারের ইম্পিড্যান্স কম হলে ভোল্টেজ ড্রপ কম হবে ফলে ভোল্টেজ রেগুলেশন মানও কম হবে।

২. লোডের পাওয়ার ফ্যাক্টর বৃদ্ধি: লোডের পাওয়ার ফ্যাক্টর বৃদ্ধি পেলে ভোল্টেজ ড্রপ হ্রাস পায় এবং ভোল্টেজ রেগুলেশনও হ্রাস পায়। লোডে ক্যাপাসিটর ব্যাংক বা সিনক্রনাস কন্ডেনসার ব্যবহার করে লোডের পাওয়ার ফ্যাক্টর বৃদ্ধি করা যায়।

৩. ট্রান্সফরমারে ট্যাপ চেঞ্জার এর ব্যবহার: ট্যাপ চেঞ্জার ব্যবহার করে লোড পরিবর্তনের সাথে সাথে ট্রান্সফরমারের সেকেন্ডারি প্রান্তের ভোল্টেজ পরিবর্তন করা যায়। ফলে ভোল্টেজ রেগুলেশন নিয়ন্ত্রণে থাকে।

৪. ভোল্টেজে রেগুলেটর ব্যবহার: ভোল্টেজ রেগুলেটর ব্যবহার করে লোডে সব সময় নির্দিষ্ট ভোল্টেজ সরবরাহ করা সম্ভব হয়। ফলে ভোল্টেজ রেগুলেশন নিয়ন্ত্রণে থাকে।

৫. ভালো মানের পরিবাহীর ব্যবহার: কম রেজিস্ট্যান্স যুক্ত তার ব্যবহার করলে ভোল্টেজ ড্রপ কম হবে এবং ভোল্টেজ রেগুলেশন হ্রাস পাবে।

উপসংহার:

বৈদ্যুতিক সিস্টেমে দক্ষ, নির্ভরযোগ্য এবং নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রে ভোল্টেজ রেগুলেশন এর মান কম থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উপরে উল্লেখিত কৌশন এবং উপায় সমূহ অবলম্বন করে সহজেই ভোল্টেজ রেগুলেশন এর মান হ্রাস করা সম্ভব।

ট্রান্সফর্মারের টার্ন রেশিও এবং ট্রান্সফরমেশন রেশিও কি?

ভূমিকা:
বৈদ্যুতিক পাওয়ার সিস্টেমে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হচ্ছে ট্রান্সফর্মার যা বৈদ্যুতিক নেটওয়ার্কের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বিদুৎ সরবরাহের জন্য ব্যবহার করা হয়। ট্রান্সফর্মারের দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো টার্ন রেশিও এবং ট্রান্সফরমেশন রেশিও যা ট্রান্সফর্মারের দক্ষতা এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মারের টার্ন রেশিও এবং ট্রান্সফরমেশন রেশিও সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

১. টার্ন রেশিও: ট্রান্সফর্মারের প্রাইমারী উইন্ডিং এর টার্ন সংখ্যা (Np) এবং সেকেন্ডারি উইন্ডিং এর টার্ন সংখ্যার (Ns) অনুপাতকে টার্ন রেশিও বলে। টার্ন রেশিওকে a দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

সূত্র: টার্ন রেশিও,

a = \frac{প্রাইমারী\; উইন্ডিং\; এর\; টার্ন\; সংখ্যা}{সেকেন্ডারি\; উইন্ডিং\; এর\; টার্ন\; সংখ্যা} = \frac{N_P}{N_S}

টার্ন রেশিও এর তাৎপর্য:
১. ট্রান্সফর্মারের প্রাইমারী এবং সেকেন্ডারি প্রান্তের ভোল্টেজ নির্ধারণ করে।
২. টার্ন রেশিও যত বেশি হবে প্রাইমারী এবং সেকেন্ডারি প্রান্তের ভোল্টেজ পার্থক্যও তত বেশি হবে।

উদাহরণ: যদি একটি ট্রান্সফর্মারের প্রাইমারী উইন্ডিং এ ১০০ টি টার্ন এবং সেকেন্ডারি উইন্ডিং এ ১০ টি টার্ন থাকে তবে ট্রান্সফর্মারটির টার্ন রেশিও,

a = \frac{১০০}{১০} = ১০

ট্রান্সফরমেশন রেশিও: ট্রান্সফর্মারের সেকেন্ডারি ভোল্টেজ (Vs) এবং প্রাইমারী ভোল্টেজ (Vp) এর অণুপাত বা প্রাইমারী কারেন্ট (Ip) এবং সেকেন্ডারি কারেন্ট (Is) এর অণুপাতকে ট্রান্সফরমেশন রেশিও বলে। একে k দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

