Table of Contents
ভূমিকা:
বিভিন্ন পরিস্থিতে ট্রান্সফরমারের দক্ষতা, লস এবং সক্ষমতা নির্ণয়ে ট্রান্সফরমার টেস্টিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ট্রান্সফরমারে যে টেস্ট গুলি করা হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো:
- ওপেন সার্কিট টেস্ট,
- শর্ট সার্কিট টেস্ট এবং
- ব্যাক টু ব্যাক টেস্ট।
এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা ট্রান্সফরমারের ওপেন সার্কিট, শর্ট সার্কিট এবং ব্যাক টু ব্যাক টেস্ট সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
ওপেন সার্কিট টেস্ট:
ট্রান্সফরমারের কোর লস এবং নো লোড প্যারামিটারসমূহ নির্ণয় করার জন্য নো-লোড টেস্ট করা হয়।
উদ্দেশ্য:
১. ট্রান্সফরমারের কোর লস (এডি কারেন্ট লস এবং হিস্টেরিসিস লস) নির্ণয় করা।
২. নো লোড প্যারামিটার তথা ম্যাগনেটাইজিং রিয়াক্ট্যান্স (Xm) এবং কোর লস রেজিস্ট্যান্স (R0) নির্ণয় করা।
পদ্ধতি:
১. প্রাইমারী উইন্ডিং (হাই ভোল্টেজ) খোলা রাখা হয় অর্থাৎ কোনো লোড যুক্ত থাকে না।।
২. সেকেন্ডারি উইন্ডিং (লো ভোল্টেজ) এ রেটেড ভোল্টেজ সরবরাহ করা হয়।
৩. নো লোড অবস্থায় ট্রান্সফরমারের ব্যবহৃত পাওয়ার (P0), নো লোড ভোল্টেজ (V1) এবং নো লোড কারেন্ট (I0) পরিমাপ করা হয়। পরবর্তীতে এই পরিমাপকৃত তথ্য হতে ম্যাগনেটাইজিং রিয়াক্ট্যান্স (Xm) এবং কোর লস রেজিস্ট্যান্স (Rc) নির্ণয় করা হয়।
ক্যালকুলেশন:
১. কোর লস (P0) = নো-লোড ইনপুট পাওয়ার।
২. নো-লোড পাওয়ার ফ্যাক্টর, Cos\theta=\frac{P_0}{V_1\times I_0}
৩. ম্যাগনেটাইজিং কারেন্ট, Im = I0Sinθ
৪. কোর লস কারেন্ট, Ic = I0Cosθ
৫. কোর লস রেজিস্ট্যান্স, R0 = V1/IC
৬. ম্যাগনেটাইজিং রিয়াক্ট্যান্স, Xm = V1/Im
সুবিধা:
১. পরীক্ষা পদ্ধতি সহজ।
২. লোডিং ছাড়াই ট্রান্সফরমারের কোর লস নির্ণয় করা যায়।
শর্ট সার্কিট টেস্ট:
ট্রান্সফরমারের পরিবর্তনশীল লস এবং সমতুল্য সার্কিটের প্যারামিটারসমূহ নির্ণয়ের জন্য শর্ট সার্কিট টেস্ট করা হয়।
উদ্দেশ্য:
১. ফুল লোড অবস্থায় ট্রান্সফরমারের কপার লস নির্ণয় করা।
২. ট্রান্সফরমারের সমতুল্য রেজিস্ট্যান্স (Req) এবং সমতুল্য রিয়াক্ট্যান্স (Xeq) নির্ণয় করা।
পরীক্ষা পদ্ধতি:
১. ট্রান্সফরমারের সেকেন্ডারি (লো ভোল্টেজ) প্রান্তকে একটি অ্যামিটারের সাহায্যে শর্ট করা হয়।
২. ট্রান্সফরমারের প্রাইমারী প্রান্তে রেটেড ভোল্টেজের ৫-১০% ভোল্টেজ সরবরাহ করা হয় যাতে শর্ট কৃত ট্রান্সফরমারের সেকেন্ডারি প্রান্ত দিয়ে রেটেড কারেন্ট প্রবাহিত হয়।
৩. পরীক্ষা চলাকালে নির্মক্ত রিডিং নেয়া হয়
- প্রাইমারী ভোল্টেজ (V1),
- শর্ট সার্কিট কারেন্ট (Is) এবং
- ইনপুট পাওয়ার বা শর্ট সার্কিট পাওয়ার (Psc)।
ক্যালকুলেশন:
