ভূমিকা:

বৈদ্যুতিক সিস্টেমের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন অংশ হচ্ছে ট্রান্সফরমার যা বৈদ্যুতিক নেটওয়ার্কের মধ্যে বিভিন্ন ভোল্টেজে বিদুৎ সরবরাহের কাজে ব্যবহৃত হয়। একটি ট্রান্সফর্মার বিভিন্ন অংশের সমন্বয়ে গঠিত হয়ে থাকে যার প্রতিটি অংশের আলাদা আলাদা কাজ রয়েছে। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মারের বিভিন্ন অংশ সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

একটি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মারের বিভিন্ন অংশগুলো হলো:
১. ট্রান্সফর্মার কোর:

গঠন: লেমিনেটেড সিলিকন স্টিল দিয়ে তৈরি করা হয় যাতে এডি কারেন্ট লস এবং হিস্টেরিসিস লস হয়।
উদ্দেশ্য: ট্রান্সফর্মার এর উইন্ডিং দ্বারা উৎপন্ন ফ্লাক্স প্রবাহের চুম্বকীয় পথ প্রদান করে। কোরের মাধ্যমে ফ্লাক্স ট্রান্সফর্মারের এক উইন্ডিং হতে অন্য উইন্ডিং এ আবিষ্ট হয়।

২. ট্রান্সফর্মার উইন্ডিং:

গঠন: ট্রান্সফর্মারের কোরের উপর যে তামা বা এলুমিনিয়ামের তারের কুণ্ডলী ব্যবহার করা হয় তাকে উইন্ডিং বলে। ট্রান্সফর্মারে দুই ধরনের উইন্ডিং থাকে, ১. প্রাইমারী উইন্ডিং এবং ২. সেকেন্ডারি উইন্ডিং। উইন্ডিং সাধারনত সিলিনড্রিক্যাল বা আয়তাকার আকারে তৈরি করা হয়।
উদ্দেশ্য: ভোল্টেজকে এক লেভেল থেকে অন্য লেভেলে পরিবর্তন করার জন্য প্রয়োজনীয় ফ্লাক্স তৈরিতে ট্রান্সফর্মারের উইন্ডিং ব্যবহৃত হয়।

৩. ট্রান্সফর্মার ট্যাংক:

গঠন: শক্তিশালী ইস্পাত দিয়ে ট্রান্সফর্মার ট্যাংক তৈরি করা হয় যাতে ট্রান্সফরমার বাহ্যিক আঘাত, বৈরী আবহাওয়া ইত্যাদিতেও টিকে থাকতে পারে।
উদ্দেশ্য: ট্রান্সফর্মার কোর এবং উইন্ডিংসমূহকে ঘিরে রেখে তাদের যান্ত্রিক সুরক্ষা প্রদান করে। বাহ্যিক আঘাত হতে ট্রান্সফর্মারের অভ্যন্তরের বিভিন্ন অংশকে রক্ষা করে এবং ট্রান্সফর্মার অয়েলের আধার হিসেবে কাজ করে।

৪. কনজারভেটর ট্যাংক:

গঠন: এটিও ট্রান্সফর্মার ট্যাংক এর ন্যায় শক্তিশালী ইস্পাত দিয়ে তৈরি করা হয়।
উদ্দেশ্য: তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে ট্রান্সফর্মারের মেইন ট্যাংকের অয়েল এর আয়তন বৃদ্ধি পেলে অয়েল মেইন ট্যাংক হতে কনজারভেটর ট্যাংকে প্রবেশ করে।

৫. ট্রান্সফর্মার অয়েল:

গঠন: উচ্চ ডাই-ইলেক্ট্রিক শক্তি সম্পন্ন খনিজ বা সিনথেটিক অয়েলকে ট্রান্সফর্মার অয়েল হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
উদ্যেশ্য: ট্রান্সফর্মার অয়েল ট্রান্সফর্মারের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অংশের মধ্যে বৈদ্যুতিক ইন্সুলেশন প্রদান করে এবং ট্রান্সফর্মার শীতলীকরণ করে।

