Table of Contents
ভূমিকা(Introduction):
ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার সিস্টেমে স্কিন ইফেক্ট একটু গুরুত্বপুর্ন ঘটনা যা পরিবাহীর ভিতর দিয়ে প্রবাহিত কারেন্টের প্রবাহকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। বিশেষকরে উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সিতে এই প্রভাব খুবই তীব্র যা পাওয়ার সিস্টেমের দক্ষতা, ট্রান্সমিশন লাইন ডিজাইন এবং এনার্জি লসে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই একজন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে স্কিন ইফেক্ট সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা অত্যন্ত জরুরি। এই পোস্টে আমরা স্কিন ইফেক্ট কি, স্কিন ইফেক্ট কেনো হয় এবং ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার সিস্টেমে স্কিন ইফেক্ট এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করবো।
স্কিন ইফেক্ট(Skin Effect):
কোনো পরিবাহীর মধ্য দিয়ে অল্টারনেটিং কারেন্ট(AC) প্রবাহিত হওয়ার সময় কারেন্ট ওই পরিবাহীর সম্পূর্ণ ক্ষেত্রফল জুড়ে সুষমভাবে প্রবাহিত না হয়ে শুধুমাত্র পরিবাহীর বাহিরের বা উপরের পৃষ্ঠ দিয়ে প্রবাহিত প্রবণতাকে স্কিন ইফেক্ট বলে। এর ফলে পরিবাহীর মধ্য দিয়ে কারেন্ট প্রবাহের জন্য কার্যকরী ক্ষেত্রফল হ্রাস পায় এবং ফ্রিকোয়েন্সি বৃদ্ধির সাথে সাথে এই সমস্যা আরো তীব্র হয়।সহজ ভাষায়, যখন ফ্রিকোয়েন্সি বৃদ্ধি পায় তখন পরিবাহীর কেন্দ্রের তুলনায় বাহিরের স্তরে কারেন্টের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়। ফলে পরিবাহীর রোধ বৃদ্ধি পায়। নিম্ন ফ্রিকোয়েন্সিতে এই প্রভাব অতি সামান্য হলেও উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সিতে এর প্রভাব তীব্র যা পাওয়ার সিস্টেমের দক্ষতা হ্রাস পায়, পাওয়ার অপচয় হয় এবং খরচ বৃদ্ধি পায়।
স্কিন ইফেক্ট এর কারণ(Reason of Skin Effect):
পরিবাহীর ভিতরের ইন্ডাক্টিভ রিয়াক্টেন্সের জন্য স্কিন ইফেক্ট হয়। কোন পরিবাহীর ভিতর দিয়ে যখন পরিবর্তনশীল কারেন্ট(AC) প্রবাহিত হয় তখন ঐ পরিবাহীর চারপাশে একটি চুম্বক ক্ষেত্র তৈরি হয়। এই চুম্বক ক্ষেত্র নিজেই পরিবাহীর মধ্য দিয়ে একটি কারেন্ট প্রবাহিত করে যা মূল কারেন্টের বিপরীত হওয়ায় মূল কারেন্টের প্রবাহকেই বাধা প্রদান করে। ফলস্বরূপ, মূল কারেন্ট পরিবাহীর কেন্দ্র হতে সরে এসে বাহিরের পৃষ্ঠ দিয়ে চলাচলের চেষ্টা করে। যারফলে পরিবাহীর বাহিরের পৃষ্ঠে কারেন্টের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায় এবং পরিবাহীর কার্যকরী রোধ বৃদ্ধি পায়।
পরিবাহীর বাহিরের পৃষ্ঠ হতে কেন্দ্রের দিকে যে দুরত্বে কারেন্ট ঘনত্ব পরিবাহী পৃষ্ঠের কারেন্ট ঘনত্বের ৩৭% এ নেমে আসে তাকে স্কিন ডেপ্থ(skin depth) বা পেনিট্রেশন ডেপ্থ(penetration depth) বলে। একে গ্রীক অক্ষর δ(ডেল্টা) দ্বারা প্রকাশ করা হয় যা উপরের চিত্রে দেখানো হয়েছে। গাণিতিকভাবে ফ্রিকোয়েন্সি বাড়ার সাথে সাথে স্কিন ডেপ্থ কমে যায় এবং স্কিন ডেপ্থ কিছু বিষয়ের উপর নির্ভর করে যেমন:
১. পরিবর্তনশীল কারেন্টের ফ্রিকোয়েন্সি (Frequency),
২. পরিবাহীর পরিবাহিতা (Conductivity),
৩. পরিবাহীর ভেদ্যতা (Permeability) এবং
৪. পরিবাহীর গঠন।
পাওয়ার সিস্টেমে স্কিন ইফেক্ট এর প্রভাব(Affect of skin effect in Power System):
১. রেজিস্ট্যান্স এবং পাওয়ার লস বৃদ্ধি: যেহেতু স্কিন ইফেক্টের কারণে কারেন্ট পরিবাহী পৃষ্ঠে কারেন্ট ঘনীভূত হয়ে পরিবাহীর সম্পূর্ণ ক্ষেত্রফল দিয়ে প্রবাহিত না হয়ে পরিবাহী পৃষ্ঠ দিয়ে প্রবাহিত হয় তাই পরিবাহীর কার্যকরী দৈর্ঘ্য হ্রাস পেয়ে পরিবাহীর রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধি পায়। ফলে I²*R লসও বৃদ্ধি পায়। বিশেষত উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সিতে এই লসের পরিমাণ অনেক বেশি হয়। ফলে দক্ষতা কমে যায়।