সূত্র: ট্রান্সফরমেশন রেশিও,

k = \frac{সেকেন্ডারি\; ভোল্টেজ}{প্রাইমারী\; ভোল্টেজ} = \frac{V_S}{V_P}

= \frac{প্রাইমারী\; কারেন্ট}{সেকেন্ডারি\; কারেন্ট} = \frac{I_P}{I_S}

ট্রান্সফরমেশন রেশিও এর তাৎপর্য:
১. প্রাইমারী ভোল্টেজ এবং কারেন্টের সাথে সেকেন্ডারি ভোল্টেজ এবং কারেন্টের সম্পর্ক নির্ণয় করে।
২. পাওয়ার বিতরণ এবং লোড এর বৈশিষ্ট বুঝতে সহায়তা করে।

উপসংহার:
ট্রান্সফর্মারের টার্ন রেশিও এবং ট্রান্সফরমেশন রেশিও একে অপরের সাথে ওতপ্রোত ভাবে সংযুক্ত পৃথক দুটি ধারণা। দক্ষভাবে ট্রান্সফর্মার ডিজাইন, পরিচালন এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এই দুটি বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কোর টাইপ এবং শেল টাইপ ট্রান্সফর্মারের পার্থক্য

ভূমিকা:
ট্রান্সফর্মারের কোর এবং উইন্ডিং এর গঠনের উপর ভিত্তি করে ট্রান্সফর্মারকে কোর টাইপ এবং শেল টাইপ ট্রান্সফর্মারে বিভক্ত করা হয়। ব্যবহারিক ক্ষেত্রে উভয় ট্রান্সফর্মারেরই কিছু বৈশিষ্ট্য এবং সুবিধা-অসুবিধা রয়েছে। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা কোর টাইপ এবং শেল টাইপ ট্রান্সফর্মারের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করবো।

কোর টাইপ এবং শেল টাইপ ট্রান্সফর্মারের পার্থক্য:
১. কোরের গঠন:
কোর টাইপ: উইন্ডিং সমূহ কোরকে ঘিরে রাখে। কোর আয়তাকার বা সিলিনড্রিক্যাল আকারের হয়ে থাকে। কোরের দুইটি উলম্ব বহু থাকে যা দুই পার্শ্বের দুটি আনুভূমিক বাহুর (ইয়োক) মাধ্যমে যুক্ত থাকে। উভয় উলম্ব বাহুর উপর উইন্ডিং প্যাঁচানো হয়।
শেল টাইপ: কোর সমূহ উইন্ডিংকে ঘিরে রাখে। কোরে তিনটি উলম্ব বাহু রয়েছে। মাঝের বাহুতে উইন্ডিং প্যাঁচানো হয় এবং বাইরের দুই বাহু চুম্বকীয় ফ্লাক্স প্রবাহের পথ হিসেবে কাজ করে।

২. চুম্বকীয় ফ্লাক্স প্রবাহের পথ:
কোর টাইপ: চুম্বকীয় ফ্লাক্স কোরের মাধ্যমে প্রবাহিত হয় এবং ইয়োক এর মাধ্যমে ফিরে আসে। ফলে চুম্বকীয় ফ্লাক্স প্রবাহের জন্য শুধুমাত্র একটি চুম্বকীয় পথ পাওয়া যায়।
শেল টাইপ: চুম্বকীয় ফ্লাক্স মাঝের বাহু দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দুই পার্শ্বের দুই বাহু দিয়ে ফিরে আসে। ফলে চুম্বকীয় ফ্লাক্স প্রবাহের জন্য দুটি চুম্বকীয় পথ পাওয়া যায়।

৩. উইন্ডিং এর গঠন:
কোর টাইপ: উইন্ডিং সিলিনড্রিকাল আকৃতির হয়ে থাকে এবং কোরের এক বাহুতে প্রাইমারী এবং অন্য বাহুতে সেকেন্ডারি উইন্ডিং প্যাঁচানো হয়।
শেল টাইপ: কোরের একই বাহুতে একটি উইন্ডিং এর উপর আরেকটি উইন্ডিং প্যাঁচানো হয়। ফলে ভালো চুম্বকীয় ফ্লাক্স এর কাপলিং ভালো হয় এবং লিকেজ ফ্লাক্স হ্রাস পায়।

৪. কোর-কয়েলের সম্পর্ক:
কোর টাইপ: উইন্ডিং সমূহ আলাদা আলাদা বাহুতে থাকায় সহজেই উইন্ডিং এর পর্যবেক্ষণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা গেলেও উইন্ডিং সমূহ উন্মুক্ত থাকায় তা কম নিরাপদ।
শেল টাইপ: উইন্ডিং সমূহ কোরের মধ্যে আবদ্ধ থাকায় অধিকতর নিরাপত্তা পাওয়ায় গেলেও পর্যবেক্ষণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ জটিল হয়।