৬. রেডিয়েটর:

গঠন: ট্রান্সফর্মারের মেইন ট্যাংকের সাথে ফাঁপা ডানার মতো ইস্পাতের তৈরি অংশই রেডিয়েটর।

উদ্দেশ্য: ট্রান্সফর্মার অয়েল হতে তাপ অপসারণের জন্য অধিক ক্ষেত্রফল প্রদান করে ট্রান্সফর্মার শীতল হতে সহায়তা করে। ট্রান্সফর্মারের মেইন ট্যাংকের গরম তেল রেডিয়েটর এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে শীতল হয় এবং পুনরায় মেইন ট্যাংকে প্রবেশ করে ট্রান্সফর্মার শীতল রাখে।

৭. বুশিং:

গঠন: উচ্চ বৈদ্যুতিক ইন্সুলেশন যুক্ত শক্তিশালী চিনামটি দিয়ে ট্রান্সফর্মারের বুশিং তৈরি করা হয়।
উদ্দেশ্য: ট্রান্সফর্মারের উইন্ডিং হতে টার্মিনাল বের করা এবং টার্মিনাল সমূহকে মেইন ট্যাংক হতে বৈদ্যুতিক ইন্সুলেশন প্রদান করা।

৮. ব্রেদার:

ব্রেদার এর সাহায্যে ট্রান্সফর্মার অয়েল এর আয়তন পরিবর্তনের সাথে সাথে বাইরে হতে ট্রান্সফর্মারে বাতাস প্রবেশ করে বা বাইরে বের হয়। বাতাস প্রবেশের সময় বাতাসের জলীয়বাষ্প শোষণের জন্য ব্রেদারে সিলিকা জেল ব্যবহার করা হয়।

৯. বুখলজ রিলে:

ট্রান্সফর্মারের মেইন ট্যাংক এবং কনজারভেটর ট্যাংকের মাঝে বুখলজ রিলে স্থাপন করা হয়। ফল্ট এর কারণে ট্রান্সফর্মারের অভ্যন্তরীণ অয়েল এর অস্বাভাবিক প্রবাহ এবং গ্যাসের উৎপত্তি সনাক্ত করতে বুখলজ রিলে ব্যবহার করা হয়। ট্রান্সফর্মার সুরক্ষায় এটি অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন একটু উপাদান।

১০. এক্সপ্লোশন ভেন্ট:

ফল্ট এর সময় ট্রান্সফর্মারের ভিতরের অতিরিক্ত চাপ বের করে দিয়ে ট্রান্সফর্মারকে রক্ষা করার জন্য এক্সপ্লোশন ভেণ্ট ব্যবহার করা হয়।

১১. কুলিং ফ্যান:

বৃহৎ আকারের ট্রান্সফর্মারকে শীতলীকরণ এর জন্য কুলিং ফ্যান ব্যবহার করা হয়।

১২. পরিমাপক যন্ত্র:

ট্রান্সফর্মারের তেলের পরিমাণ, অভ্যন্তরীণ চাপ এবং তাপমাত্রা পরিমাপের জন্য বিভিন্ন ধরনের পরিমাপক যন্ত্র ব্যবহার করা হয়।

১৩. ট্যাপ চেঞ্জার:

ট্রান্সফর্মারের সেকেন্ডারি প্রান্তের ভোল্টেজকে সমন্বয় করার জন্য ট্যাপ চেঞ্জার ব্যবহার করা হয়।

উপসংহার:

ট্রান্সফর্মারের দক্ষ পরিচালনার, রক্ষণাবেক্ষণ এবং মেরামতের ক্ষেত্রে এর প্রতিটি অংশ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন। ট্রান্সফর্মারের প্রতিটি অংশই ট্রান্সফর্মারের দক্ষতা, নির্ভরযোগ্যতা এবং নিরাপত্তায় মুখ্য ভূমিকা পালন করে।

Leave a Comment