১. কপার লস, Pcu = শর্ট সার্কিট ইনপুট পাওয়ার (শর্ট সার্কিট টেস্টে কোর লসের পরিমান খুবই কম থাকায় তা অগ্রাহ্য করা হয়)
২. সমতুল্য রেজিস্ট্যান্স, Req = Pcu/Is2
৩. সমতুল্য রিয়্যাক্ট্যান্স,
X_{eq}=\sqrt{{(\frac{V_1}{I_s})}^2-R_{eq}^2}
সুবিদা:
১. ফুল লোড প্রয়োগ না করেই ফুল লোডের কপার লস নির্ণয় করা যায়।
২. ট্রান্সফরমারের সমতুল্য সার্কিটের উপাদান সমূহ সহজে নির্ণয় করা যায়।
ব্যাক টু ব্যাক টেস্ট:
ওপেন সার্কিট টেস্ট এবং শর্ট সার্কিট টেস্ট হতে ট্রান্সফরমারের কোর লস, কপার লস পরিমাপ করা গেলেও ফুল লোডে ট্রান্সফরমারের তাপীয় দক্ষতা কেমন হয় তো জানা যায় না। ব্যাক টু ব্যাক টেস্ট এর মাধ্যমে একটু ট্রান্সফরমার ফুল লোডে কেমন আচরণ করে এবং লোড বৃদ্ধির সাথে সাথে তাপমাত্রার পরিবর্তন বা বৃদ্ধি কেমন হয় তা জন্য যায়। এই টেস্টকে সাম্পনার টেস্টও (Sumpner’s Test) বলা হয়ে থাকে।
উদ্দেশ্য:
১. কোর এবং কপার লস উভয় পরিমাপ করা।
২. বাস্তব ব্যবহারিক ক্ষেত্রে ট্রান্সফরমারের দক্ষতা নির্ণয় এবং তাপমাত্রা এর পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করা।
পরীক্ষা পদ্ধতি:
১. পরীক্ষার জন্য সম্পূর্ণ একই ধরনের দুটি ট্রান্সফরমার ব্যবহার করা হয়।
২. ট্রান্সফরমার দুটির প্রাইমারী উইন্ডিংকে মেইন সাপ্লাইয়ের সাথে প্যারালাল এ সংযোগ করা হয়।
৩. ট্রান্সফরমার দুটির সেকেন্ডারি উইন্ডিংকে একে অপরের সাথে সিরিজে বিপরীতমুখী ভাবে লুপ আকারে সংযোগ করা হয়।
৪. ট্রান্সফরমারের সেকেন্ডারি প্রান্ত অন্য আরেকটি উৎস হতে অক্সিলারি সাপ্লাই দেয়া হয়।
৫. ওয়াট মিটার W1 হতে দুই ট্রান্সফরমারের মোট কোর লস পাওয়া যায় এবং ওয়াট মিটার W2 হতে দুই ট্রান্সফরমারের মোট কপার লস পাওয়া যায়।
সুতারং, প্রতিটি ট্রান্সফরমারের মোট লস,
W = (W1 + W2)/2
তাপমাত্রা বৃদ্ধি নির্ণয়:
পরিক্ষা চলাকালে ট্রান্সফরমারের তেলের তাপমাত্রা নির্দিষ্ট সময় পর পর পরিমাপ করা হয়। উভয় ট্রান্সফরমারকে ব্যাক টু ব্যাক অবস্থায় দির্ঘ সময় পরিচালনারর ফলে ট্রান্সফরমারের অয়েলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং ফুল লোডে ট্রান্সফরমারের তাপমাত্রা কেমন হবে তা সম্পরকে ধারনা পাওয়া যায়।
সুবিদা:
১. কোনো ধরনের লোড সংযোগ ছাড়াই ফুল লোডে ট্রান্সফরমারের আচরন সম্পর্কে জানা যায়।
২. সুক্ষভাবে দক্ষতা এবং তাপমত্রার প্রভাব নির্ণয় করা যায়।
উপসংহার:
ট্রান্সফরমারের দক্ষতা, নির্ভরযোগ্যতা এবং সক্ষমতা নির্ণয়ে ট্রান্সফরমার টেস্টিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। ওপেন সার্কিট টেস্ট এবং শোর্ট সার্কিট টেস্ট হতে ট্রান্সফরমারের লস সমূহ এবং সমতুল্য সারকিটের প্যারামিটার সমূহ জানা যায়। অন্যদিকে ব্যাক টু ব্যাক টেস্ট হবে ফুল লোডে ট্রান্সফরমার কেমন আচরন করবে তা জানা যায়।