ভূমিকা:
ট্রান্সফর্মারের কোর এবং উইন্ডিং এর গঠনের উপর ভিত্তি করে ট্রান্সফর্মারকে কোর টাইপ এবং শেল টাইপ ট্রান্সফর্মারে বিভক্ত করা হয়। ব্যবহারিক ক্ষেত্রে উভয় ট্রান্সফর্মারেরই কিছু বৈশিষ্ট্য এবং সুবিধা-অসুবিধা রয়েছে। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা কোর টাইপ এবং শেল টাইপ ট্রান্সফর্মারের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করবো।

কোর টাইপ এবং শেল টাইপ ট্রান্সফর্মারের পার্থক্য:
১. কোরের গঠন:
কোর টাইপ: উইন্ডিং সমূহ কোরকে ঘিরে রাখে। কোর আয়তাকার বা সিলিনড্রিক্যাল আকারের হয়ে থাকে। কোরের দুইটি উলম্ব বহু থাকে যা দুই পার্শ্বের দুটি আনুভূমিক বাহুর (ইয়োক) মাধ্যমে যুক্ত থাকে। উভয় উলম্ব বাহুর উপর উইন্ডিং প্যাঁচানো হয়।
শেল টাইপ: কোর সমূহ উইন্ডিংকে ঘিরে রাখে। কোরে তিনটি উলম্ব বাহু রয়েছে। মাঝের বাহুতে উইন্ডিং প্যাঁচানো হয় এবং বাইরের দুই বাহু চুম্বকীয় ফ্লাক্স প্রবাহের পথ হিসেবে কাজ করে।

২. চুম্বকীয় ফ্লাক্স প্রবাহের পথ:
কোর টাইপ: চুম্বকীয় ফ্লাক্স কোরের মাধ্যমে প্রবাহিত হয় এবং ইয়োক এর মাধ্যমে ফিরে আসে। ফলে চুম্বকীয় ফ্লাক্স প্রবাহের জন্য শুধুমাত্র একটি চুম্বকীয় পথ পাওয়া যায়।
শেল টাইপ: চুম্বকীয় ফ্লাক্স মাঝের বাহু দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দুই পার্শ্বের দুই বাহু দিয়ে ফিরে আসে। ফলে চুম্বকীয় ফ্লাক্স প্রবাহের জন্য দুটি চুম্বকীয় পথ পাওয়া যায়।

৩. উইন্ডিং এর গঠন:
কোর টাইপ: উইন্ডিং সিলিনড্রিকাল আকৃতির হয়ে থাকে এবং কোরের এক বাহুতে প্রাইমারী এবং অন্য বাহুতে সেকেন্ডারি উইন্ডিং প্যাঁচানো হয়।
শেল টাইপ: কোরের একই বাহুতে একটি উইন্ডিং এর উপর আরেকটি উইন্ডিং প্যাঁচানো হয়। ফলে ভালো চুম্বকীয় ফ্লাক্স এর কাপলিং ভালো হয় এবং লিকেজ ফ্লাক্স হ্রাস পায়।

৪. কোর-কয়েলের সম্পর্ক:
কোর টাইপ: উইন্ডিং সমূহ আলাদা আলাদা বাহুতে থাকায় সহজেই উইন্ডিং এর পর্যবেক্ষণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা গেলেও উইন্ডিং সমূহ উন্মুক্ত থাকায় তা কম নিরাপদ।
শেল টাইপ: উইন্ডিং সমূহ কোরের মধ্যে আবদ্ধ থাকায় অধিকতর নিরাপত্তা পাওয়ায় গেলেও পর্যবেক্ষণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ জটিল হয়।

৫. যান্ত্রিক গঠন:
কোর টাইপ: বিশেষ করে শর্ট সার্কিট অবস্থায় যান্ত্রিক শক্তি কম থাকে।
শেল টাইপ: অধিক শক্তিশালী এবং শর্ট সার্কিট অবস্থায় সহজে ক্ষতিগ্রস্থ হয় না।

৬. শীতলীকরণ দক্ষতা:
কোর টাইপ: উইন্ডিং সমূহ কোরের বাইরের দিকে থাকায় সহজেই শীতল হয়। ফলে ভালো শীতলীকরণ দক্ষতা পাওয়া যায়।
শেল টাইপ: উইন্ডিং সমূহ কোরের মধ্যে আঁটসাঁট হয়ে থাকায় শীতলীকরণ জটিল হয়। ফলে শীতলীকরণ দক্ষতা কম পাওয়া যায়।

৭. উৎপাদন এবং ব্যয়:
কোর টাইপ: গঠন সহজ হওয়ার উৎপাদন সহজ হয় এবং খরচ কম।
শেল টাইপ: গঠন অপেক্ষাকৃত জটিল এবং বেশি ব্যয়বহুল।

৮. ব্যবহার:
কোর টাইপ: হাই ভোল্টেজ এবং হাই পাওয়ার ইকুইপমেন্ট এর জন্য ব্যবহার উপযোগী। যেমন: পাওয়ার ট্রান্সফর্মার।
শেল টাইপ: লো ভোল্টেজ এবং লো পাওয়ার ইকুইপমেন্ট এর জন্য ব্যবহার উপযোগী। যেমন: বিতরণ ট্রান্সফর্মার।

একনজরে কোর টাইপ এবং শেল টাইপ ট্রান্সফর্মারের পার্থক্যের তালিকা:

পার্থক্যর বিষয়কোর টাইপ ট্রান্সফর্মারশেল টাইপ ট্রান্সফর্মার
কোরের গঠনকোর উইন্ডিং এর ভিতরে থাকে।উইন্ডিং কোরের ভিতরে থাকে।
চুম্বকীয় পথএকক চুম্বকিয় পথ থাকে।দুটি চুম্বকিয় পথ থাকে।
উইন্ডিং এর গঠনকোরের দুই বাহুর চারপাশে সিলিন্ড্রিক্যাল আকারে থাকে।কোরের মাঝের বাহুতে এক উইন্ডিং এর উপর অন্য উইন্ডিং স্যান্ডউইচ আকারে প্যাঁচানো থাকে।
শীতলীকরণ দক্ষতাসহজে শিতল হয়।সহজে শিতল হয় না।
যান্ত্রিক শক্তিকম শক্তিশালীবেশি শক্তিশালী
ব্যবহারউচ্চ ভোল্টেজ এবং উচ্চ পাওয়ার সিস্টেম।কম ভোল্টেজ এবং কম পাওয়ার সিস্টেম।
নির্মান ব্যয়কম।বেশি।

উপসংহার:
ব্যবহারিক ক্ষেত্রে কোর টাইপ বা শেল টাইপ ট্রান্সফর্মার পছন্দের ক্ষেত্রে আলদা আলাদা কিছু সুভিদা বা বৈশিষ্ট্যকে গুরুত্ব দেয়া হয়। ব্যবহারের ধরন অনুযায়ী সঠিক ট্রান্সফর্মার বাছাই করার মাধ্যমে দক্ষ, নির্ভরযোগ্য এবং নিরাপদ বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হয়।

Leave a Comment