৫. যান্ত্রিক গঠন:
কোর টাইপ: বিশেষ করে শর্ট সার্কিট অবস্থায় যান্ত্রিক শক্তি কম থাকে।
শেল টাইপ: অধিক শক্তিশালী এবং শর্ট সার্কিট অবস্থায় সহজে ক্ষতিগ্রস্থ হয় না।

৬. শীতলীকরণ দক্ষতা:
কোর টাইপ: উইন্ডিং সমূহ কোরের বাইরের দিকে থাকায় সহজেই শীতল হয়। ফলে ভালো শীতলীকরণ দক্ষতা পাওয়া যায়।
শেল টাইপ: উইন্ডিং সমূহ কোরের মধ্যে আঁটসাঁট হয়ে থাকায় শীতলীকরণ জটিল হয়। ফলে শীতলীকরণ দক্ষতা কম পাওয়া যায়।

৭. উৎপাদন এবং ব্যয়:
কোর টাইপ: গঠন সহজ হওয়ার উৎপাদন সহজ হয় এবং খরচ কম।
শেল টাইপ: গঠন অপেক্ষাকৃত জটিল এবং বেশি ব্যয়বহুল।

৮. ব্যবহার:
কোর টাইপ: হাই ভোল্টেজ এবং হাই পাওয়ার ইকুইপমেন্ট এর জন্য ব্যবহার উপযোগী। যেমন: পাওয়ার ট্রান্সফর্মার।
শেল টাইপ: লো ভোল্টেজ এবং লো পাওয়ার ইকুইপমেন্ট এর জন্য ব্যবহার উপযোগী। যেমন: বিতরণ ট্রান্সফর্মার।

একনজরে কোর টাইপ এবং শেল টাইপ ট্রান্সফর্মারের পার্থক্যের তালিকা:

পার্থক্যর বিষয়কোর টাইপ ট্রান্সফর্মারশেল টাইপ ট্রান্সফর্মার
কোরের গঠনকোর উইন্ডিং এর ভিতরে থাকে।উইন্ডিং কোরের ভিতরে থাকে।
চুম্বকীয় পথএকক চুম্বকিয় পথ থাকে।দুটি চুম্বকিয় পথ থাকে।
উইন্ডিং এর গঠনকোরের দুই বাহুর চারপাশে সিলিন্ড্রিক্যাল আকারে থাকে।কোরের মাঝের বাহুতে এক উইন্ডিং এর উপর অন্য উইন্ডিং স্যান্ডউইচ আকারে প্যাঁচানো থাকে।
শীতলীকরণ দক্ষতাসহজে শিতল হয়।সহজে শিতল হয় না।
যান্ত্রিক শক্তিকম শক্তিশালীবেশি শক্তিশালী
ব্যবহারউচ্চ ভোল্টেজ এবং উচ্চ পাওয়ার সিস্টেম।কম ভোল্টেজ এবং কম পাওয়ার সিস্টেম।
নির্মান ব্যয়কম।বেশি।

উপসংহার:
ব্যবহারিক ক্ষেত্রে কোর টাইপ বা শেল টাইপ ট্রান্সফর্মার পছন্দের ক্ষেত্রে আলদা আলাদা কিছু সুভিদা বা বৈশিষ্ট্যকে গুরুত্ব দেয়া হয়। ব্যবহারের ধরন অনুযায়ী সঠিক ট্রান্সফর্মার বাছাই করার মাধ্যমে দক্ষ, নির্ভরযোগ্য এবং নিরাপদ বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হয়।

প্রেশার রিলিফ ভালভ কি এবং ট্রান্সফর্মারে এটি কেনো ব্যবহার করা হয়?

PRV কি?

প্রেশার রিলিফ ভালভ (Pressure Relief Valve) বা PRV ট্রান্সফর্মারের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা ডিভাইস যা ট্রান্সফর্মারের ভিতরে ফল্ট, অতিরিক্ত তাপমাত্রা বা অয়েল এর আয়তন বৃদ্ধির কারণে সৃষ্ট অত্যধিক চাপ নির্গমন করে ট্রান্সফর্মারকে ড্যামেজ হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে।

PRV এর কাজ:

১. চাপ নির্গমন: অস্বাভাবিক অবস্থা যেমন ফল্ট বা অয়েল বিস্ফোরণের কারণে ট্রান্সফর্মারের অভ্যন্তরে অত্যধিক চাপ তৈরি হলে PRV এর মাধ্যমে সহজেই চাপ নির্গমন হয়ে যায় এবং সম্ভাব্য দুর্ঘটনা এড়ানো যায়।