২. পরিবাহীর দক্ষতা হ্রাস: যেহেতু স্কিন ইফেক্ট এর কারণে পরিবাহীর কার্যকরী ক্ষেত্রফল কমে যায় ফলে একই পরিমাণ কারেন্টের জন্য উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সিতে বড় ক্ষেত্রফল বিশিষ্ট পরিবাহী ব্যবহার করতে হয়। এতে করে পরিবাহীর ওজন বৃদ্ধি পায়, বড় আকারের পোল এবং অন্যান্য উপাদান ব্যবহার করতে হয়। সর্বোপরি বিদুৎ পরিবহনের খরচ বৃদ্ধি পায়।
৩. পরিবাহীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি: যেহেতু স্কিন ইফেক্ট এর কারণে পরিবাহীর রোধ এবং পাওয়ার লস বৃদ্ধি পায়, সেহেতু পাওয়ার লসের কারণে পরিবাহীর তাপমাত্রায়ও বৃদ্ধি পায়। অতিরিক্ত তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে ট্রান্সফর্মারের উইন্ডিংসহ বিভিন্ন উপাদান ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং কার্যকাল হ্রাস পায়।
৪. সঞ্চালন লাইনের উপর প্রভাব: দীর্ঘ দুরত্বে পাওয়ার পরিবহনের সময় পাওয়ার লস হ্রাসের লক্ষেই সঞ্চালন লাইন ডিজাইন করা হয়। হাই ভোল্টেজ সঞ্চালন লাইনের ক্ষেত্রে(৫০-৬০ হার্টজ) স্কিন ইফেক্ট জনিত লস খুব সামান্য হলেও সঞ্চালন লাইন ডিজাইনের ক্ষেত্রে তা গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হয়।
স্কিন ইফেক্ট কমানোর উপায়(Way to reduce skin effect):
বিশেষত উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সিতে ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্কিন ইফেক্ট কমানোর জন্য বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করা হয়, যেমন:
১. ফাঁপা পরিবাহী ব্যবহার: যেহেতু স্কিন ইফেক্ট এর কারণে কারেন্ট পরিবাহী পৃষ্ঠ দিয়ে প্রবাহিত হয় তাই ফাঁপা পরিবাহী ব্যবহার করা হলে পরিবাহীর ওজন হ্রাস পায়, ফলে সামগ্রিক খরচ হ্রাস পায় এবং দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
২. বান্ডলড(Bundled) বা একাধিক খেইযুক্ত(Stranded) পরিবাহী ব্যবহার: একক পরিবাহীর তুলনায় কয়েকটি পরিবাহিকে একত্রে বান্ডিল আকারে ব্যবহার করলে পরিবাহীর সমগ্র ক্ষেত্রফল জুড়ে সুষম কারেন্ট প্রবাহিত হয় এবং স্কিন ইফেক্ট হ্রাস পায়।
৩. পরিবাহীর আকার বৃদ্ধি: অপেক্ষাকৃত বড় ক্ষেত্রফল যুক্ত পরিবাহীর কার্যকরী ক্ষেত্রফল বেশি হওয়ায় স্কিন ইফেক্ট কম হয় এবং স্কিন ইফেক্ট এর কারনে সৃষ্ট লস হ্রাস পায়। তবে পরিবাহীর আকার বৃদ্ধির কারণে পরিবাহীর ওজন ও খরচ উভয়ই বৃদ্ধি পায়।
৪. লিটজ্ তারের(Litz Wire) ব্যবহার: কয়েকটি পরিবাহীর খেইয়ে(Strand) আলাদা আলাদা ভাবে ইনস্যুলেশন পেঁচিয়ে সবগুলি খেইকে একসাথে বুননের মাধ্যমে লিটজ্ তার তৈরি করা হয়। এই তার কয়েক কিলো হার্জ থেকে এক মেগাহার্জ পর্যন্ত ফ্রিকোয়েন্সির স্কিন ইফেক্ট কমাতে পারে।
৫. নিম্ন ভেদ্যতা(Permeability) এবং পরিবাহিতা যুক্ত পরিবাহির ব্যবহার: নিন্ম ভেদ্যতা যুক্ত ক্যাবলে স্কিন এফেক্ট কম হয় এবং ক্যাবলের পরিবাহিতা বেশি হলে লস কম হয়।
উপসংহার(Conclusion):
বৈদ্যুতিক পাওয়ার সিস্টেমে স্কিন ইফেক্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা, বিশেষ করে উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সিতে অ্যাপ্লিকেশনগুলিতে এর প্রভাব তীব্র। তাই স্কিন ইফেক্ট সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা থাকলে একজন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এর পক্ষে সঠিক ম্যাটেরিয়ালের ক্যাবল নির্বাচন করা, ক্যাবলের আকার নির্ধারণ করাসহ ইলেকট্রিক্যাল সিস্টেম ডিজাইনের অন্যান সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হবে এবং কম খরচে দক্ষ ইলেকট্রিক্যাল নেটওয়ার্ক তৈরিতে সক্ষম হবে।
So much effective content. Thanks for sharing this content. ❤️
You’re most welcome. Keep sharing.