ভূমিকা:

দুটি ভিন্ন দেশের মধ্যে বৈদ্যুতিক পাওয়ার সরবরাহের ক্ষেত্রে উচ্চ ভোল্টেজ ডাইরেক্ট কারেন্ট (High Voltage Direct Current) বা HVDC একটি বহুল ব্যবহৃত প্রযুক্তি। নির্ভরযোগ্যতা, দক্ষতা এবং বিভিন্ন ধরনের গ্রিড নেটওয়ার্ককে যুক্ত করার ক্ষমতা HVDC প্রযুক্তির অন্যতম সুবিধা। দীর্ঘ দুরত্বে বেশি পরিমানে বিদুৎ সঞ্চালন এবং দুটি এসিংক্রোনাস (Asynchronous) গ্রিডকে যুক্ত করার কাজে HVAC এর তুলনায় HVDC অধিক উপযোগী এবং সুবিধাজনক।

এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা ক্রস বর্ডার পাওয়ার সঞ্চালনের ক্ষেত্রে HVDC প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

HVDC ব্যবহারের কারণ:

১. এসিংক্রোনাস (Asynchronous) গ্রিডের মধ্যে অন্তসংযোগ:
যখন দুটি গ্রিডে আলাদা আলাদা ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করা হয় তখন তাদের এসিংক্রোনাস গ্রিড বলে। ক্রস বর্ডার পাওয়ার সঞ্চালনের ক্ষেত্রে HVDC ব্যবহারের অন্যতম কারণ হলো দুটি ভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সির গ্রিডের মধ্যে আন্তসংযোগ তৈরি করা।

কারণ:

  • HVDC প্রযুক্তিতে HVAC এর মত গ্রিডের অন্তসংযোগের জন্য ফ্রিকোয়েন্সি একই হওয়ার প্রয়জন হয় না।
  • ফলে দুটি দেশ বা গ্রিডের ফ্রিকোয়েন্সি আলাদা হলেও তারা একে অপরের সাথে বৈদ্যুতিক পাওয়ার বিনিময় করতে পারে।

উদাহরণ:
জাপানের ৫০ হার্জ এবং ৬০ হার্জ গ্রিড নেটওয়ার্কের মধ্যকার অন্তঃসংযোগ HVDC প্রযুক্তির ব্যবহারের অন্যতম উধাহরন।

২. গ্রিডের স্থিতিশীলতা এবং ফল্ট আইসোলেসন (Grid Stability and Fault Isolation):
HVDC লিঙ্ক গ্রিডের স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করে এবং অন্তসংযুক্ত গ্রিডকে একে অপরের ফল্ট এর প্রভাব থেকে পৃথক (Isolate) রাখে। ফলে আন্তসংযুক্ত গ্রিডের কোনো একটিতে ফল্ট সংগঠিত হলে বাকি গ্রিড সমূহ ফল্ট এর প্রভাব থেকে সুরক্ষিত থাকে।

সুবিধা: HVDC লিঙ্ক একটি প্রতিরক্ষা দেয়াল হিসেবে কাজ করে ফল্ট কে বিস্তৃত হতে বাধা দেয়।
ফল্ট হতে তাৎক্ষণিক পৃথকীকরণ ( Isolation) এবং উদ্ধার (Recovery) এর কারণে ক্রস বর্ডার পাওয়ার সঞ্চালন সুনিশ্চিত হয়।

উদাহরণ:
ভারত থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে উভয় দেশের গ্রিডের ফ্রিকোয়েন্সি ৫০ হার্জ হওয়া সত্ত্বেও গ্রিডের স্ট্যাবিলিটি এবং ফল্ট আইসোলেশনের বিবেচনা করে ব্যাক টু ব্যাক HVDC লিঙ্ক ব্যবহার করা হয়েছে যাতে এক দেশের গ্রিডে ফল্ট সংগঠিত হলে অন্য দেশের গ্রিড ফল্টের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকে।

৩. সঞ্চালন লস হ্রাস:
HVAC এর তুলনায় HVDC প্রযুক্তিতে বৈদ্যুতিক লসের পরিমাণ কম হয়।

কারণ

  • DC তে স্কিন ইফেক্ট এর প্রভাব না থাকায় পরিবাহীর কার্যকরী রোধের পরিমাণ কম থাকে। ফলে I2*R লস কম হয়।
  • DC সিস্টেমে রিয়্যাক্টিভ পাওয়ার না থাকায় লস হ্রাস পায় এবং গ্রাহক প্রান্তে স্থির ভোল্টেজ পাওয়া যায়।

সুবিদা:
লস হ্রাসের মাধ্যমে দীর্ঘ দুরত্বে পাওয়ার ট্রান্সমিশনের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।

৪. ব্যয় হ্রাস:
HVDC এর প্রাথমিক সংস্থাপন খরচ বেশি হলেও দীর্ঘ দুরত্বে বিশাল পরিমাণ পাওয়ার সরবরাহের ক্ষেত্রে HVDC প্রযুক্তি অধিক সাশ্রয়ী এবং মিতব্যয়ী। ওভারহেড ৬০০ কিলোমিটার বা ৫০ কিলোমিটার বা তারচেয়ে দীঘ্র সাবমেরিন ক্যাবলের সঞ্চালন লাইনের ক্ষেত্রে HVAC এর তুলনায় HVDC কম ব্যয়বহুল।

কারণ:

  • HVDC তে সঞ্চালন লস কম হওয়ায় সঞ্চালন ব্যয় কম হয়।
  • উচ্চ ভোল্টেজ এবং দীর্ঘ দুরত্বে পাওয়ার ট্রান্সমিশনের খেরে HVAC এর তুলনায় HVDC এর সুইচ গিয়ার এবং টার্মিনাল ইকুইপমেন্ট এর খরচ তুলনামুলক কম।
  • ভবিষ্যতে সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে HVAC এর তুলনায় HVDC বেশি সাশ্রয়ী।

সুবিদা:
দীর্ঘ মেয়াদে স্বল্প খরচে বিদুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হয়।

৫. পাওয়ার এর প্রবাহে অধিকতর নিয়ন্ত্রণ:
HVDC প্রযুক্তিতে কি পরিমান পাওয়ার প্রবাহিত হবে এবং কেন দিকে প্রবাহিত হবে তা অতি সূক্ষ্মভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় যা ক্রস বর্ডার পাওয়ার ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সুবিদা:

  • কি পরিমান পাওয়ার ট্রান্সফার হবে তা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সিস্টেমকে ওভারলোড হতে রক্ষা করা যায়।
  • ফলে পরিবর্তনশীল লোডের ক্ষেত্রে গ্রিডের স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।

৬. ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ইন্টারফারেন্স এর প্রভাব হ্রাস:
HVAC এর তুলনায় HVDC ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ইন্টারফারেন্স দ্বারা কম প্রভাবিত হয় ফলে এবং আশেপাশের পরিবেশকে কম প্রভাবিত করে।

উপসংহার:

ক্রস বর্ডার পাওয়ার ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে দক্ষতা, নিরপত্তা এবং এসিংক্রোনাস গ্রিডকে যুক্ত করার বিষয় বিবেচনায় HVDC প্রযুক্তি অত্যাবশ্যক। এটা দীর্ঘ দুরত্বে পাওয়ার ট্রান্সমিশনের ক্ষেত্রে লস হ্রাস করে, স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করে এবং ফল্ট কে ছড়িয়ে পড়া হতে প্রতিহত করে যা একে আন্তর্জাতিক বিদুৎ বিনিময়ের ক্ষেত্রে সবচে ভালো বিকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

Leave a Comment