২. ট্রান্সফর্মার সুরক্ষা: ট্রান্সফর্মারকে স্ট্রাকচারাল ডেমেজ হতে রক্ষা করে এবং ট্রান্সফর্মারের অভ্যন্তরে চাপ নিরাপদ মাত্রায় রেখে ট্রান্সফর্মারের দক্ষ পরিচালনা নিশ্চিত করে।

৩. অয়েল লিকেজ রোধ: অত্যধিক চাপে ট্রান্সফর্মারের মেইন ট্যাংক এবং গ্যাসকেট ক্ষতিগ্রস্ত হয় অয়েল লিকেজ হয়। PRV মেইন ট্যাংক এবং গাসকেটকে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া থেকে রক্ষা করে অয়েল লিকেজ রোধ করে।

PRV এর কার্যপ্রণালী:

সাভাবিক অবস্থায়: সাভাবিক অপারেশনের সময় ট্রান্সফর্মারের অভ্যন্তরীণ চাপ নিরাপদ সীমার মধ্যেই থাকে ফলে PRV বন্ধ (Closed) অবস্থায় থাকে। ফলে ট্রান্সফর্মারের নিশ্ছিদ্র অবস্থা অক্ষত থাকে।

অস্বাভাবিক অবস্থায়: যখন কোনো কারণে ট্রান্সফর্মারের অভ্যন্তরে চাপের পরিমার নির্ধারিত নিরাপদ মাত্রা অতিক্রম করে তখন PRV খুলে(Open) যায় যাতে চাপ সৃষ্টিকারী গ্যাস বা বাষ্প বের হয়ে যেতে পারে।

অভ্যন্তরীণ চাপ কমে নিরাপদ সীমায় আসলে পুনরায় PRV বন্ধ (Closed) হয়ে যায় এবং ট্রান্সফর্মার পুনরায় নিশ্ছিদ্র অক্ষত অবস্থায় ফিরে আসে।

PRV এর গঠন:

১. ভালভ বডি: এটি চরম আবহাওয়ার উচ্চ চাপ সহনুপযোগী মরিচারোধী ইস্পাত দিয়ে তৈরি করা হয়।

২. স্প্রিং মেকানিজম: অস্বাভাবিক অবস্থায় সাথে ভালভ খুলে তা নিশ্চিত করে।

৩. সিল: সাভাবিক অবস্থায় অয়েল লিকেজ রোধ করে।

৪. ডিসচার্জ আউটলেট: অবাঞ্ছিত গ্যাস বা বাস্পকে ট্রান্সফর্মার হতে নিরাপদে নির্গমনের ব্যবস্থা করে।

PRV ব্যবহারের সুবিধা:

১. বাড়তি নিরাপত্তা: ট্রান্সফর্মারকে বিস্ফোরণের হাত থেকে রক্ষা করে স্থাপনা এবং ব্যক্তিবর্গকে নিরাপদ রাখে।

২. যন্ত্রপাতির স্থায়িত্ব বৃদ্ধি: ট্রান্সফর্মারের মেইন ট্যাংক এর চাপ নিরাপদ সীমার মধ্যে থাকায় ট্রান্সফর্মারের যন্ত্রপাতি অক্ষত থাকে এবং ফলে ট্রান্সফর্মার দীর্ঘস্থায়ী হয়।

৩. ব্যয় হ্রাস: দুর্ঘটনা কম ঘটায় রক্ষণাবেক্ষণ কম প্রয়জন হয়। ফলে রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় হ্রাস পায়।

PRV এর রক্ষণাবেক্ষণ:

১. নিয়মিত ক্ষয়, প্রতিবন্ধকতা পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

২. ভালভ এর চাপ এর সেটিং সঠিক আছে কিনা তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

৩. ডিসচার্জ আউটলেট থেকে ময়লা, ধুলাবালি দুর করতে হবে।

উপসংহার:

প্রেশার রিলিফ ভালভ (Pressure Relief Valve) বা PRV ট্রান্সফর্মারের একটি গুরুত্বপুর্ন সুরক্ষা ডিভাইস যা ট্রান্সফর্মারকে অতিরিক্ত অভ্যন্তরীণ চাপ হতে সুরক্ষা দেয়। আটকে থাকা গ্যাস এবং বাষ্পের নিরাপদ নির্গমন নিশ্চিত করে ট্রান্সফর্মারের দক্ষতা, নিরাপত্তা এবং নির্ভরযোগ্যতা সুনিশ্চিত করে। PRV এর সঠিক অপারেশন নিশ্চিত করতে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ অত্যাবশ্যক।